1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:০৩ অপরাহ্ন

সাহসীরা সৌভাগ্যের বরপুত্র

  • সময় রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৪৮৫ বার দেখা হয়েছে

অধিকাংশ মানুষ যখন ব্যর্থ হয় তখন সে বলে যে আমার কপালে ছিলো না, আমার দূর্ভাগ্য-পোড়াকপাল। সত্যি বলতে কাজটি করার সাহস যে তার ছিলো না একথাটি বলার মতো সাহস তার নেই। আসলে অসফল এবং ব্যর্থরা সবসময় এভাবেই তাদের ভাগ্যকে দোষারোপ করে। উল্টো দিক থেকে আমরা যদি বলি ভাগ্য সাহায্য করে সাহসীদের। কেন বলছি এ কথা! কারণ ইতিহাস বলে ভাগ্যই আসলে সাহসীদের সাহসী করে। সাহসীরাই হচ্ছে সৌভাগ্যের বরপুত্র বা বরকন্যা।

সাহসীরাই তাদের ভাগ্য গড়তে পারে সফল হতে পারে। আগে তাহলে বলি সাহস বিষয়টা কি? এটা নিয়ে একটি মজার গল্প আছে- দর্শণের অধ্যাপক তিনি ছাত্রদের ক্লাস টেস্ট নিবেন। ক্লাসে এসে বোর্ডে শুধুমাত্র একটি প্রশ্নই লিখে দিলেন। প্রশ্নটি ছিলো- সাহস কী? একঘন্টা সময়ের মধ্যে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পুরো ক্লাসে জুড়ে থমথমেভাব। সবাই খুবই চিন্তিত। হঠাৎ পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটি ছেলে খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে গেল। টিচার খাতাটি হাতে নিয়ে পড়লেন, নিজে নিজে হাসলেন এবং ছাত্রটিকে ফুল মাকর্স দিয়ে দিলেন। সেই খাতাটিতে কেবল একটাই বাক্য লেখা ছিলো “স্যার! এটাই সাহস”। আসলে যারা সাহসী ভূমিকা পালন করতে পেরছেন তারাই সফল হয়েছেন। তারাই সৌভাগ্যকে আকৃষ্ট করেছেন। আমরা যদি আমাদের জীবন পরিক্রমার বিভিন্ন পর্যায়ে লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাবো জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুযোগ সবসময় খুব আস্তে করে দরজায় টোকা দেয়। যে সাহস করে এগিয়ে যায় সে সুযোগকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করতে পারে এবং নতুনভাবে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। যেকোনো বিষয়ে আপনি যখন ঝুঁকি নেয়ার সাহস করবেন আপনি সফলতা পাবেন। তাই ইংরেজিতে একটা কথা আছে, No risk no gain. Risk takers are the braver & they are the winner.

বিশ্ববিখ্যাত প্যানাসনিক করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা কনসুকি মাতসুশিতার জীবন শুরু থেকে যদি পর্যালোচনা করি তবে দেখবো, তিনি জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালে পশ্চিম জাপানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। জুয়াড়ি বাবার অপরিণামদর্শিতার ফলে সবকিছু খুইয়ে পরিবারটি যখন পথে বসতে যাচ্ছিলো তখন ৮ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ৯ বছর বয়সী মাতসুশিতা বাইসাইকেলের দোকানে ফুটফরমাশের কাজ করে পরিবারের হাল ধরেন । কিছুদিনের মধ্যেই সেটি ছেড়ে যোগ দেন ওসাকা লাইট কোম্পানিতে। দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার কারণে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টরের পদে উন্নীত হলেও স্বপ্ন ছিলো তার আরো বড়। ভাবনা ছিলো মানুষকে কীভাবে আরো সেবা দেয়া যায়। উদ্ভাবন করলেন নতুন এক ধরনের লাইট-সকেট, প্রচলিতগুলোর চেয়ে যা অনেক ভালো। কিন্তু মালিক এ নতুন ধরনের লাইট-সকেট উৎপাদনে রাজী হলেন না । অগত্যা বল বল আপন বল। সাহস করে চাকরি ছেড়ে দিলেন। স্ত্রী এবং তিনজন মাত্র সহকারীকে নিয়ে মাতসুশিতা শুরু করলেন তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। অর্থ নেই, ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা নেই এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বা ইলেকট্রিক বাল্ব উৎপাদনে কোনোরকম অভিজ্ঞতা নেই এমন সহকারীদের নিয়ে একটানা কয়েক মাস কাজের পর তারা সফল হলেন। উনার মৃত্যুর সময় ২০ হাজার কর্মীসহ তার প্রতিষ্ঠান ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ইলেকট্রনিক কোম্পানি। শুধুমাত্র সাহস করেছিলেন বলেই শূন্য থেকে পৃথিবীর অন্যতম লাভজনক প্রতিষ্ঠানের মালিক হন এবং এত লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন।

