পৃথিবী বিশ্বাসীর জন্যে পরীক্ষাগার আর অবিশ্বাসীরা একেই মনে করে স্বর্গ।
—আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী
যদি তুমি ভালো কাজ করে আনন্দ পাও এবং খারাপ কাজ করে ফেললে অনুতপ্ত হও, তাহলেই তুমি প্রকৃত বিশ্বাসী।
—আবু উমামা (রা); আহমদ, মেশকাত
নিজের জন্যে যা পছন্দ করো, অন্যের জন্যেও তা-ই পছন্দ করবে। তাহলেই তুমি প্রকৃত বিশ্বাসী হতে পারবে।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); বোখারী, মুসলিম
প্রথম সারির উত্তম মানুষ হচ্ছে সেই বিশ্বাসী, যে তার জানমাল দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে। দ্বিতীয় সারির উত্তম মানুষ হচ্ছে, যে আল্লাহ-সচেতন এবং মানুষের কোনোরকম ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকে।
—আবু সাঈদ খুদরী (রা); বোখারী, মুসলিম
জাহেলি যুগে যারা ভালো মানুষ ছিল, ইসলাম গ্রহণের পর তারা ইসলামেও ভালো মানুষ হিসেবে পরিগণিত হবে যদি তারা ধর্মের জ্ঞান ও গুণে গুণান্বিত হয়।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
নবীজী (স) জিজ্ঞেস করলেন : ওমর, আমাকে তুমি কতটা ভালবাসো? আমার সবকিছুর (মা-বাবা, ছেলেমেয়ের) চেয়ে আমি আপনাকে বেশি ভালবাসি, তবে নিজেকে ছাড়া, বললেন ওমর (রা)। তোমার নিজের চেয়েও যদি আমাকে বেশি ভালো না বাসো তবে তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হবে না, বললেন নবীজী (স)। তখন ওমর (রা) বললেন, আল্লাহর শপথ! এখন এই মুহূর্ত থেকে আমার নিজের চেয়েও আপনি আমার বেশি প্রিয়। নবীজী (স) তখন বললেন, ‘হে ওমর, এখন তুমি যথার্থ বিশ্বাসী’।
—আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা); বোখারী
আল্লাহ ও তাঁর রসুল তোমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় হলেই তুমি সত্যিকার বিশ্বাসের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); বোখারী
যেদিন আমি তোমার কাছে তোমার বাবা-মা সন্তানসন্ততি এমনকি তোমার নিজের চেয়ে বেশি প্রিয় হবো, সেদিনই তুমি যথার্থ বিশ্বাসী হবে।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী
ঈমানের ৭০টি প্রকাশ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই’ এই সত্যের স্বীকারোক্তি। আর সহজ প্রকাশ হচ্ছে লোক চলাচল পথ থেকে ক্ষতিকর বস্তুর অপসারণ।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
সহজ সাধারণ অনাড়ম্বর জীবনযাপন সত্যিকার বিশ্বাসের প্রকাশ।
—আবু উমামা (রা); আবু দাউদ, মুসলিম
অন্যায় ও পাপ দেখলে তোমার অন্তরে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘৃণা সৃষ্টি না হয় এবং অবস্থার পরিবর্তন কামনা না করো তাহলে বুঝতে হবে তোমার অন্তরে একবিন্দু ঈমানও অবশিষ্ট নেই।
—আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); মুসলিম
৩৯১.
