1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন

স্বপ্নদ্রষ্টা বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল কাদের এবং তার দেশ গার্মেন্টস |

  • সময় সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৩৩০ বার দেখা হয়েছে

মোহাম্মদ নুরুল কাদের (২ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ – ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮) একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সচিব, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংস্থাপন সচিব, উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশে শতভাগ-রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস শিল্পের জনক ছিলেন।  ১৯৭৬ সালে তিনি উদ্যোক্তা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।

আজ ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২১, দেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়াত জনাব নূরুল কাদেরের ২৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী। ১৯৯৮সালের এদিনে তিনি আমাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান। কিন্তু তাঁর কীর্তি আমাদের মাঝে আজও অম্লান,অক্ষয়।আজকের এ দিনে তাঁর স্মৃতিচারন এবং বিনীত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি।

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ যখন নিজেদের অর্থনীতির চাকা সচল করার দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলো সেই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সচিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোহাম্মদ নুরুল কাদের অগ্রনী ভুমিকা রাখেন। উনি ১৯৭৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর দক্ষিন কোরিয়ার দাইয়ু গ্রুপের সাথে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত করেন বাংলাদেশের প্রথম শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান “দেশ গার্মেন্টস”।

১৯৭৮ সালের ৪ জুলাই মূলত দেশ গার্মেন্টস ও দাইয়ু কর্পোরেশনের মধ্যে জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং তারা চাকা, চামড়াজাত পণ্য, সিমেন্ট ও তৈরি পোশাক (গার্মেন্টস) এই ব্যবসা গুলোর জন্য প্রস্তাবনা করেন কিন্তু জনাব নুরুল কাদের এসকল ব্যবসার মধ্যে এগিয়ে রাখেন তৈরী পোশাক উৎপাদন ব্যবসা। উনি ব্যক-টু-ব্যক এল.সি. এবং বন্ডেড ওয়্যারহাউজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি অগ্রনী ভুমিকা রাখেন যা এনে দিয়েছে বাংলাদেশ এর পোশাক রপ্তানি শিল্পকে আন্তর্জাতিক মান।

ব্যক্তিগত জীবনে বীরমুক্তিযোদ্ধা জনাব মোহাম্মদ নুরুল কাদের ছিলেন অত্যন্ত সফল এবং মেধাবী ব্যক্তিত্ব। উনি মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন শেষে ১৯৬১ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব মূহুর্তে উনি পাবনা জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং উনি কিছু সময় পাবনার মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করে পাবনা জেলাকে শত্রু মুক্ত রাখেন। উনার মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৯৯ সালে প্রকাশ করেন “একাত্তর আমার” নামক বই।

জনাব মোহাম্মদ নুরুল কাদের যখন ১৯৭৭ সালে দেশ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন তখন এই শিল্পের আন্তর্জাতিক মান এবং আন্তর্জাতিক উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে বাংলাদেশের শ্রমিক এবং মালিক কারোই সঠিক অভিজ্ঞতা ছিলোনা।

তাই উনি নিজ উদ্যোগে কোরিয়ান দাইয়ু গ্রুপের দাইয়ু ইনোভেশন সাউথ কোরিয়া ফ্যক্ট্ররি তে ১৩০ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ এর জন্য পাঠান যারা প্রায় ৬ মাস ওখানে থেকে পোশাক উৎপাদনের প্রায় সকল বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন।

যাঁরা দেশ গার্মেন্টস এর পথচলা সচল করেন এবং তাদের অনেকেই আজ পোশাকশিল্প মালিক। চট্রগ্রাম কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত দেশ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে মূলত শার্ট এবং পাশাপাশি অন্যান্য পোশাক উৎপাদন করতো কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র শার্ট উৎপাদন করছে। তারা তাদের ৮০ হাজার বর্গফুটের বিশাল কারখানায় প্রতিমাসে ২ লক্ষাধিক শার্ট উৎপাদনে সক্ষম।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার করে দেশ গার্মেন্টস আজ সফলতার সাথে তাদের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। ১৯৯৮ সালে জনাব মোহাম্মদ নুরুল কাদের মারা গেলে চরম অনিশ্চয়তায় পতিত হয় দেশ গার্মেন্টস এবং পরবর্তীতে ২০০৮ সালের উনার সুযোগ্য কন্যা ভিদিয়া আমৃতা খান বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে এসে দেশ গার্মেন্টস পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সফলতার সাথে তার বাবার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন।

১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯৯১ এর ঘূর্নিঝড়, যার কারনে মূল কারখানা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রায় ৫ বছর চট্রগ্রাম এর আগ্রাবাদে দেশ গার্মেন্টস এর অস্থায়ী উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

১৯৯৬ সালে মূল কারখানা বিনির্মাণ এর পর আবার সেই কারখানা সচল হয় যা আজ পর্যন্ত বিদ্যমান। ৪২ বছর ধরে চলমান এই শিল্পকারখানা বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মাননা অর্জন করেছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত জাতীয় পুরষ্কার, ইউরোপে ১৯৮৮ সালে বানিজ্যিক গুনগুন মানের জন্য গ্রান্ড প্রিক্স সম্মাননা। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এ নিবন্ধিত আছে।

মূলত ‘দেশ গার্মেন্টস’ বাংলাদেশ এর প্রথম রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হলেও সর্বপ্রথম বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি করে ‘রিয়াজ গার্মেন্টস’ কিন্তু পরবর্তীতে দেশ গার্মেন্টস সফল ভাবে নিয়মিত পোশাক রপ্তানি শুরু করে তাই প্রথম পোশাক রপ্তানি কারক ফ্যক্ট্ররি ‘রিয়াজ গার্মেন্টস’ হলেও মূলত প্রথম রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা হিসেবে বিবেচিত হয় ‘দেশ গার্মেন্টস’ এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল ডিরেক্টরি-২০০৭ এ দেশ গার্মেন্টস এর রেজিষ্ট্রেশন সিরিয়াল ‘১’ নং এ আছে।
পাকিস্তান আমলে এই দেশে মূলত পাট, কাগজ, চামড়া এবং বস্ত্র শিল্প প্রসিদ্ধ ছিলো কিন্তু বেশিরভাগ মালিক ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানিদের এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সরকার কারখানা গুলো জাতীয়করন করে নেয়।

একদিকে স্বাধীন হওয়া নতুন দেশ এবং অন্যদিকে সচল শিল্প কারখানার পরিচালনার দক্ষ ব্যবস্থাপনার ঘাটতি দেখা দেয়। এমন সময়ে জনাব মোহাম্মদ নুরুল কাদের সাহস এবং বিচক্ষণতা দেখিয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি পোশাক শিল্প কারখানা গড়ে তোলেন।

তিনি দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনীয় উপলব্ধি করে, সেসময়কার বেতন স্কেল থেকে বহুগুণ বেতন ধার্য করে মেধাবী প্রতিভাবানদের চাকুরী দিয়ে কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ দিয়ে এনে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের সুচনা করেন এবং তার মাধ্যমেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারমুখী হতে শুরু করে।

তার দেখানো পথে ধিরে ধিরে একের পর এক পোশাক শিল্প বাড়তে বাড়তে আজ চীনের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ এবং বর্তমান জাতীয় রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই অর্জিত হচ্ছে এই সেক্টর থেকে।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com