এপিজে আব্দুল কালাম তাকে মিসাইলম্যান বলা হয়। তিনি আসলেই মিসাইল হয়ে গেছেন। কীভাবে? ভাবনায়। মাঝির ছেলে ছিলেন কিন্তু সেই কিশোর বয়সে যে না আমি মাঝি হয়ে সাগরে মাছ ধরব না।
নিজের সম্ভাবনাকে তিনি বুঝেছিলেন যে, না আমাকে বড় কিছু করতে হবে। বড় কিছু করতে হলে পড়াশোনা করতে হবে। হকারি করেছেন নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করার জন্যে। লেখাপড়া করতে করতে তার স্বপ্ন হলো যে তিনি বৈমানিক হবেন, কিন্তু ১২ জনকে নেয়া হবে। তিনি পরীক্ষায় হলেন ১৩ তম। বৈমানিক হতে পারলেন না।
আরে উনি যদি ১২-এর মধ্যে পড়ে যেতেন তো উনি বিমান চালিয়ে জীবন শেষ করে ফেলতেন। কিন্তু তার জন্যে বড় কিছু আরো অপেক্ষা করছে। তিনি অ্যারোনটিকেল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলেন। এবং সেখান থেকে মিসাইলম্যান। মিসাইলম্যান হওয়ার চেয়েও তারপরে হলেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার চেয়েও তিনি হয়েছিলেন একজন মানুষ। ভালো মানুষ।
আসলে জীবনে এই যে, না! সামথিং বিগ, বড় কিছু করার জন্যে আমার জন্ম হয়েছে- এই ভাবনাটা যখন বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়, কেউ এটা আটকিয়ে রাখতে পারে না। এবং উনি ভালো মানুষ হতে চেয়েছিলেন এবং সেই দিক থেকে তিনি একজন সার্থক মানুষ। একজন তৃপ্ত মানুষ।
তিনি মারা গেলেন ৮৪ বছর বয়সে। কিন্তু জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তরুণদেরকে নিয়ে ভেবেছেন এবং তরুণদেরকে উজ্জীবিত করার জন্যে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং তরুণদের সমাবেশে তাদেরকে উজ্জীবিত করতে গিয়ে মিসাইলের মতোই জীবন বেরিয়ে গেল। মুহূর্তে হাইপারসনিক মিসাইল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্ট দেয়ার কোনো সুযোগ পাওয়া গেল না। সবসময় সরল জীবনযাপন করতেন।
এই ঘটনা সবারই জানা দুটো স্যুটকেস নিয়ে ঢোকা এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে দুটো স্যুটকেস নিয়ে বেরিয়ে আসা। অনেক বড় কলিজা লাগে লোভকে সংবরণ করা লাগে, কত সব উপঢৌকন, কত সব উপহার। উনি বললেন যে, না। এগুলো ভারতের রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়েছে, এগুলো আমাকে দেয়া হয় নি।
উনি যখন জানতে পারলেন যে রাষ্ট্রপতি হলে সারাজীবন নাকি পেনশন পাওয়া যায়। যা জীবনের সঞ্চয় ছিল বুড়ো বয়সের জন্যে সব বিতরণ করে দিলেন। এবং ওনার উপদেশ বয়স্কদের প্রতি যে, কখনো সম্পত্তি বিতরণ না করে, ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা না করে মারা যাবেন না। মারা যাওয়ার আগে সব ভাগ-বাটোয়ারা করে দেবেন। ভাগ-বাটোয়ারা যদি না করেন আপনার এই সম্পত্তি আপনার সন্তানদের বিরোধের কারণ হবে।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও বাসে উঠে চলাচল করতেন। সাধারণ মানুষের মতো লাইনে দাঁড়াতেন।
তিনি মৃত্যু কী কামনা করেছেন? একজন সুপারম্যান, একজন ভালো মানুষ, একজন অনন্য মানুষ, তার মৃত্যুকামনা কী হওয়া উচিৎ? এপিজে আব্দুল কালাম খুব সুন্দরভাবে বলেছেন one is blessed, who can die working, standing tall without any long drawn ailing. Goodbyes should be short, really short’,” উনি শর্ট না রিয়েলি শর্ট না শর্টেস্ট। দাঁড়ানো থেকে পড়ে গেলেন এবং মারা গেলেন।
অর্থাৎ একজন মানুষ যা চায়, যা বিশ্বাস করে সেই চাওয়াটা যদি তার বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয় এরকম হয়- কথা বলতে বলতে একটা বাক্য শেষ করেছেন, ব্যস মারা গেছেন পড়ে গেছেন। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও কোনো লাভ হয় নাই। কারণ উনি শর্ট চেয়েছিলেন। বিদায়টা সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিৎ।
আসলে এই যে কাজ করতে করতে মৃত্য একজন কর্মী তার মৃত্যু হওয়া উচিত কাজ করতে করতে এবং সেটাই শহীদী মৃত্যু যে যে কাজ করে সেই কাজ করতে করতে মৃত্যুই হচ্ছে শহীদী মৃত্যু। এর চেয়ে বেটার ডেথ আর কিছু হতে পারে না।
যে-রকম আমাদের বন্ধু ছিলেন ফিরোজ সাঁই এক মিনিটের নাই ভরসা গান গাইতে গাইতে মারা গেলেন স্টেইজে। ওয়েল এর চেয়ে ভালো মৃত্যু কি হতে পারে! একজন গায়কের জন্যে এবং তার একটা অনুরোধ ছিল যে তার মৃত্যুর পরে যেন কী করা হয় না? কোনো ছুটি ঘোষণা করা না হয়। বরং তিনি বলেছিলেন যে আমার মৃত্যুর পরে যারা আমাকে পছন্দ করো তারা অতিরিক্ত একদিন ছুটির দিনে অতিরিক্ত কাজ করবে।
অর্থাৎ একজন মানুষ জীবনকে কত ভালবাসতেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো মানে হচ্ছে জীবনকে ভালবাসা। তো আসলে যিনি যে-রকম বাসবেন তিনি সে-রকম করবেন, তিনি সে-রকম হবেন।
[প্রজ্ঞা জালালি, ০৫ অক্টোবর ২০২৪]