‘সকল ধর্মের সকল মানুষের সম্মিলিত রক্তস্রোতের প্রবাহমানতায় সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধে এদেশ মুক্ত স্বাধীন হয়েছে। বাঙালীর রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাবমূর্তি। সেটি সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন এবং সম্মলিত প্রয়াসে এগিয়ে যাওয়ার।
তেমনই একটি মহৎ কাজ রক্তদান। আর স্বেচ্ছা রক্তদাতারা আত্মীয়ের চেয়েও বড় আত্মীয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হাজারো রোগী বেঁচে আছেন অচেনা-অজানা আত্মীয়ের সহযোগিতায়। এটাই মনুষ্যধর্ম। সত্যিকারের মানুষ হতে হলে রক্তদানের মতো এমন সেবাকাজে নিয়মিত অংশ নিতে হবে।’
২২ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ আইডিইবি মিলনায়তনে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে একথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও একুশে টেলিভিশনের সিইও পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক স্বেচ্ছা রক্তদাতাকে সম্মাননা জানায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। সম্মাননাপ্রাপ্ত রক্তদাতার মধ্যে কমপক্ষে ৩ বার রক্তদান করেছেন ১৬৫ জন, ১০ বার রক্তদান করেছেন ৮৪ জন এবং ২৫ বার রক্তদান করেছেন ৯০ জন এবং ৫০ বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন এক জন। এসময় স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের হাতে সনদপত্র, বিশেষ আইডি কার্ড ও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান অতিথি বলেন, রক্তদানের মতো এমন সেবাকাজকে ব্রত হিসেবে নিতে পারাটাই প্রকৃত মনুষ্যধর্ম। এই মানুষগুলো সৃষ্টিকর্তার কাছের মানুষ। আমাদের দেশের রক্তের চাহিদা পূরণে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের পক্ষে অনুভূতি বর্ণনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সাজিদ রহমান এবং নিয়মিত রক্তগ্রহীতাদের মধ্য থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ফাইজা মোস্তফা।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক (মোটিভেশন) জনাব এম রেজাউল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক মাদাম নাহার আল বোখারী। প্রধান অতিথি, নিয়মিত রক্তদাতাসহ উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় আট লক্ষ ব্যাগ নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের চাহিদা রয়েছে। রক্ত ঘাটতির বিপুল এ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই ১৯৯৬ সাল থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কোয়ান্টাম। গত দুই দশকের প্রচেষ্টায় ১৩ লক্ষাধিক মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।