নিশ্চয়ই সম্ভব। প্রাচুর্যের ব্যাপারে আমাদের মৌলিক ভ্রান্তি হচ্ছে, আমরা একে অতিরিক্ত প্রাপ্তি মনে করি। স্বাভাবিক অধিকার মনে করি না। অথচ প্রাচুর্য হচ্ছে প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। প্রতিটি মানুষ প্রাচুর্যের উৎসভান্ডার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কর্ম ও দৃষ্টিভঙ্গি তাকে প্রাচুর্যবান রাখে অথবা নিঃস্ব করে।
একটি শিশুর কিন্তু কোনো অভাব নেই। সে সবসময় হাস্যময়। যা পাচ্ছে, যতটুকু পাচ্ছে তাতেই সে তৃপ্ত। তার কোনো অভাববোধ নেই। কিন্তু সেই শিশু প্রাচুর্যবান থাকতে পারে, আবার নিঃস্বও হয়ে যেতে পারে যদি তার কর্ম এবং দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক না হয়।
প্রাচুর্যবান হওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে মেধাকে সেবায় রূপান্তরিত করা। এ প্রসঙ্গে মার্কিন ধনকুবের হেনরি ফোর্ডের একটি উক্তি উল্লেখযোগ্য —’Wealth like happiness is never attained when sought after directly. It always comes as a by-product of providing a useful service’. অর্থাৎ সম্পদ আসে সবসময় বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে। যখন প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া যায়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই সম্পদ অর্জিত হয়।
যারা প্রবীণ আছেন, ঢাকায় থাকলে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, এখন থেকে ৪০ বছর আগে নবাবপুর রোড দিয়ে হাঁটা যেত না। ঘটনা কী? লাইন দিয়ে লোকজন সাবান কিনছে। কী সাবান? পচা সাবান। নামে পচা হলেও কাজে অন্য সাবানের চেয়ে ভালো। আর তা কেনার জন্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লাইন দিয়ে থাকত মানুষ।
যে একবার কিনেছে সে আবার যেত কেনার জন্যে। আশেপাশে আরো কয়েকটি সাবানের কারখানা থাকলেও ক্রেতারা এখানেই ভিড় করত। কারণ তাদের সাবান ছিল গুণে-মানে ভালো। কাপড় পরিষ্কার হতো। দামও যুক্তিসঙ্গত। যা অন্য সাবানে ছিল না। যেহেতু তারা সেবা দিতে শিখেছিল, তাই এই কারখানার মালিকের প্রাচুর্যও এসেছে স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায়।
মেধাকে সেবায় রূপান্তরের আরেকটি উদাহরণ টাটা গ্রুপ। প্রথমে টাটার শুধু লোহা ছিল। এখন লোহা বা গাড়ি না, লবণ থেকে শুরু করে চিনি চা খাবার আটা সব আছে। টাটারটা খেয়ে, টাটায় চড়ে, টাটারটাতে ঘুমিয়ে, টাটায় পরে আপনি মারা যেতে পারবেন। যত সেবা বাড়ছে, তত সম্পদ বাড়ছে। অর্থাৎ সম্পদশালী বা প্রাচুর্যবান হওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে—মেধাকে সেবায় রূপান্তরিত করা।
আসলে সেবক মানেই দাতা, যিনি সেবক হয়েছেন, তার প্রাচুর্যের কোনো অভাব হয় না। হতে পারে না। অতএব আপনি আপনার মেধাকে সেবায় রূপান্তরিত করুন। আপনি প্রাচুর্যে অবগাহন করবেন।