মৃত্যুর পরও কীভাবে অপচয় হয়-মোঘলদের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। এক মহিলার কবরের জন্যে ২২,০০০ শ্রমিক ২০ বছর পরিশ্রম করেছে এবং লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যেখানে কোনো জীবিত মানুষ কোনোদিন থাকে নি।
এমনকি সম্রাট-যিনি নির্মাণ করেছেন, তিনিও জীবিত অবস্থায় ওখানে যেতে পারেন নি। মরার পরে তাকে ওখানে ঢোকানো হয়েছে। আর এ অপচয়, অপরিণামদর্শিতার পরিণতি হলো ২০০ বছরের গোলামি। আমাদের পূর্বপুরুষদের পাপের শাস্তি আমাদেরকে পেতে হলো ২০০ বছর ধরে এবং এখনো আমরা সেই শাস্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি নি।
এখন আরবদের কী অবস্থা, সৌদিদের কী অবস্থা। তারা যে পরিমাণ খাবার অপচয় করে তা দিয়ে ১০ কোটি মানুষ অনায়াসে তাদের পুষ্টির প্রয়োজন পূরণ করতে পারতো।
অথচ আরবদের পাশের ছোট দেশ ইসরায়েল, তাদের কিন্তু অপচয় নেই, সিস্টেমলস নেই। যে কারণে একটি ছোট দেশ-৩০ লক্ষ লোক, তার পাশে বিশাল বিশাল দেশ এবং কোটি কোটি মানুষ-তাদেরকে ঠান্ডা করে রেখেছে ডান্ডা পিটিয়ে, কারো কথা বলার কোনো শক্তি নেই এবং শুধু তা-ই নয়, সারা পৃথিবীব্যাপী ইহুদিদের সংখ্যা হচ্ছে দেড় কোটি। এই দেড় কোটি মানুষ পৃথিবীর তাবৎ ব্যাংকিং, ইনস্যুরেন্স, হেভি ইন্ডাস্ট্রি, মিডিয়া, ইন্টারনেট, ওয়েব থেকে শুরু করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-সবকিছু তারা চালাচ্ছে সুপরিকল্পিত বিনিয়োগের মাধ্যমে এবং তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।
আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলেছেন, ‘তোমরা অপচয় করো না, আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না। ’ আমরা আল্লাহর ভালোবাসার থোড়াই কেয়ার করি।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কারো কাছ থেকে মাটিতে খাবার পড়ে গেলে সে যেন সেটা তুলে, ধুলোটা ঝেড়ে খেয়ে ফেলে; শয়তানের জন্য রেখে না দেয়। ’ নবী (সা.) খাবার শেষে হাত চেটে খেতে বলেছেন, কারণ খাবারের কোন অংশে বরকত আছে সেটা মানুষ জানে না। দেখুন, খাবারের বরকত কমে যাচ্ছে বলেই কিন্তু খাবারের উৎপাদন কমছে, সেই কম খাবার সংরক্ষণের জন্য ফরমালিনের বিষ মিশানো হচ্ছে, বিষ মেশানো সেই খাবারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, খাবারের স্বাদ-তৃপ্তি সব উধাও হয়ে যাচ্ছে। এবার আপনিই বলুন, গোড়ায় গলদ রেখে উন্নয়ন কীভাবে হবে? অর্থাৎ নিজ হাতে কল্যাণের সব দরজা বন্ধ করে রেখে অন্যকে দোষ দিয়ে কী লাভ?
পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ ছিলেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা মৃত্যু অবধি পরপর তিনদিন পেটপুরে খেতে পারেননি। আর আমরা তার উম্মত হয়ে খাবার নষ্ট করে নবীর হাশরের মাঠে তার সুপারিশ কোন মুখে প্রত্যাশা করি?
সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মানুষদের এমন সময়ের মধ্যে যেতে হয়েছে, যখন ‘হাবালা’ গাছের পাতা ছাড়া তাদের আর কোনো খাবার ছিলো না। গাছের পাতা খাওয়ার ফলে তাদের মল আর ভেড়ার মলের কোনো পার্থক্য ছিলো না।
আল্লাহতায়ালার অশেষ শোকরিয়া যে, আল্লাহতায়ালা অামাদের খাবারের প্রাচুর্য দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালার নিয়ামত। কিন্তু খাবারের এই প্রাচুর্য যে আল্লাহর পরীক্ষা সেটা স্বীকার করতে চাই না।
আলেমরা বলেন, আপনি যদি কোরআনকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করে থাকেন; তাদের জন্য উচিৎ নয় কোনোভাবে খাবার নষ্ট করা। আপনি খাবার খেতে পারবেন না- সমস্যা নেই। আপনি সেটা নষ্ট না করে রেখে দিন। আপনি যত বড় সম্পদশালীই হোন না কেন, খাবার নষ্ট করার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি।
মনে রাখবেন, পৃথিবীর মানুষের ভালোবাসা না পেলেও জীবন কাটিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু পৃথিবীর মালিক, আমার-আপনার জীবনদাতা আল্লাহর ভালোবাসা না পেলে ধ্বংস অনিবার্য। আর আল্লাহ কোনো অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না।
আসলে এই অপচয়, অপব্যয়, সিস্টেমলস করে কেউ কোনো শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারে না। কোনোদিন পারে নি, কোনোদিন পারবেও না।