প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম তার ছোটবেলা থেকেই ডাক্তারী পড়ার স্বপ্ন ছিলো। আইএসসি রেজাল্টের পর কলকাতায় এসে শোনেন মেডিকেল কলেজে ভর্তির ফরম নেয়ার তারিখ শেষ। গুরুজনেরা তাকে পরামর্শ দিলেন বি এ পড়তে। কিন্তু তিনি দমে যান নি। সচিবের সাথে দেখা করতে সেক্রেটারিয়েটে গেলেন কিন্তু কোনো লাভ হলো না। সৎ সাহস আর মানসিক দৃঢ়তার অধিকারী ডা. নুরুল ইসলাম সাহস করে চলে গেলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের ইংরেজ অধ্যক্ষ্যের সাথে দেখা করতে। তাঁকে সবকিছু খুলে বলতেই তিনি সচিবকে ডেকে তাঁকে ফর্ম দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। তিনি বলছিলেন যে, প্রয়াত ‘এ ঘটনা থেকে আমি শিক্ষা নিলাম যে, সৎ প্রচেষ্টা সফলতা আনে। সেদিন নির্ভয়ে এগিয়ে না গেলে জীবন হয়তো অন্যরকম হতো।’’

আরেকজন সাহসী ব্যক্তি বিজ্ঞানী ড. লস্কর মো. কাশিফ তিনি ছোটবেলা থেকেই কোনো পরীক্ষায় কখনো দ্বিতীয় হন নি। অসাধারণ মেধাবী কাশিফ বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে দেশের অনেক স্কুলে পড়লেও প্রথম স্থান ধরে রাখতেন। দশম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করার পর একটি দুর্ঘটনায় মানসিক জটিলতায় আক্রান্ত হন। এরপর তিনবছর লেখাপড়া থেকে দূরে থাকেন। সবাই যখন প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলো, সে সময় কোয়ান্টাম মেথড কোর্স করে মনের জট থেকে মুক্তি লাভ করেন ও পুনরায় লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। এসময় তিনি মাধ্যম পরিবর্তন করে ইংরেজী মাধ্যমে চলে যান ও জীবনের নতুন লক্ষ্য ঠিক করেন। ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় সবকটি বিষয়ে’এ’ গ্রেড লাভ করে পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে বিশ্বখ্যাত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ও হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সুইজারল্যান্ডের সার্ন গবেষণাগারে হিগস বোসন বা ঈশ্বর পার্টিকেল ওপর গবেষণা করছেন। হঠাৎ করে বাংলা মাধ্যম থেকে ইংরেজি মাধ্যমে আসা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কিন্তু তিনি সেই ঝুঁকি গ্রহণের সাহস করেছিলেন বলে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি।

আমাদেরই এক কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় কুয়েতে আটকা পড়লেন। দেশে ফেরার চরম অনিশ্চয়তা। এয়ারপোর্টের পাশে তাঁবু করে তাঁরা কয়েকশ বিদেশী থাকছেন। এরই মধ্যে খবর এলো যে একটা ফ্লাইট যাচ্ছে। তো সবাই এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলেন। কিন্তু প্লেনের ধারণক্ষমতা সীমিত। অপেক্ষা করতে হবে, কিন্তু কতক্ষণ কেউ জানে না। তিনি লনে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখলেন যে, এত মানুষ, সেই তুলনায় সেবা দেয়ার লোক অপ্রতুল। কাউন্টারের লোক কাজ করে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এমন সময় এক আরব অফিসার এসে জিজ্ঞেস করলেন যে, ’’তোমাদের মধ্যে কেউ বোর্ডিং পাস ইস্যু করার কাজ জানো?’’ কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট কোনোদিন এ কাজ করেন নি, এমনকি এ কাজ সম্পর্কে কোনো ধারণাও তাঁর ছিলো না। কিন্তু তিনি বললেন, ‘‘আমি পারি।’’ কাউন্টারে গিয়ে দেখেন সেখানে কাজ করছেন এক জাপানি যে ইংরেজীও তেমন বোঝে না। তবু তিনি অল্প অল্প যা বোঝেন তার সাহায্যে কাজ সারলেন, তার নিজের সিট কনফার্ম করলেন, তার সাথে থাকা ১০০ জন বাঙালি নিয়ে তিনি সময়মতো দেশে ফিরে এলেন। তিনি যদি সাহস না করতেন, যদি ভাবতেন, কোনোদিন করি নি, কীভাবে করবো, ভুল হয় যদি, থাক ! তবে কি এমনটি হতো ? তিনি সাহস করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং অন্যদের নেতৃত্ব দিয়ে দেশে ফিরে এলেন।

একইভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো আমাদের জাতিগতভাবে সাহসী হবারই পুরস্কার। যে কারণে ঢাল তলোয়ার প্রশিক্ষণ সেনাবাহিনী কিছুই নেই, শুধুমাত্র বিশ্বাসে ভর করে সাহসের সাথে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম বলেই আমরা স্বাধীন হতে পেরেছিলাম। আসলে সাহসীরাই নির্মাণ করে, সাহসীরাই অন্যের পথ তৈরি করে। সাহসীরাই নেতৃত্ব দিতে পারে। আজ থেকে ২০ বছর আগে মেডিটেশন যে বাংলাদেশে জনপ্রিয় হবে এটা কেউ বিশ্বাস করতে পারে নি। মানুষ টাকা দিয়ে কথা শুনতে আসবে এবং বসে বসে চোখ বন্ধ করে ধ্যান করবে এমন কথা অনেকেই চিন্তা করতে পারে নি। আমরা সাহস করে বিশ্বাসের কথা বলছি, নিঃসঙ্কোচে মেডিটেশনের উপকারিতার কথা বলেছি।

আজ কোয়ান্টাম এবং মেডিটেশন সমার্থক নাম হয়ে গিয়েছে। মেডিটেশন বললেই লোকজন কোয়ান্টামকে বোঝে। ফাউন্ডেশনের যে চিন্তা স্ব-উদ্যোগ, স্বপরিকল্পনা এবং স্ব-অর্থায়নে কাজ করার সেটিও সাহসের এক চমৎকার দৃষ্টান্ত। আমরা আমাদের কাজের উদ্যোগ নিজেরা নিই, নিজেরা পরিকল্পনা করি এবং অর্থায়নও হচ্ছে নিজেদের ব্যবস্থাপনায়। কোনো সরকারি বা বেসরকারি বা বিদেশী আর্থিক সহায়তা ছাড়া। এই রকম প্রতিষ্ঠান শুধু দেশে কেন পৃথিবীতেও বিরল। যারা সাহসী হতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে বাধাগুলো কী?

