তো আমরা রসুলুল্লাহ (স) এর হাদিস উল্লেখ করে বলেছিলাম রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন যে রোগব্যাধি, মহামারি, বিপদ-আপদ বালা-মুসিবত যা কিছু আপনি চিন্তা করেন, এটা অবিশ্বাসীদের জন্যে হচ্ছে গজব, শাস্তি। আর বিশ্বাসীদের জন্যে এটা হচ্ছে পরীক্ষা।
ধরেন একটা বিপদ যখন আসে, সেটা ব্যক্তিজীবনে আসতে পারে, বিপর্যয় আসতে পারে, বালা-মুসিবত আসতে পারে যে-কারো যে-কারো জীবনে আসতে পারে।
আল্লাহর রসুল খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন অবিশ্বাসীদের জন্যে এটা হচ্ছে একটা গজব, শাস্তি।
আর বিশ্বাসীদের জন্যে এটা হচ্ছে একটা পরীক্ষা।
এবং বিশ্বাসীরা যখন এটাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে, পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করে; খেয়াল করবেন, ‘ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে’- তখন আল্লাহ তাকে বিজয়ী করেন, সফল করেন।
ধরেন মহামারি কাউকে ধ্বংস করে দেয়, কারো উত্থান ঘটায়।
আপনি দেখেন, হযরত ওমরের সময় যখন আরবরা সিরিয়ার কিছু কিছু অংশ জয় করলেন, বিশাল এলাকা তখনও রোমানদের।
এই যে সিরিয়া লেবানন, জর্ডান, প্যালেস্টাইন, মিশর, লিবিয়া এই যে ভূমধ্যসাগরের যে টার্কি পর্যন্ত এটা ছিল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মূল শস্যভাণ্ডার, মূল শক্তিভূমি রোমান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের। এবং তারা দেড় হাজার বছর এখানে শাসন করেছে।
আমরা এখন তো দেখি যে তারা আরবি ভাষাভাষী।
তারা কিন্তু আরবি ভাষাভাষী ছিল না। তারা রোমান ভাষাভাষী ছিল। রোমান এরিয়া এটা। টোটাল এরিয়াটা ছিল রোমের দখলে।
এবং রোম আসলে ইটালির রাজধানী হলে কী হবে? রোমান রাজধানী হলে কি হবে? তাদের মূল হিন্টারল্যান্ড মূল জায়গা ছিল ভূমধ্য সাগরের এই পাড়। এই জেরুজালেম থেকে শুরু করে এগুলো সব ছিল রোমান এরিয়া। ভাষাও রোমান ছিল।
ইটালিতে তো কিছু নাই। শস্য শ্যামল, ব্যবসা বাণিজ্য এশিয়াতে, সবকিছু এই জায়গায়।
যখন হযরত ওমর আবু ওবায়দাকে কমান্ডার ইন চিফ করে পাঠালেন তারা কিছু কিছু জায়গা দখল করেছিলেন। কিছু কিছু জায়গা মুক্ত করেছিলেন। যেরকম জেরুজালেম তারপরে হিমস এরকম কিছু শহর,
কিন্তু বিশাল এলাকা তখনো রোমানদেরই দখলে ছিল।
প্লেগ শুরু হলো। মহামারি প্লেগ।
এবং আবু ওবায়দা কোন মাপের সেনাপতি ছিলেন?
আবু ওবায়দা ওমরের চয়েস ছিলেন! যে ওমর মারা যাওয়ার পরে আবু ওবায়দা খলিফা হবেন। এইজন্যে ডেকে পাঠিয়েছিলেন আবু ওবায়দাকে। অর্থাৎ বুঝতে পারছেন মানে নেক্সট টু ক্যালিফ, খলিফার উত্তরাধিকার।
তখন অলরেডি প্লেগ আক্রমণ হয়েছে।
যেহেতু আবু ওবায়দাকে তিনি খলিফা করতে চাচ্ছিলেন, তাকে চিঠি পাঠালেন যে, তুমি চলে আস। ইমিডিয়েটলি তুমি মদিনায় রিপোর্ট করো।
আবু ওবায়দা খুব বিনয়ের সাথে রিফিউজ করলেন। যে আল্লাহর রসুল বলেছেন যে, যদি কোনো এলাকায় মহামারি দেখা দেয় যদি সে এলাকায় থাক তাহলে সেখান থেকে বেরোবে না। এবং যদি অন্য এলাকায় থাক তো অন্য এলাকা থেকে সেই এলাকায় যাবেও না।
এবং বললেন যে, আপনি চাইলে আমাকে ইমপ্লাইড হচ্ছে যে আমাকে বরখাস্ত করতে পারেন। ইমপ্লাইড।
কিন্তু যেহেতু আল্লাহর রসুলের নির্দেশ আমি জানি, আমি আমার সৈন্যদের রেখে আসব না। এবং বরখাস্ত করলেও … আমি আসব না। কারণ আল্লাহর রসুলের নির্দেশ হচ্ছে যে, জায়গা না ছাড়া।
কেন?
তিনি এটাকে নিয়েছেন পরীক্ষা হিসেবে! এবং শুধু তিনি না। মানে ফার্স্ট র্যাংকিং অল জেনারেলস যারা প্রথমসারির কমান্ডার ছিলেন, বড় অংশ মারা যান এই প্লেগে। কিন্তু তারা কেউ সৈন্যদের ছাড়া ছেড়ে আসেন নাই। তারা কেউ স্থান ত্যাগ করেন নাই।
একটা চিত্র।
আর রোমান জেনারেলস এবং কর্নেলসরা, ব্রিগেডিয়াররা- সব এলাকা ছেড়ে নিরাপদ দূরে তখন তো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ছিল। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল কনস্ট্যান্টিনোপল, এখন যেটা ইস্তাম্বুল। তারা সব ইস্তাম্বুলের দিকে চলে গেল।
ফলে কী হলো?
যেহেতু জেনারেলরা কর্নেলরা মেজররা সব চলে গেছে, সাধারণ সৈনিক কি থাকবে নাকি? সব চলে গেছে।
কিন্তু আরবরা যায় নি। খলিফার বাহিনীরা সেখান থেকে সরে নাই।
এবং স্থানীয় জনগণ দেখল যে, মানে মানে রোমানরা তো আমাদেরকে প্লেগের মধ্যে রেখে পালিয়ে গেছে!
এদের চেয়ে তো বরং এরা বেটার। এরা তো আমাদেরকে রেখে পালায় নাই।
এবং তারা পক্ষ পরিবর্তন করে ফেলল। বলল যে, না যারা আমাদেরকে মানে আশ্রয় দিতে পারবে রক্ষা সুরক্ষা দিতে পারবে তাদের সাথে থাকাটা ভালো।
এবং একই বিপদ, একই রোগ রোমানদের বিপর্যয়।
এবং পরবর্তী সময়ে যে রোমানরা আর যুদ্ধ করতে পারে নাই আরব বাহিনীর বিরুদ্ধে মূল রিজন হচ্ছে এটা। কারণ জনসমর্থন আর তারা পায় নাই। কারণ জনগণ ততদিনে পক্ষ পরিবর্তন করে ফেলেছে যে না এরা তো মানে ঠিক আছে।
এবং দেখেন ভাষা চেঞ্জ হয়ে গেল ধীরে ধীরে। সবকিছু চেঞ্জ হয়ে গেল।
কেন?
বিশ্বাসীরা ঐ বিপর্যয়টাকে ঐ বিপদটাকে গ্রহণ করেছিল পরীক্ষা হিসেবে। এবং পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হয়েছেন।
কারণ সাফল্যের মালিক তো আল্লাহ। পরীক্ষাও তিনি নেন এবং পাশ করাবেন না ফেল করাবেন- এটা তো তাঁর সিদ্ধান্ত।
আপনার প্রস্তুতি যদি ঠিক থাকে আপনাকে ফেল করানোর কোনো কারণ নাই।
কারণ তিনি দয়াময় মেহেরবান এবং সমস্ত অভাব থেকে তিনি মুক্ত। তাঁর কোনো অভাব নাই।
সবসময় মনে রাখবেন যে-কোনো ক্রাইসিস, সংকট! আপনাকে বের করতে হবে কাজ। যে এই সময়ে আপনি কী কাজ করতে পারেন মানুষের কল্যাণে।
আপনি যদি কাজ বের করতে পারেন, আপনার জন্যে ক্রাইসিসটা হচ্ছে অপরচুনিটি। আর যদি বসে থাকেন তো ক্রাইসিসটা হচ্ছে আপনার জন্যে গজব। তার মানে আপনি নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন।
[আর্ডেন্টিয়ার ওয়ার্কসপ, ২৯ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ৩০ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত]