1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০২:০৪ পূর্বাহ্ন

মহীয়সী ভ্যালেরি টেইলর- কাজই আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়

  • সময় রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৬৭ বার দেখা হয়েছে

১৯৬৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসেন ভ্যালেরি টেইলর। তখন তিনি ২৫ বছর বয়সী একজন তরুণ ফিজিওথেরাপিস্ট। মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত ও পক্ষাঘাতগ্রস্থ রোগীদের সেবায় এদেশে সেদিন ছিল না কোনো সুচিকিৎসার ব্যবস্থা। পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের দুর্দশা দেখে সেবাব্রতী ব্রিটিশ তরুণী ভ্যালেরি সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি বাংলাদেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। সেই শুরু। ১৯৭১ সালে দেশের প্রথম প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। এরপর প্রায় অর্ধশতাব্দীর প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন সেন্টার ফর দ্যা রিহাবিলিটেশন অব প্যারালাইজড বা পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি), যা আজ বিশ্বজুড়ে পরিচিত একটি আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে।

৮ জানুয়ারি ২০১৮ কোয়ান্টাম মুক্ত আলোচনার ৭২ তম আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন মহীয়সী ভ্যালেরি টেইলর। Serving Humanity : My Life, My Mission (মানবতার সেবাই আমার জীবন, আমার লক্ষ্য) -এ বিষয়ে তিনি শুনিয়েছেন সিআরপির মতো একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের গড়ে ওঠার গল্প। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও প্রথিতযশা মনোচিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, উত্তরা শাখার মোমেন্টিয়ার শামসুন্নাহার হুদা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভ্যালেরি টেইলর বলেন, ১৯৭৯ সালে চারজন রোগী নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিত্যক্ত সিমেন্ট গোডাউনে। কিছুদিন পরেই শুরু হয় আমাদের যাযাবর জীবন। একাধিক বার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। হাসপাতালের বেড, জিনিসপত্র, রোগী এসব নিয়ে বার বার জায়গা বদলানোটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু প্রতিবার এসব করতে গিয়ে আমরা একটু একটু করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। যার ফলে লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে আরো দৃঢ় হয়েছি যে, সিআরপি-কে আমরা প্রতিষ্ঠিত করবই। অবশেষে ১১ বছর পর ১৯৯০ সালে আমরা সাভারে একটা স্থায়ী জায়গা পেলাম। সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হলো সিআরপি-র কেন্দ্রীয় অফিস। বর্তমানে মিরপুর, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের ১২টি জেলা শহরে এর শাখা রয়েছে।

সিআরপির কাজ প্রসঙ্গে ভ্যালেরি বলেন, আমাদের কাজের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সুস্থ করে তোলার পর পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষদের বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দেয়া। যাতে তারা স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারেন। কারণ কেউ তাদের দায়িত্ব নিতে চায় না। দুর্ঘটনায় যাদের বাকি জীবন হুইল চেয়ারে কাটাতে হয়, তারা খুব হতাশ হয়ে যায় যে, বাকি জীবন আমি কীভাবে পার করব। তাই এদের মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদেরকে আমরা বলি, এসো, বাচ্চাদের লেখাপড়া শিখতে সাহায্য করো। আর অক্ষরজ্ঞানশূন্য হলে বিভিন্ন জিনিস তৈরির কাজ শেখাই। তারা সেসব কাজ করে এবং জীবনের অর্থ আবার নতুন করে খুঁজে পায়। আসলে কাজই আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। যাদের কাজ থাকে না, তারা হতাশ হয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ পেলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরাও সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করতে পারেন। সিআরপি-তে এমন অনেকেই সুস্থ হয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন। কেউ রিসিপশনিস্ট হিসেবে কাজ করছেন, কেউ অসুস্থদের থেরাপি দিচ্ছেন, কেউ মানসিকভাবে অন্যদের সাহস যোগাচ্ছেন। যেহেতু তারা নিজেরা এখানে এসে সুস্থ হয়েছেন, তাই এখানকার রোগীদের দুঃখ তারা যথার্থভাবে অনুভব করতে পারেন। তাই তাদের কথাতেই রোগীরা সুস্থতার বিশ্বাস ফিরে পায় ১০ গুণ বেশি।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে মিসেস শামসুন্নাহার হুদা বলেন, সিআরপি-তে গিয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি সমমর্মিতার বহু জীবনমুখী উদাহরণ। রিকাশাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা, ড্রাইভার, রাজমিস্ত্রীদের মতো হতদরিদ্র মানুষ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে সিআরপিতে আসে। বেশিরভাগ সময়ই যাদেরকে বড় বড় হাসপাতালগুলো ভর্তি করাতে চায় না। নিরুপায় এই রোগীদের ভ্যালেরি ঠাঁই দেন তার প্রতিষ্ঠানে। ধৈর্য, মমতা, যত্ন নিয়ে এদেরকে সুস্থ করে তোলা হয়। এরপর স্বাবলম্বী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যবস্থা করা হয় তাদের পুনর্বাসনের। এটাই প্রকৃত সমমর্মিতা, যে নৈতিক শিক্ষায় গত দু-যুগেরও বেশি সময় ধরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আমাদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে।

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও কোয়ান্টাম পরিবারের অকৃত্রিম শুভানুধ্যায়ী আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ভ্যালেরি টেইলর আমাদের দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তখন থেকে তার পূর্ণ মনোযোগ ও সর্বশক্তি দিয়ে তিনি এদেশের পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের সুস্থতা ও পুনর্বাসনের জন্যে যেভাবে কাজ করেছেন, তা অতুলনীয়। বাংলাদেশের মানুষকে ভালবেসে তার এই ত্যাগের জন্যে আমরা তার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com