সাহসী হওয়ার পেছনে যে বিষয়টি আমাদের সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্থ করে তা হলো নেতিবাচক চিন্তা বা অহেতুক ভয়। আমাদের অবস্থা অনেকটা সার্কাসের হাতির মতোই। আসলে আমরা নেতিবাচকতার মধ্যে এমনভাবে ডুবে গেছি যে, সাফল্য আসলেও তা সাহসের সাথে উপভোগ করতে পারি না। যদি সাফল্য না আসে, যদি না পারি তাহলে কী হবে ইত্যাদি। আপনি যখন মনে করছেন আপনি পারবেন না তখন যুদ্ধে নামার আগেই আপনি পরাজয় বরণ করে নিলেন। আসলে যে যেটা অন্তর থেকে কামনা করে সেটি অর্জনের জন্যে প্রয়োজনে সাহস করে পথে নামে এবং রক্তকে ঘাম করে ঝরতে দেয় স্রষ্টা তার স্বপ্ন পূরণ করেন।

পবিত্র কোরআনের সূরা নজমের ৩৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, Man can have nothing what he strives for. মানুষ আসলে তা-ই পায় যার জন্যে সে প্রচেষ্টা চালায়। সফল হতে হলে নেতিবাচকতার শেকড় জীবন থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। জীবন আসলে কুসুমাস্তীর্ণ নয়। প্রতিকূলতা বা বিরুদ্ধ পরিবেশের মুখোমুখি হবে না এমন কোনো জীবন নেই। তাই সাহসী হতে হলে যে কাজ অন্যেরা এড়িয়ে চলছে, ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে আপনি সে কাজ আগ্রহ ভরে হাত বাড়িয়ে দিন। যদি তা আপনার এবং মানবতার জন্যে কল্যাণকর হয়। যখন কোনো কাজ সাহসের সাথে সম্পাদন করলেন তখন সাফল্যের অনুরণন অনুভব করুন। সাহসের ভান করুন ভান করতে করতেই আপনি সাহসী হয়ে উঠবেন। কথায় বলে, সূর্যের দিকে তীর মারলে তা অন্তত বড় গাছের মগডালে গিয়ে লাগবে।

লক্ষ্য যত বড় হবে তত ভেতর থেকেই সাহসী হবার অনুপ্রেরণা পাবেন। আপনার লক্ষ্যই আপনাকে সাহসী হতে সহায়তা করবে তাছাড়া ব্যর্থতার চিন্তাকেও ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। সাহসী হওয়ার জন্য সবচেয়ে যে বিষয়গুলো প্রয়োজন তা হলো আত্মবিশ্বাস ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। আর আত্মবিশ্বাসী ও প্রজ্ঞাবান হওয়ার জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করতে পারে মেডিটেশন। কারণ মেডিটেশনে মনের গভীরে আমরা আত্মনিমগ্ন হয়ে নিজের মেধা সম্পর্কে সচেতন হতে পারি, নিজের করণীয় ঠিক করতে পারি। তাই মেডিটেশনে নিয়মিত মনছবি দেখুন, অটোসাজেশন দিন।

সৎ সঙ্ঘে একাত্ম থাকলে আমাদের পক্ষে সাহসী হওয়া সহজ হয়। কারণ সৎ সঙ্ঘের সদস্যরা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দেন সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে। আসলে সফল হবার শক্তি আমাদের সবার মধ্যেই রয়েছে। দুঃখকষ্ট, অভাব নামক মনোজাগতিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আমরা আমাদের এ শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি না। যারা বিশ্বাস করেছেন এবং সাহস সৃষ্টি করতে পেরেছেন তাঁরাই পেরেছেন নিজেদের ভাগ্যকে বদলাতে। তাই সাহস করুন, কারণ পৃথিবী সাহসী মানুষের জন্যে। পরম প্রভু আমাদের সবাইকে সাহসী হবার তৌফিক দান করুন।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com