শুল্ক অস্থিরতায় স্থগিত হচ্ছে পোশাক রপ্তানির অর্ডার

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে পোশাকের অর্ডার স্থগিত করতে শুরু করেছে। এতে রপ্তানিকারক মহলে সৃষ্টি হয়েছে চরম উদ্বেগ।

বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন রিটেইল ব্র্যান্ড ওয়ালমার্ট ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পোশাকের কিছু অর্ডার স্থগিত ও পিছিয়ে দিয়েছে। প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন রয়টার্সকে বলেন, “ওয়ালমার্ট সাঁতারের পোশাকের ১০ লাখ ইউনিটের একটি বড় অর্ডার স্থগিত করেছে।”

এছাড়া, ক্ল্যাসিক ফ্যাশন নামের আরেক প্রতিষ্ঠান ই-মেইলের মাধ্যমে অর্ডার স্থগিতের কথা জানিয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার ফারুক সৈকত দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত ওয়ালমার্ট নয়, তারাই নিয়েছেন।

স্প্যারো গার্মেন্টস ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, “বর্ধিত শুল্ক কার্যকর হলে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার হারাতে হতে পারে।” তার মতে, মার্কিন বাজারে বড় ব্র্যান্ডগুলো সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও সাধারণ আমদানিকারক ও বায়িং হাউজগুলো দ্রুত অর্ডার বাতিল করে।

তিনি আরও বলেন, “চীন এখন জর্ডান, কেনিয়া, ইথিওপিয়া ও মিসরের মতো দেশে গার্মেন্টস খাতে বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশের যদি আলোচনার গতি না বাড়ে, তাহলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।”

শনিবার বিকেলে উত্তরা বিজিএমইএ ভবনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান (বাবু) বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করেও সফল হইনি। পরে চারজন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয়।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারের এক প্রতিনিধি সময়মতো আলোচনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই মাস সময় নষ্ট হয়েছে। এরপর আরেকজন প্রতিনিধি যুক্ত হন, কিন্তু ব্যবসায়ীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করা উচিত ছিল।”

বিজিএমইএ সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উপদেষ্টা প্রস্তাব দিয়েছেন, যদি ৪০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজন নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ব্যবসা চালানো যাবে কিনা—এটি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।

এদিকে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, “৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের শর্ত আরোপ হলে বাংলাদেশের ওভেন পোশাক রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে নিটওয়্যার ও ডেনিম খাতে এর প্রভাব কম থাকবে।”

ব্যবসায়ী নেতারা অভিযোগ করছেন, সরকারের বার্তায় রয়েছে দ্বৈততা। তারা বলছেন, একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে বাজেটে তুলার আমদানিতে ২% অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। এই অবস্থান মার্কিন প্রশাসনের কাছে বিভ্রান্তিকর বার্তা পাঠাতে পারে।

বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, এখন আর প্রতীকী কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট থাকার সময় নেই। দরকার জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও কৃষিনির্ভর একটি সাহসী ও কৌশলগত চুক্তি, যা মার্কিন রাজনৈতিক মহলে দৃশ্যমান বার্তা দেবে এবং পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *