হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বড় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। রবিবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১১টায় বাবুনগরী ফেসবুক ভিডিওতে এসব কথা বলেন। তার প্রেস সচিব প্রেস সচিব মাওলানা ইন’আমুল হাসান ফারুকী ভিডিওবার্তার কথা নিশ্চিত করেন। এদিকে, মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও নুরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম থেকে ইতোমধ্যে কয়েকজন দায়িত্বশীল আলেম পদত্যাগ করেছেন। এই পদত্যাগের তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তা সামনে আসবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে গত মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটে, তাতে অন্তত ১৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে—এসব নাশকতার পেছনে জড়িত না থাকা ও বিচারের দাবিতে অন্তত এক ডজন হেফাজত নেতা পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে হেফাজতের এই নেতারা জানান, গত মার্চে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, কিশোরগঞ্জের যেসব এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে, এসব ঘটনার সঙ্গে তাদের সংযুক্ততা নেই। বিশেষ করে মাওলানা বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি পালনে হঠকারিতা প্রদর্শন করার কারণে তারা আর এই সংগঠনে থাকতে নিরুৎসাহিত বোধ করছেন। আর এ কারণেই হেফাজত ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নানাভাবে তথ্যও পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন আগ্রহী নেতারা। হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, এমন নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (কাসেমী অংশ)-এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) নায়েবে আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (মুফতি ওয়াক্কাছ অংশ) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, কেন্দ্রীয় সদস্য জমিয়তের (মুফতি ওয়াক্কাস অংশ) সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক, জমিয়তের (কাসেমী) সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান। জানতে চাইলে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘যারা ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন, তারা কী কারণে করেছেন আমি জানি না। তবে আমি চিন্তা-ভাবনার মধ্যে আছি। আমাকে তো ডাকেও না, আমি নিজেই যাই না।
কী কারণে এমন হয়েছে- এ প্রশ্নের জবাবে জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘হেফাজতের কার্যক্রম যেন কেমন হয়ে গেছে। কর্মসূচি যা দেওয়া হয়, তা অতিরঞ্জিত বলে মনে হচ্ছে।’ কেন হেফাজতের নায়েবে আমিরের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চান, এমন প্রশ্নে জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফীর অন্তিমকালীন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, ওটা নিয়ে আলেমদের মধ্যে রক্তক্ষরণ আছে। ওই বেদনা এখনও জুড়ে আছে।’ পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক জমিয়তের (কাসেমী) সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমি তো সক্রিয় নই। আর ভবিষ্যতে কী হবে, এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করা সমীচীন মনে করি না। ওয়েট অ্যান্ড সি।’ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের উভয় অংশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জমিয়ত ওয়াক্কাছ গ্রুপ ও জমিয়ত কাসেমী গ্রুপের মিরপুর আরজাবাদ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক অংশটির মধ্যে একটি যুক্ততা তৈরি হয়েছে। শনিবার (২৪ এপ্রিল) বৃহত্তর মিরপুর কেন্দ্রিক হেফাজতের নেতারা সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। একইভাবে জমিয়ত ওয়াক্কাছ গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ড. মহিউদ্দিন ইকরাম, দলের নেতা মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন নেতা পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।