1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

আমাদের সমাজে পুরুষদের যখন বলতে শুনি, ‘আরে আমাদের নবীজী ১০টি বিয়ে করেছিল। কাজেই আমরা তিন-চারটি বিয়ে করলে সমস্যা কী?

  • সময় রবিবার, ২ মে, ২০২১
  • ৭৬০ বার দেখা হয়েছে

আমাদের সমাজে পুরুষদের যখন বলতে শুনি, ‘আরে আমাদের নবীজী ১০টি বিয়ে করেছিল। কাজেই আমরা তিন-চারটি বিয়ে করলে সমস্যা কী? ছেলেরা বিয়ে করতেই পারে’-তখন খুব কষ্ট লাগে। জানি, নবীজী (স) কারণ ছাড়া কোনোকিছু করেন নি। তা-ও সবকিছু পরিষ্কার জানি না। আপনি একটু পরিষ্কার করে বলবেন? প্রশ্নটা করার জন্যে অপরাধ নেবেন না। ভুল হলে আল্লাহ যেন মাফ করেন।

যে পুরুষদের একথা বলতে শুনেছেন তাদেরকে বলুন যে, ঠিক আছে, তিন-চার জন বিধবাকে বিয়ে করো। ছেলেমেয়ে আছে এমন বিধবাকে ছেলেমেয়েসহ বিয়ে করো। দেখবেন, মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে। এসব কথা যারা বলে, তাদেরকে এক অর্থে বদমাশ বলা যায়। বদমায়েশি করার জন্যে তারা এ ধরনের কথা বলে। আর এ ব্যাপারে নবীজীর (স) রেফারেন্স দেয়াটা ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়।

দুই নম্বর হচ্ছে, কেউ যদি স্ত্রীর লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ে করে, কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নাই, স্ত্রী তাকে এমনিই জেলখানায় পাঠিয়ে দিতে পারে। কারণ স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা আমাদের দেশে আইনত দণ্ডনীয়।

অতএব কিছু বিষয় হচ্ছে-পরিবেশ, পরিস্থিতি, সামাজিক অবস্থানির্ভর। আর কিছু হচ্ছে সার্বজনীন।

একাধিক বিয়ের ব্যাপারে কোরআনে অনুমতি দেয়া আছে। যখন এই অনুমতি দেয়া হয় তখন ওহুদের সংঘর্ষে ৭০ জন সাহাবী শহিদ হন। তাদের স্ত্রীরা বিধবা হয়ে যান। একজন নারীকে সেইসময় মর্যাদা দেয়ার একটাই উপায় ছিল- তাকে বিয়ে করা। কোরআনে বলা হয়েছে-এক, দুই, তিন, চার জন পর্যন্ত। তারপর বলা হচ্ছে, যদি তুমি তাদের সাথে সম-আচরণ করতে পারো। আর যদি না পারো তাহলে এক বিয়েই উত্তম। আমরা শুধু প্রথম অংশ পড়েই মন্তব্য করি, পুরোটা পড়ি না।

তো একাধিক বিয়ের অনুমতি রয়েছে। সেটা কখন? যখন প্রয়োজন। যেমন, বংশধারা রক্ষার জন্যে প্রয়োজন হতে পারে। কারো স্ত্রী যদি সন্তান জন্মদানে শারীরিকভাবে অক্ষম হন, তিনি তখন যুক্তিসঙ্গতভাবেই বিয়ে করতে পারেন। কিন্তু অনুমতি থাকা এবং করে ফেলা এক নয়। একটা হচ্ছে অনুমোদন এবং আরেকটা প্র্যাকটিস। দুটো বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা।

আর নবীজী (স) বিয়ে ১০টি করেন নি, করেছিলেন ১২টি। আমরা যদি দেখি, তিনি কাদেরকে বিয়ে করেছেন? একমাত্র হযরত আয়েশা এবং হযরত মারিয়া-এ দুজন ছাড়া আর কেউ কুমারী ছিলেন না। যদি জৈবিকতার প্রয়োজনে বিয়েগুলো হতো, তাহলে তো কুমারী বিয়ে করাটাই স্বাভাবিক ছিল। আর সেটা তাঁর জন্যে মোটেই কঠিন ছিল না। কারণ তিনি একে তো ধর্মীয় প্রধান, তারপর রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ রাজা। তাঁর জন্যে তো সুন্দরী কুমারী মেয়ের কোনো অভাব হওয়ার কথা না। স্পষ্টতই বোঝা যায়, তিনি জৈবিকতার বিবেচনায় এসব বিয়ে করেন নি।