কোথাও কোনো অন্যায় হতে দেখলে তার প্রতিকার করবে। প্রতিকার করতে না পারলে অন্যায়ের ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলবে। যদি তা-ও না পারো, তবে অন্তর থেকে অন্যায়কে ঘৃণা করবে। এটাই ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।
—আবু সাঈদ খুদরী (রা); মুসলিম
তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ হচ্ছে : ১. যাকে দেখলে আল্লাহর কথা মনে পড়ে। ২. যার কথা শুনলে বিশ্বাস জোরদার হয়। ৩. যার কাজ পরকালের জন্যে কাজ করার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।
—আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা); হাকেম, আশকালানী
সত্যিকার বিশ্বাসের স্বাদ পাওয়ার জন্যে তোমার তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন। ১. আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে তুমি তোমার জীবনের সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালবাসবে। ২. যা-ই করো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই করবে। ৩. সত্য অস্বীকারের অন্ধকারে (কুফরীর পথে) ফিরে যাওয়াকে তুমি জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই খারাপ মনে করবে।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); বোখারী, মুসলিম
সততা বিনয় নম্রতা শালীনতা ও লজ্জাশীলতা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
—আবু হুরায়রা (রা), আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা); বোখারী, মুসলিম
একজন বিশ্বাসীর তিনটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় : ১. রাগে ফেটে পড়লেও কখনো অন্যায়ের আশ্রয় নেয় না। ২. আনন্দে ভেসে গেলেও সত্যের সীমালঙ্ঘন করে না। ৩. ক্ষমতা-কর্তৃত্ব পেলেও অন্যের অধিকারকে অস্বীকার করে না।
—তাবারানী, মাজমাউস জাওয়াজিদ
সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন বিশ্বাসহীন কপট ব্যক্তির চেয়ে পার্থিব সহায়সম্বলহীন একজন বিশ্বাসী মানুষ উত্তম।
—সহল ইবনে সাদ (রা); বোখারী, মুসলিম
বিপদে পড়লে দুর্ভাগ্যের জন্যে যে বিলাপ করে, গালে চপেটাঘাত করে, বুকের কাপড় ছিঁড়ে মাতম করে—সে আসলে জাহেলি যুগের রীতি অনুসরণ করে। সে বিশ্বাসীদের দলভুক্ত নয়।
—আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); বোখারী, মুসলিম
একজন সত্যিকার বিশ্বাসী কখনো প্রতারণা ও মিথ্যাচারে লিপ্ত হতে পারে না।
—আহমদ, বায়হাকি
সত্যিকার বিশ্বাসী কখনো লোভ-লালসার শিকার হতে পারে না, পারে না কৃপণ হতে।
—আবু হুরায়রা (রা); নাসাঈ
একজন বিশ্বাসী কখনো কৃপণ ও দুর্ব্যবহারকারী হতে পারে না।
—আবু সাঈদ খুদরী (রা); মুফরাদ, তিরমিজী
শোষক-নিপীড়কের সাথে যে জেনেশুনে চক্রান্তে লিপ্ত হয় বা নেপথ্যে সমর্থন দেয়, সে বিশ্বাসের সীমানার বাইরে চলে যায়।
—আওস ইবনে শোরাহবীল (রা); মেশকাত, বায়হাকি
প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে যে পেট পুরে খায়, সে বিশ্বাসী নয়।
—আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); মেশকাত
প্রয়োজন ছাড়া অন্যের বিষয়ে নাক গলাবে না। এটাই প্রকৃত বিশ্বাসীর পরিচয়।
—আবু হুরায়রা (রা); আবু দাউদ
যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে বিশ্বাসীদের অর্ন্তভুক্ত নয়।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
যে বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে, সে আমাদের উম্মাহর কেউ নয়।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম, তিরমিজী
একজন বিশ্বাসী সবসময় হেফাজত ও নিরাপত্তার মধ্যে অবস্থান করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কাউকে খুন করে।
—আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা); বোখারী
লুটেরা বা চাঁদাবাজ বা ছিনতাইকারী বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
—ইমরান ইবনে হোসেইন (রা); নাসাঈ, ইবনে মাজাহ
হে আল্লাহর রসুল! আমাদের অন্তরে এমন সব প্রশ্ন, এমন সব কথা ঘুরপাক খেতে থাকে যা মুখে প্রকাশ করা কখনোই সম্ভব নয়। এমনকি কেউ দুনিয়ার সব সম্পদ দিতে চাইলেও তা প্রকাশ করতে পারব না। নবীজী (স) জিজ্ঞেস করলেন, সত্যিই কি তোমাদের অন্তরে এ ধরনের কথা আসে? তারা বললেন, জ্বি হাঁ। তিনি বললেন, এটাই সত্যিকার বিশ্বাসের বৈশিষ্ট্য। আসলে বিশ্বাসীদের অন্তরেই শয়তান কুমন্ত্রণা দেয় বেশি। কুমন্ত্রণার চাপে তারা বিরক্ত। বিশ্বাসীদের বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তরণের বৈশিষ্ট্যই এটা। অতএব চিন্তার কিছু নেই। অন্তরে কুমন্ত্রণা এলে বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে (আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রাজিম) আর কাজে মন দেবে। অথবা অন্তরে তেমন কোনো কুমন্ত্রণা অনুভব করলে তিন বার বলবে ‘আল্লাহ মহান!’—আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা), আবু হুরায়রা (রা), আয়েশা (রা); মুফরাদ (বোখারী)
