প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২২
‘স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের অভিনন্দন। আমরা মুক্তিযুদ্ধে অনেক বীর দেখেছি। কিন্তু যারা রক্তদাতা তারা হলেন মানবিক বীর। রক্তদানের মাধ্যমে নীরবে তারা দেশের মানুষের উপকার করে যাচ্ছেন। যখন মানুষ রক্তের জন্যে বিপদে পড়ে, তখন সে অনুভব করতে পারে সেটা কত কঠিন বিপদ। স্বেচ্ছা রক্তদান অনেক বড়, অনেক মহৎ একটি কাজ।’
১৪ মার্চ ২০২২ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ আইডিইবি মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং মহান স্বাধীনতার মাস উপলক্ষে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত রক্তদাতা সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, এমপি।
রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে চার শতাধিক স্বেচ্ছা রক্তদাতাকে সম্মাননা জানায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। সম্মাননাপ্রাপ্ত রক্তদাতার মধ্যে কমপক্ষে ৩ বার রক্তদান করেছেন ২৫৫ জন, ১০ বার রক্তদান করেছেন ১৩৪ জন এবং ২৫ বার রক্তদান করেছেন ৩৬ জন এবং ৫০ বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন চার জন। এসময় স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের হাতে সনদপত্র, বিশেষ আইডি কার্ড ও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন পাটমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, যখন হাসপাতালে কোনো রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয় বা আত্মীয়-স্বজন পাওয়া গেলেও রক্তের গ্রুপ মিলছে না, তখন ডাক্তারদের বলতে শুনেছি কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে রক্ত আনবেন। এই যে ডাক্তাররা কোয়ান্টামের কথা বলে, এটা অনেক বড় একটা সুনাম। এই সুনাম যেন অটুট থাকে। স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির এই আয়োজনের জন্যে কোয়ান্টামকে ধন্যবাদ। যারা রক্ত দেয় তারা মানবিকভাবে দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
রক্তদাতাদের উৎসাহ দিয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী আরো বলেন, ‘রক্তদান শুরু করাটা একটা অভ্যাসের ব্যাপার। অভ্যাস হয়ে গেলে নিয়মিত রক্তদান মানবিক কাজের চমৎকার একটি মাধ্যম হয়ে যায়। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সেবামূলক কাজের পাশাপাশি রক্তদানের মাধ্যমে সেই প্লাটফর্মই তৈরি করে দিচ্ছে। তারা আসলে দেশের জন্যেই কাজ করে যাচ্ছে। দেশের মানুষের কল্যাণেই কাজ করে যাচ্ছে। একটা দেশ এগোতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। এভাবে সবার সহযোগিতায় আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।’
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এই মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণা করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। দেশ স্বাধীন না হলে আমরা এত সুন্দরভাবে আজ এখানে অনুষ্ঠান করতে পারতাম না। কে কোথায় থাকতাম সেটাও জানি না। পাকিস্তান আমলে কী অবস্থায় ছিলাম! এমন একটা প্ল্যাটফর্ম করারও সামর্থ্য ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ায় আমরা সেটা পেরেছি।’
অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের পক্ষে অনুভূতি বর্ণনা করেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব এ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের চাইল্ড ডেভলপমেন্ট এন্ড সোশ্যাল রিলেশনশিপ বিষয়ে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজিয়া ফারহানা অনন্যা এবং নিয়মিত রক্তগ্রহীতাদের মধ্য থেকে অনুভূতির কথা জানান থ্যালাসেমিয়া রোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্নকারী রাকিবুল ইসলাম রুশো।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোটিভেশন জনাব এম রেজাউল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক মাদাম নাহার আল বোখারী। রক্তদাতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন—‘জীবনের মূল্যবান অংশ দিয়ে আপনারা মানবতার কল্যাণে এগিয়ে এসেছেন। কোয়ান্টাম স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ হবে এক মানবিক মহাসমাজ, মানবিক দেশ—স্বপ্ন পূরণের সেই মানবিক কাজটিই করছেন আপনারা’। নিয়মিত রক্তদাতাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে দেশের রক্তের চাহিদার ঘাটতি মেটানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় আট লক্ষ ব্যাগ নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের চাহিদা রয়েছে। রক্ত ঘাটতির বিপুল এ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই ১৯৯৬ সাল থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কোয়ান্টাম। গত দুই দশকের প্রচেষ্টায় ১৩ লক্ষাধিক মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।