ছোট থেকে আমার আঁকাআঁকি করতেই বেশি ভালো লাগত। তার পাশাপাশি কোনোকিছু পর্যবেক্ষণ করতেও আমার ভালো লাগে। এগুলোর মধ্যেই আমি অন্যরকম আনন্দ খুঁজে পাই। ছোট থেকেই আমি কোয়ান্টামমে বড় হয়েছি। সেজন্যে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে অতটা ঘনিষ্ঠ হতে পারি নি। দীর্ঘ ১৩ বছর কাটিয়েছি আমি সেখানে।
এখানেই এইচএসসি সম্পন্ন করেছি। ভেবেছিলাম কলেজ শেষ করে কোয়ান্টাম থেকে ইউনিভার্সিটির ভর্তি প্রস্তুতি নেব। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। এটা ছিল আমার জীবনের এক বিপর্যয়। সুতরাং বেরিয়ে যেতে বাধ্য হলাম। হঠাৎ এভাবে বেরিয়ে যাব ভাবতেও পারি নি। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে যেতে হয়েছিল। মনে হচ্ছিল নিজের ঘর থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি।
সত্যি বলতে হতাশা, বিষণ্নতা কী সেটা ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় কখনো বুঝতে পারি নি। যখন কলেজ শেষ করে বেরিয়ে গিয়েছি তখন বুঝতে পেরেছি যে আমার নিজের দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। তাই নিজ দায়িত্বে ভর্তি প্রস্তুতি নিলাম। একা প্রস্তুতি নেয়াটা ছিল বড় একটা চ্যালেঞ্জ। ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব কিন্তু জীবনের প্রথম ব্যর্থতা আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়ার পর। তবুও মন থেকে সবকিছু ভুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কল্পনায় ডুবে ছিলাম।
এক সপ্তাহ পর মোবাইলে একটা মেসেজ দেখে আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মেসেজে লেখা তারিখ অনুযায়ী কালকের মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী ধাপে ফরম পূরণ করতে হবে। মেসেজটা দেখে এতদিন পর আবার নতুন করে আশার আলো খুঁজে পেলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার আগে আমি চিন্তায় পড়ে যাই।
কেননা সেখানে মেধাতালিকায় ১৮ জনের মধ্যে থাকতে হবে। আমি কোনোভাবেই ভাবতে পারছিলাম না যে, কীভাবে পজিশনে থাকব, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার জনের মধ্যেও থাকতে পারি নি।
বিশ্বাস এবং পরিশ্রম নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চ ইউনিটে পরীক্ষা দিলাম। তবে একটা বিষয় ভাবতে অবাক লাগছিল যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে যেগুলো নোট করেছিলাম সেগুলোই দেখি পরীক্ষায় চলে এসেছে। পরীক্ষা দিলাম এবং রেজাল্টে আমার রোল নম্বর যথেষ্ট ভালো পর্যায়ে এসেছে। তারপর ব্যবহারিক পরীক্ষা দিলাম, সেটাও ভালো হলো। রেজাল্টের দিনে প্রার্থনা করছিলাম যেন চান্স পেয়ে যাই। পরীক্ষা দেয়ার পর আমার মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছিল যে, আমি চান্স পাব। নিজেই অবাক হয়ে দেখলাম যে, আমি ১৬ তম হলাম, যেখানে চান্স পাওয়াটা আমার জন্যে সবচেয়ে কঠিন ছিল। সাফল্যের এই সংগ্রামে লেগে থাকার শক্তিই জীবনের এক শ্রেষ্ঠ উপহার।
কোয়ান্টা জীবনে স্মরণ করার মতো বিষয় হলো আমার বন্ধুরা। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকায় নিজেকে কখনো একা মনে হয় নি। তাদের বন্ধুত্ব আর সহমর্মিতা কখনো একা হতে দেয় নি। উচথোয়াই, জুয়েল, গোল্ডেন তাদের সাথে আমার বন্ধুত্ব সেই সূচনা শ্রেণি থেকে। কোয়ান্টামে স্কুল জীবন শেষ হলেও এই বন্ধুত্ব থাকবে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
গুরুজী দাদুর সাথে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। বোর্ড পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় এবং আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খেলতে যাওয়ার সময়ও তিনি আমাদের দোয়া করে দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল প্রথমবারের মতো ভলিবলে চ্যাম্পিয়ন হয়। আমাদের এই সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন ভলিবল কোচ বজলুর রশীদ স্যার। কেননা আমরা যে-রকম পরিশ্রম করেছি, তিনি তার থেকেও অনেক বেশি পরিশ্রম করেছেন। তাই স্যারের জন্যে মন থেকে দোয়া চলে আসে।
আমার জীবনের মনছবিটা আমারই মতো। আমি একজন সৃজনশীল শৈল্পিক মনের অধিকারী সফল ব্যক্তি হতে চাই। কোয়ান্টামের সেবায় ছোট থেকে বড় হয়েছি। আমি নিজে সেবাদানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। সেজন্যে আমি সবসময় নিজেকে অন্যের সেবায় নিয়োজিত রাখব।
[ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘সব সম্ভব’ বই থেকে ]