একজন বিশ্বাসী অন্য বিশ্বাসীর জন্যে একই ঘরের দেয়ালস্বরূপ। এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে ও দৃঢ়বদ্ধ রাখে।
—আবু মুসা আশয়ারী (রা); বোখারী, মুসলিম
বিশ্বাসী ও বিশ্বাসের উপমা হচ্ছে খুঁটির সাথে বাঁধা ঘোড়া। ঘোড়া যে-দিকেই যাক, শেষ পর্যন্ত খুঁটির দিকেই ফিরে আসে। একইভাবে বিশ্বাসী ব্যক্তিও ভুল করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বিশ্বাসের দিকেই ফিরে আসে।
—আবু সাঈদ খুদরী (রা); বায়হাকি, আহমদ
একজন বিশ্বাসী অপর বিশ্বাসীর দর্পণ।
—আবু হুরায়রা (রা); মুফরাদ, আবু দাউদ
একজন বিশ্বাসী বন্ধুত্বের সহজাত কেন্দ্রবিন্দু। এটা মোটেই শোভন নয় যে, একজন বিশ্বাসী কারো বন্ধু হবে না বা কেউ তার সাথে বন্ধুত্ব করবে না।
—আবু হুরায়রা (রা); আহমদ, বায়হাকি
যারা মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং (সত্যের পথে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে) তাদের দেয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করে, তারা বিশ্বাসীদের মধ্যে উত্তম। আর যারা মানুষের সাথে মেলামেশা করে না, মানুষের দেয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারে না, বিশ্বাসী হিসেবে তাদের অবস্থান পেছনের কাতারে।
—আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা); মুফরাদ (বোখারী)
একজন বিশ্বাসী যখন অন্য বিশ্বাসী ভাইকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে ভালবাসে তখন তার অবশ্যই জানানো উচিত যে, সে তাকে ভালবাসে। (পারস্পরিক ভালবাসার প্রকাশ সম্পর্ককে গভীর করে)
—হাবাব ইবনে ওবায়েদ (রা); আহমদ
তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হিসেবে বসবাস করবে। পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না। সম্পর্ক ছিন্ন করবে না। কোনো মুসলমানের জন্যে তার ভাইদের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা বৈধ নয়।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); বোখারী, মুসলিম
সকল বিশ্বাসী পরস্পরের ভাই। একজন বিশ্বাসী অপর বিশ্বাসীর ওপর জুলুম করতে পারে না, পারে না তাকে বিপদাপন্ন অবস্থায় অসহায়ভাবে ছেড়ে যেতে। তাই—১. কখনো অন্যকে হেয় মনে করবে না। ২. কখনো অন্যের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত হবে না। ৩. কখনো অন্যের প্রতি ক্ষোভ পুষে রাখবে না। ৪. কখনো পারস্পরিক বন্ধন ছিন্ন করবে না। ৫. কখনো পারস্পরিক রেষারেষি বা শত্রুতাকে উসকে দেবে না। এসবই ধর্মপরায়ণতার ভিত্তি। আরেকজন বিশ্বাসীকে যে অসম্মানিত করে, সে-ই দুরাচারী। একজন বিশ্বাসীর সম্মান, সম্পদ ও প্রাণ অন্য সকল বিশ্বাসীর জন্যে হারাম। ধর্মানুরাগের অবস্থান হচ্ছে অন্তরে। কোনো ব্যক্তির খারাপ হওয়ার জন্যে এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার বিশ্বাসী ভাইকে ঘৃণা করে।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম, তিরমিজী
ভাই বা বিশ্বাসীর সাথে তর্ক করতে যেও না, তাকে নিয়ে হাসিতামাশা কোরো না। তাকে এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দিও না, যা তুমি পূরণ করতে পারবে না।
—আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); তিরমিজী, মুফরাদ
দয়া, ভালবাসা ও সমমর্মিতার বন্ধনে বিশ্বাসীরা আবদ্ধ। তাদের অবস্থা একটি দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো দেহই সেই ব্যথা অনুভব করে।
—নোমান ইবনে বশীর (রা); বোখারী, মুসলিম
কোনো বিশ্বাসীর পার্থিব কোনো কষ্ট দূর করলে মহাবিচার দিবসে আল্লাহ তার একটি বড় কষ্ট দূর করে দেবেন। কোনো অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার কষ্ট লাঘব করবেন। অন্যের কোনো দোষ গোপন রাখলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। অন্যকে সাহায্য করলে আল্লাহও তাকে সাহায্য করা অব্যাহত রাখবেন।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
যে আল্লাহর সাথে শরিককারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, জাহান্নাম হচ্ছে তার ঠিকানা। আর যে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী হিসেবে মৃত্যুবরণ করে, জান্নাত হচ্ছে তার ঠিকানা।
—জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা); মুসলিম
ইহকাল ও পরকালে কল্যাণকর নয় এমন সকল বাজে কাজ পরিহার করাই হচ্ছে একজন সমর্পিত মানুষের সৌন্দর্য।
—আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী
আমার উম্মাহর ব্যাপারে আমার একটাই ভয়—অনড় বিশ্বাসের অভাব।
—আবু হুরায়রা (রা); তাবারানী
এমন সময় আসবে যখন ঈমান ঠিক রাখা হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখার মতোই দুঃসাধ্য হবে।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); তিরমিজী