নেক সন্তান হচ্ছে মা-বাবার জন্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আমরা মেডিটেশনে বলি, আলোচনায় বলি, আখেরি দোয়াতে যখন দোয়া করি তখন আমাদের সমস্ত পুণ্য, সমস্ত ভালো কাজের নেকি আমাদের মা-বাবা ও অভিভাবকদের জন্যে আমরা উৎসর্গ করে দেই।
একজন সন্তানের জন্যে সবচেয়ে বড় কর্তব্য হচ্ছে, যখনই সে নামাজ পড়ে, প্রার্থনা করে, মেডিটেশন করে তখন তার মা-বাবা ও অভিভাবক অর্থাৎ যাদের কাছে তার ঋণ রয়েছে, যাদের কাছে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার বিষয় রয়েছে, যাদের কাছ থেকে উপকার পেয়েছে, প্রত্যেকের জন্যে দোয়া করা এবং যারাই মারা গেছেন, তাদের জন্যে এই দোয়াই সবচেয়ে শান্তির।
অবশ্যই একজন নেক সন্তান, একজন সৎকর্মশীল সন্তান তার মা-বাবা বা অভিভাবকদের জন্যে শুধু নয়, হাজার হাজার মানুষের জন্যে সে কল্যাণের দরজা খুলে দিতে পারে। অনেক সময় মা-বাবারা বলেন, নিজেদের বিনাশ করছি কিসের জন্যে? তোদের সুখের জন্যে। আসলে সেটা কি নেক সন্তান বানানোর জন্যে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা কিন্তু নয়। সন্তানের জন্যে বাড়ি করে রাখব, সন্তানের জন্যে ব্যাংক-ব্যালেন্স রাখব যেন তাদের কষ্ট না হয়।
এই বাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স, সম্পদ দিয়ে যদি সন্তান সৎকর্ম করে অবশ্যই বাবা-মা সে পুণ্যের অধিকারী হবেন। কিন্তু এই টাকা যদি সে মাদকের পেছনে বা অন্যায় কাজে ব্যয় করে, তাহলে মা-বাবা যত কষ্ট করেই তার জন্যে সম্পদ রেখে যাক, এই গুনাহর অংশীদার তাকেও হতে হবে।
সন্তানের জন্যে মা-বাবার সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে তাকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে দেয়া। এটার জন্যে কোনো বাবা-মা যদি ত্যাগ স্বীকার করেন যে, আমি আমার সন্তানকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছি বা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি; তারপর সেই সন্তান যদি অন্যায় করে, সেই অন্যায়ের কোনো প্রতিফল মা-বাবার কাছে যাবে না।
কারণ মা-বাবা তাকে আলোকিত মানুষ করার জন্যেই সবকিছু করেছেন। কিন্তু মা-বাবা যদি অর্থসম্পত্তি রেখে যান, আর সে অপব্যবহার করে, সেটা দিয়ে সে অন্যায় করে তাহলে বাবা-মা তো দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেন না।
আর কেয়ামত পর্যন্ত সওয়াব পাওয়ার কাজটা হতে পারে খুব সহজ। সেটা হচ্ছে, মানুষকে আলোকিত করা এবং মানুষের জীবন থেকে অবিদ্যাকে দূর করার কাজ। যেমন, আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী বিতরণের কাজ, এই আলোকিত করার কাজটা কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। এটা সদকায়ে জারিয়া। সদকায়ে জারিয়ার অনেক কিছু আছে।
তবে আলোকিত করার কাজটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সদকায়ে জারিয়া। নবী-রসুল, অলি-বুজুর্গ, মহামানবেরা এ-কাজ করেছেন। মানুষের জীবন থেকে অবিদ্যা দূর করেছেন। অবিদ্যা দূর করার কাজটাই হচ্ছে সবচেয়ে পুণ্যের কাজ।
এ-ছাড়াও আরো ভালো কাজ আছে। ধরুন, আপনি একটা পানির টিউবওয়েল বসালেন। এই টিউবওয়েল থেকে যতদিন মানুষ পানি খাবে তত দিন আপনার পুণ্য হতে থাকবে। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যতদিন থাকবে এবং এখান থেকে শিক্ষার আলো, জ্ঞানের আলো বিকিরণ হতে থাকবে তত দিন পর্যন্ত এটার সওয়াব পাবেন।
অর্থাৎ ভালো কাজের প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে থাকে। সেই কাজের সাথে যদি আপনি সংযুক্ত থাকেন, তো যতদিন ওই কাজ চলবে ততদিন পর্যন্ত আপনি সওয়াব পেতে থাকবেন।