এটি হৃদয়কে বিগলিত করে। নয়নযুগলকে করে অশ্রুসিক্ত। স্মরণ করিয়ে দেয় মৃত্যু ও আখিরাতের কথা। ফলে এর দ্বারা অন্যায় থেকে তওবা এবং নেকির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় পরকালীন মুক্তির প্রেরণা। শুধু এসব উদ্দেশ্যেই শরিয়তে কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুবা ইসলামের সূচনালগ্নে কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)
কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য : কবর-জিয়ারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য, যা আল্লাহর রাসূল স. ইরশাদ করেছেন তা এই যে, কবরের দৃশ্য দেখে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্বের বিশ্বাস তাজা করা, নিজের মৃত্যু ও কবর-জীবনকে স্মরণ করা এবং আখিরাতের প্রস্তুতির সংকল্প গ্রহণ করা।
মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্বরণ করার নিয়তে করব যিয়ারত করতে যাওয়া: আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী স. তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করতে গিয়ে কাঁদলেন এবং তাঁর সাথে যে সাহাবীগণ ছিলেন তারাও কাঁদলেন। অতঃপর তিনি বললেন,“আমি আমার মায়ের মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম কিন্তু আমাকে সে অনুমতি প্রদান করা হয়নি। তবে আমি মায়ের কবর যিয়ারতের জন্যে আবেদন জানালে তিনি তা মঞ্জুর করেন। অতএব, তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা কবর যিয়ারত করলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, “সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত কর, কেননা এতে আখিরাতের কথা স্বরণ হয়।”
১২৬২.
দুটি কারণে একজন মানুষ জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত হতে পারে। এক. কাউকে বংশের খোঁটা দিলে। দুই. মৃতের জন্যে বিলাপ করে কাঁদলে।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
১২৬৩.
মৃতের জন্যে উচ্চস্বরে বিলাপকারী নিজের মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করলে তাকে মহাবিচার দিবসে আলকাতরার তৈরি পোশাক ও দস্তার তৈরি রুমাল মাথায় পরিয়ে হাজির করা হবে।
—আবু মালেক আশয়ারী (রা); মুসলিম
১২৬৪.
নবীজীর (স) কাছে বায়াত করার সময় মেয়েদের শপথের একটি অংশ ছিল যে, আমরা মৃতের জন্যে বিলাপ করে কাঁদব না।
—উম্মে আতিয়া (রা); বোখারী, মুসলিম
১২৬৫.
মদিনায় কয়েকটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নবীজী (স) কবরের দিকে মুখ ফিরিয়ে দোয়া করেন : ‘হে কবরবাসীরা! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ তোমাদের ও আমাদের ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের পূর্বসূরি। আমরা তোমাদের উত্তরসূরি।’
—আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); তিরমিজী
১২৬৬.
সুযোগ পেলেই কবর জেয়ারত করো। আখেরাতের কথা মনে রাখার এটাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
—আবু হুরায়রা (রা); ইবনে মাজাহ, মেশকাত
১২৬৭.
কবর জেয়ারত করো। এতে পরকালের কথা মনে পড়বে। পার্থিব ভোগবিলাসে নিরাসক্তি সৃষ্টি হবে।
—আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); ইবনে মাজাহ
১২৬৮.
মসজিদে নববীর ঝাড়ুদার কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাকে একদিন দেখতে না পেয়ে রসুল (স) তার কথা সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন। তারা বললেন, সে মারা গেছে। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, আমাকে তোমরা খবর দাও নি কেন! আমাকে তার কবরে নিয়ে চলো। তিনি কবরের কাছে গিয়ে তার জন্যে দোয়া করলেন।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম