সাধারণ একটি ধারণা হলো রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয়। দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এই ভয়ে কেউ কেউ রোজা রাখেন না, বিশেষ করে যারা নিজেদেরকে মনে করেন- শারীরিকভাবে দুর্বল। অনেকে হয়তো রমজানের প্রথম কয়েকদিন রাখেন। পরের দিকে আর রাখেন না। বিরতি দিয়ে দিয়ে রোজা রাখার প্রবণতাও আছে কারো কারো।
অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে, রোজা এনার্জি লেভেলকে বাড়িয়ে দেয়। বরং এই যে সবসময় খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে থাকা- বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে নিজের অজান্তেই আপনি আপনার দেহকে ঠেলে দিচ্ছেন ভয়ঙ্কর কিছু শারীরিক ঝুঁকির দিকে! ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলা যাক।
আমাদের দেহে আইজিএফ-১ হরমোন নামে এক ধরনের গ্রোথ হরমোন আছে যার কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোষ তৈরি করে দেহকে বাড়ন্ত রাখা। এসময় পুরনো কোষের মেরামত বা ক্ষয়পূরণের চেয়ে নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়াই বেশি সক্রিয় থাকে।
আপনি যত বেশি খাবেন, বিশেষত প্রোটিন জাতীয় খাবার, তত বেশি আপনার দেহ আইজিএফ-১ তৈরি করবে। সবসময় যখন এমন একটা অবস্থা থাকে, অর্থাৎ কোনো বিরতি বা বিশ্রাম ছাড়া প্রতিনিয়ত নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়া- এই সুযোগেই দেহে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধিগুলো। কয়েক ধরনের ক্যান্সার, যেমন, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের সাথে বিজ্ঞানীরা উচ্চমাত্রার আইজিএফ-১ এর যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা বলেন, এই অবস্থাকে পাল্টে দিতেই তাই মাঝে মাঝে খাবার থেকে দেহকে অব্যাহতি দেয়া দরকার। একটা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় দেহে আইজিএফ-১ হরমোন আছে, এমন একজন মানুষ মাত্র তিন দিন উপবাস করে তা নামিয়ে ফেলেছেন অর্ধেকে! ডাক্তাররা তাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তার প্রবল। কিন্তু আইজিএফ-এর মাত্রা কমে যাওয়ায়, এখন কমে গেল সে ঝুঁকিও।
আর রোজা রাখলে যে প্রাণশক্তি বাড়ে তা আরো পরিষ্কার হয়েছে ২০১৬ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইয়োশিনারি ওশুমির নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির পর। কারণ জাপানি এই বিজ্ঞানী ‘অটোফেজি’ নামক দেহের এক প্রাকৃতিক সুস্থতা প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন যা উদ্দীপ্ত হয় দেহের পানাহার বর্জিত অবস্থায়। অটোফেজি তখন কোষের ভাঙাচোরা অংশ, আবর্জনা ইত্যাদিকে রিসাইক্লিং করে দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়। কাজেই রোজা দেহকে দুর্বল তো করেই না, বরং আরো প্রাণবন্ত করে।