প্রিয় সুহৃদ! বছর পার হয়ে আবার আমরা একটি রমজান পেয়েছি, যে মাসে নিজের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার জন্যে করণীয়গুলো করা অনেক সহজ।
পৃথিবীতে যত ধর্ম এসেছে- হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি বা খ্রিষ্ট-সব ধর্মেই রয়েছে রোজা, উপবাস বা ফাস্টিংয়ের বিধান।
নবী-রাসুলরা, মুনি-ঋষি, অলি-বুজুর্গরা হাজার বছর ধরে এর উপকারের কথা বলেছেন।
এখন বলছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী, স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী এবং ডায়েট বিশেষজ্ঞরা।
রোজা রাখলে ‘অটোফেজি’ নামক এক প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়া চালু হয় দেহে যা দেহকে বিষাণুমুক্ত করে।
‘অটোফেজি’ তুঙ্গে পৌঁছায় উপবাসের ১২ থেকে ১৬তম ঘণ্টায়। আর গ্রীষ্মকালীন রোজায় এবার আমরা সে সুযোগই পাচ্ছি।
রোজা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যে ক্ষতিকর- ভুল ধারণা।
আধুনিক গবেষণা বলে রোজা রেখে বিপাক ক্রিয়াকে শক্তিশালী এবং অগ্ন্যাশয়কে কর্মক্ষম করে রোজা ‘টাইপ-ওয়ান’ ও ‘টাইপ-টু’ – দুধরনের ডায়াবেটিসই নিরাময় সম্ভব।
এসিডিটি, আলসার, উচ্চরক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো যে-কোনো বয়সীদের রোগ এবং আলঝেইমার, হান্টিংটন্স ও পার্কিনসন্সের মতো বয়স্কদের অসুখ-বিসুখের আশঙ্কাও কমায় রোজা।
এবং এখন এই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিকালে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বলা হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর, রোজা বা উপবাস তাতেও উপকারি।
রোজার রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় ক্ষমতার কারণেই আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন- তোমরা রোজা রাখ, যেন সুস্থ থাকতে পার।
এবং এ সুস্থ থাকতে তখনই পারবেন যখন নবীজী (স) রোজার যে নিয়ম বলেছেন তা মেনে আপনি রোজা রাখবেন।
মুক্ত হবেন সমস্ত ভয়, আতঙ্ক, মনোবিকার থেকেও।
এবারের রমজান হোক করোনা আতঙ্ক জয়ের রমজান।
সারাদিন না খেয়ে থাকলেই রোজা হয় না। প্রয়োজন আত্মশুদ্ধির আপ্রাণ চেষ্টা। রমজানের প্রতিটি দিন কীভাবে অতিবাহিত করবেন তার রুটিন করুন।
-মাগরিবের আজান দিলে খেজুর খেয়ে পানি পান করুন; শরীরে আসবে তাৎক্ষণিক প্রাণশক্তি। চিনির শরবতেরও প্রয়োজন নেই।
-নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নিন। খাবারে ভাত, শাকসবজি, মাছ বা মাংস বা ডিম ও ডালসহ অন্যান্য সুষম খাবার, সালাদ, লেবু, ছোলা ও টক দই রাখুন।
-পেঁয়াজু, চপ, বেগুনি, পাকোড়ার মতো ভাজাপোড়া খাবেন না। হজমের অসুবিধা, বুক জ্বালাপোড়া ও এসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
-পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, মোগলাই, হালিম, চাইনিজ, গরু ও খাসির গোশত এ মাসে যত কম খান তত ভালো।
-ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কার এসময়ে বেশি বেশি ভিটামিন সি-যুক্ত ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
-প্রোটিন পানির তৃষ্ণা বাড়ায়। সেহরিতে তাই মাছ-মাংস বর্জন করুন। খিচুড়ি, ডিম, ডালও খাবেন না। সামান্য ভাত-সবজি বা কলা-খেজুর বা দই-চিড়া খান।
-তবে একেবারে কিছুই না খাওয়া, অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরি বর্জন- এটা করবেন না।
-সেহরি শেষে দাঁত ব্রাশ ও ওযু করে কিছুক্ষণ বজ্রাসনে বসুন। কোয়ান্টাম প্রকাশিত আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী অডিও শুনতে থাকুন। ফজরের নামাজ আদায়ের পর যতক্ষণ ইচ্ছা মর্মবাণী শুনতে বা পড়তে পারেন।
-গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নিয়ে পরিবারের সবাই একসঙ্গে ইফতার করুন। ইফতারের ১৫ মিনিট আগে খেজুর-পানি সামনে নিয়ে বসুন। আল কোরআনের বাংলা দোয়ায় নিমগ্ন হোন। নিজের বা অন্যের জন্যে বিশেষ কোনো প্রার্থনা থাকলে করুন। দোয়া কবুলের এটা শ্রেষ্ঠ সময়।
-রমজান খাদ্য সংযমের মাস, খাদ্য উৎসবের নয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সমাজের যে বিপুলসংখ্যক মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে নামী-দামী হোটেলের খাবার বর্জন করুন একেবারেই।
-রোজা রাখা ও আনুষঙ্গিক ইবাদতকেই প্রাধান্য দিন। রমজান মাসের নফল ইবাদত ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের। আর একটি ফরজ ইবাদত ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের।
-নামাজ আদায়ের পর নীরবে ৩৩বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর পড়ুন।
-নবীজীর (স) সুন্নত হিসেবে তারাবীহ পড়তে সচেষ্ট হোন। সেহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় উত্তম ইবাদত।
-নবীজী (স) বলেন–এ মাসে এমন একটি রাত (শবে কদর) আছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। শেষ ১০ রমজানের বেজোড় রাতকে কদর-এর মহিমান্বিত রাত মনে করে ফজর না হওয়া পর্যন্ত ইবাদতে মগ্ন থাকুন, ডুবে যান কোরআনের মর্মবাণীর গভীরে।
গীবত, পরচর্চা ও অপ্রয়োজনীয় কথা এবং বিতর্ক, বিবাদ ও চ্যাঁচামেচি আপনি নিজে করবেন না। অন্যরা করলেও সায় দেবেন না। বিনীতভাবে বলুন- আমি রোজাদার।
করোনা পরিস্থিতির কারণে যে মানুষেরা অন্নহীন হয়ে পড়েছে, সমমর্মিতার এ মাসে তাদের কথা মনে রাখুন। মনে রাখুন দুস্থ এতিম শিশুদের কথা। আপনার খাবার খরচ থেকে একটু বাঁচিয়ে হলেও ওদের অন্নসংস্থানে অংশ নিন। রমজান মাসে নিরন্ন ও এতিমের কল্যাণে দান ৪৯০০ (৭০ X ৭০) গুণ সওয়াবের।
“বিশ্বাসীর জন্যে কোরআন হচ্ছে শেফা ও রহমতস্বরূপ” (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮২) অর্থাৎ বিশ্বাসীর জীবনে কোরআন কল্যাণ ও নিরাময় বয়ে আনে।
এ নিরাময় শারীরিক, মানসিক, আত্মিক এবং সামাজিক।
এই রমজানে এ কোরআনের গভীরেই আপনি ডুবে যান। বাসায় বসে সপরিবারে করুন কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআন।
পাবেন রোগব্যধি, নেতিবাচকতা, ভয়, বিকৃতি, আতঙ্ক ও মনোবিকার থেকে মুক্তি। সেইসাথে ১২৪ কোটি বছর ইবাদতের সমান নেকি।
করোনাসহ সকল বালা-মুসিবত থেকে পরিবার থাকবে আল্লাহর রহমতের ছায়ায়। কারণ আপনি জানেন, কোরআনের জ্ঞান যেখানে অনুশীলন হয় ফেরেশতারা সেখানে আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে।
খতমে কোরআনের এ লিঙ্ক পৌঁছে দিন আরো ৪০ জনকে। উদ্বুদ্ধ করুন- করোনা মুক্তির নিয়তে যেন তারাও বাসায় বসে সপরিবারে অংশ নেন কোরআন থেকে নিরাময় লাভের এ সুযোগে।
আর করোনা সংকট থেকে মুক্তি, বালা-মুসিবত থেকে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্যে জান-ই-সদকা হিসেবে বিশেষ দান করুন।
টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক দেখে সময় কাটানো আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমাবে, নষ্ট করবে রোজার গুণমান, সৃষ্টি হবে নেতিবাচকতা। আশাবাদ ও ইতিবাচকতায় উজ্জীবিত হতে চোখ রাখুন কোয়ান্টাম সাইটে। স্পিচ, ভিডিও, কোয়ান্টাপিডিয়া, আর্টিকেল, উইশ, কোরাম ও শুদ্ধাচার অ্যাপগুলোতে সময়ের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আপনি পাবেন। ভার্চুয়াল ভাইরাস আসক্তিমুক্তির এক চমৎকার সুযোগ হতে পারে এ রমজান।
এক চান্দ্র বছর আপনার কাছে ৪৫ হাজার টাকা জমা থাকলেই আপনি যাকাতদাতা। করোনা পরিস্থিতির শিকার দুস্থদের কথা স্মরণ করে যাকাত দিন সঙ্ঘবদ্ধভাবে। রমজানে যাকাতের অর্থ কোয়ান্টাম যাকাত ফান্ডে দান ৪,৯০০ গুণ বরকতের।
এ রমজানকেই মনে করুন আপনার জীবনের শেষ রমজান। আত্মশুদ্ধি ও হক্কুল ইবাদে সাধ্যমতো সর্বোচ্চ প্রয়াস দিয়ে সার্থক করে তুলুন এবারের রমজান।
এবারের রমজান হোক মনুষ্যত্বের বিজয়ের, শুদ্ধাচার অনুশীলনের।