ঘটনাবলি
১৯৯৯ : ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
জন্ম
১৯৩৬ : তারাপদ রায়, বাঙালি লেখক, কবি ও প্রাবন্ধিক।
১৯৫২ : রুনা লায়লা, বাংলাদেশি খ্যাতিমান গায়িকা।
মৃত্যু
১৯৩১ : বিখ্যাত বাঙালি ভারততত্ত্ববিদ, সংস্কৃত বিশারদ, সংরক্ষণবিদ ও বাংলা সাহিত্যেরইতিহাস রচয়িতা হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
১৯৭৩ : ঋষি অরবিন্দের শিষ্যা শ্রীমা।
১৯৭৬ :বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
১৯৮৩ : বিশিষ্ট নজরুলগীতি গায়িকা ও চিকিৎসক অঞ্জলি মুখোপাধ্যায়।
২০২০ : বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও চিন্তাশীল প্রাবন্ধিক অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ছিলেন বিখ্যাত বাঙালি সংস্কৃত বিশারদ, সংরক্ষণবিদ ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা। প্রকৃত নাম ছিল হরপ্রসাদ ভট্টাচার্য। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত রামচরিতম্ বা রামচরিতমানস পুঁথিরও সংগ্রাহক তিনি।
জন্মগ্রহণ করেন ১৮৫৩ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলার কুমিরা গ্রামে। আদি নিবাস ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার নৈহাটিতে। তাঁর পারিবারিক পদবি ছিল ভট্টাচার্য।
গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর হরপ্রসাদ কলকাতার সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৮৭১ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৭৩ সালে পাশ করেন ফার্স্ট আর্টস পরীক্ষা। ১৮৭৬ সালে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৮৭৭ সালে সংস্কৃতে সাম্মানিক হন। পরে এমএ পরীক্ষায় পাস করে তিনি ‘শাস্ত্রী’ উপাধি লাভ করেন। ওই পরীক্ষায় হরপ্রসাদই ছিলেন প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ একমাত্র ছাত্র।
সংস্কৃত কলেজে সংস্কৃত বিষয়ের ছাত্র হলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সিলেবাস অনুযায়ী হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে বিস্তৃতভাবে ইংরেজি সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, পলিটিক্যাল ইকোনমি, অ্যালজেব্রা-ট্রিগোনোমেট্রি পড়তে হয়েছিল। ফলে সংস্কৃতের সঙ্গে শিকড়ের যোগ বজায় রেখেও আধুনিক বিদ্যার বিভিন্ন শাখায় তিনি পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
১৮৭৮ সালে তিনি হেয়ার স্কুলে শিক্ষকরূপে যোগদান করেন। ১৮৮৩ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। এই সময়ই বাংলা সরকার তাঁকে সহকারী অনুবাদক নিযুক্ত করে। ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি বেঙ্গল লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিকের কাজ করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের সংস্কৃত বিভাগীয় প্রধান হন। ১৯০০ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯০৮ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে অবসর নিয়ে তিনি সরকারের তথ্যকেন্দ্রে যোগ দেন। ১৯২১ থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান। অধ্যাপনা ও সরকারি কাজের পাশাপাশি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দুই বছর এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, বারো বছর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি এবং লন্ডনের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য ছিলেন।
চর্যাপদের পুঁথি নিয়ে রচিত হরপ্রসাদের গবেষণাপত্র হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহা নামে প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে। তিনি বহু প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছিলেন। রচনা করেছেন বহু গবেষণাপত্রও। তিনি ছিলেন খ্যাতনামা হিস্টোরিওগ্রাফার। তাঁর বিখ্যাত বইগুলো হলো বাল্মীকির জয়, মেঘদূত ব্যাখ্যা, বেণের মেয়ে (উপন্যাস), কাঞ্চনমালা (উপন্যাস), সচিত্র রামায়ণ, প্রাচীন বাংলার গৌরব ও বৌদ্ধধর্ম। উল্লেখযোগ্য ইংরেজি রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে মগধান লিটারেচার, সংস্কৃত কালচার ইন মডার্ন ইন্ডিয়া ও ডিসকভারি অফ লিভিং বুদ্ধিজম ইন বেঙ্গল ইত্যাদি।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বহু বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানের পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সম্মাননার মধ্যে ১৮৮৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন ফেলো মনোনয়ন; ১৮৯৮ সালে সরকারের দেওয়া সম্মান ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি (মহারানী ভিক্টোরিয়ার ৬০তম রাজ্যাঙ্কে প্রবর্তিত); ১৯১১ সালে ‘সিআইই’ উপাধি; ১৯২১ সালে ইংল্যান্ডের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির অনারারি মেম্বার মনোনয়ন; ১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডি.লিট এবং ১৯২৮ সালে পঞ্চম ওরিয়েন্টাল কনফারেন্সের (লাহোর) মূল সভাপতি।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯৩১ সালের ১৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত