২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০৩৫ সালের মধ্যে এটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে এমন চিত্র দেখা যাবে।
শুক্রবার ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিইবিআর। এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সিইবিআর প্রতি বছরই এই রিপোর্ট প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে সাত বছর পর চীন হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আর ২০৩০ সালে ভারত হবে তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। তবে সিইবিআর-এর হালনাগাদ রিপোর্ট বলছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বহু ধাপ ওপরে উঠে পৌঁছে যাবে ২৫ নম্বরে।
করোনাভাইরাসের মধ্যেও যেহেতু বাংলাদেশ কিছুটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে, তাই সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধারাবাহিক ও জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে।
২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৯ ডলার। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন একটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।
২০২০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। এর মানে দাঁড়ায় এখানকার নিয়ামক পরিবেশ একটি সমৃদ্ধ বেসরকারি খাতের অনুকূল নয়। ২০১৬ সালে এ র্যাংকিং ছিল ১৭৩তম।
করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
সিইবিআর-এর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২১ সাল হতে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটবে গড়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। তবে এর পরের ১০ বছরে এই হার কিছুটা কমে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হবে।
সিইবিআর বলছে, ২০২০ হতে ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি আছে ৪১ নম্বরে। কিন্তু ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ হবে ২৫তম অর্থনৈতিক শক্তি।
২০২০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৯ ডলার। এটি পিপিপি বা পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি হিসাবে নিয়ে করা। বাংলাদেশকে এখন একটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ বলে গণ্য করা হয়।
সিইবিআর-এর সূচক অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতিতে এখনো এক নম্বর শক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে চীন এবং জাপান। প্রথম দশটি দেশের তালিকায় এরপর ক্রমান্বয়ে আছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ভারত, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা এবং কোরিয়া।
২০৩৫ সাল নাগাদ এই প্রথম দশটি দেশের তালিকা থেকে ঝরে যাবে ইতালি, কানাডা এবং কোরিয়া। তাদের স্থলে প্রথম দশটি দেশের তালিকায় ঢুকবে ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল ও রাশিয়া।
২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায় যুক্ত হবে তিনটি নতুন দেশ: ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভিয়েতনামের অবস্থান হবে ১৯, ফিলিপাইনের ২২ এবং বাংলাদেশের ২৫।
২৫টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের সূচক
বাংলাদেশের উত্থানকেই সবচেয়ে নাটকীয় বলতে হবে। বর্তমান র্যাংকিং ৪১ থেকে বহু দেশকে টপকে বাংলাদেশ পৌঁছাবে ২৫ নম্বরে।
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৪১। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ৩৪। এর পাঁচ বছর পর ২০২৩০ সালে বাংলাদেশ হবে ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০৩৫ সালে ঢুকবে প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায়।
যেসব অর্থনীতিকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে তার মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, ইসরায়েল, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নাইজেরিয়া, বেলজিয়াম, সুইডেন, ইরান এবং তাইওয়ান। বর্তমান বিশ্ব সূচকে এই দেশগুলো বাংলাদেশের উপরে। কারণ তাদের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে বড়।
এই সূচক তৈরি করা হয় কেবলমাত্র কোন দেশের অর্থনীতির জিডিপির আকার দিয়ে। মানুষের মাথাপিছু আয় বা জীবনমান এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। আর বাংলাদেশ যেহেতু খুবই জনবহুল একটি দেশ এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ জনসংখ্যা আরও বাড়বে, তাই পেছন ফেলে যাওয়া দেশগুলোর তুলনায় অনেক দিক থেকেই বাংলাদেশের মানুষের জীবন মানে তখনও অনেক পার্থক্য থাকবে।
সূত্র: বিবিসি, সিইবিআর।