তাঁর প্রথম স্ত্রী বিবি খাদিজার (রা) বয়স ছিল ৪০ বছর। তাঁর চেয়ে ১৫ বছর বেশি। নবীজীর (স) সাথে বিয়ের আগে তিনি দুবার বা তিন বার বিধবা হয়েছিলেন। মা ফাতেমা (রা)-সহ নবীজীর (স) চার কন্যা ও দুটি পুত্র সন্তানের জননী ছিলেন তিনি। নবীজীর (স) সাথে তাঁর সম্পর্ক যতটা না জৈবিক, তার চেয়ে অনেক বেশি মানসিক ও আত্মিক। তিনি তাঁকে এত ভালবাসতেন যে, মৃত্যুর পরেও তাঁকে তিনি ভুলতে পারেন নি।

একবার হযরত আয়েশা (রা) এ প্রসঙ্গে কটাক্ষ করলে তিনি বলেছিলেন, ‘হাঁ, আমি এখনো তাকে ভালবাসি। কারণ সে আমার প্রতি অতি বিশ্বস্ত ছিল। যখন মানুষ আমাকে অবিশ্বাস করেছে, সে তখন আমাকে বিশ্বাস করেছে। যখন মানুষ আমাকে সাহায্য করতে ভয় পেত, তখন সে অটল পাহাড়ের মতো পাশে দাঁড়িয়েছে। সে আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা ও আমার সন্তানের জননী ছিল।’

দ্বিতীয় স্ত্রী বিবি সওদা (রা)-তিনিও বিধবা ছিলেন। তিনি ও তাঁর স্বামী নবীজীর (স) পরামর্শে নির্যাতন এড়ানোর জন্যে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। মক্কায় ফিরে আসার পর তাঁর স্বামী এক পুত্র সন্তান রেখে মারা যান। নবীজী (স) যখন তাঁকে বিয়ে করেন, তখন তাঁর বয়সও ছিল ৪০ বছর। নাবালক মেয়েদের দেখাশোনাই ছিল মূল লক্ষ্য।

তৃতীয় স্ত্রী হযরত আবু বকর (রা)-এর কন্যা বিবি আয়েশা (রা)। তিনি নবীজী (স)-এর কুমারী দুই স্ত্রীর একজন। অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী হযরত আয়েশা রসুলুল্লাহ (স)-এর ওফাতের পরও ৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। হাদীসের এক বিশাল সংগ্রহ আমরা পাই তাঁর কাছ থেকে। শীর্ষ পাঁচ জন মুহাদ্দিসের (হাদীস বর্ণনাকারী বিশেষজ্ঞ) নাম যদি নিতে হয়, তো তিনি তাদের একজন। বড় বড় মুহাদ্দিসরা তাঁর কাছ থেকে হাদীস শিখেছেন।

এ থেকেই আমরা বুঝতে পারি, অল্পবয়সী মা আয়েশাকে বিয়ে করলেও উদ্দেশ্য তো খুবই স্পষ্ট। যিনি একদিকে স্ত্রী হওয়ার সুবাদে নবীজী (স)-কে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবেন, তাঁর কাছ থেকে সরাসরি শিখতে পারবেন এবং তারপর তা ছড়িয়ে দেবেন মানুষের কাছে-সাহাবী, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন পর্যন্ত।

চতুর্থ স্ত্রী বিবি হাফসা (রা)-তিনি হযরত ওমর (রা)-এর কন্যা ছিলেন এবং বাবার মতো তাঁর মেজাজও বেশ চড়া ছিল। তাঁর স্বামী যখন শহিদ হলেন, তখন তাঁর বাবা তাঁকে বিয়ে করার জন্যে আবু বকর (রা) এবং ওসমান (রা)-কে প্রস্তাব করলেন। কিন্তু তাঁর মেজাজের জন্যে কেউ রাজি হলেন না। তখন নবীজী (স) তাঁকে বিয়ে করলেন।

অর্থাৎ একজন নারীকে সেই জামানায় সম্মানিত করার এর চেয়ে উত্তম কোনো পন্থা ছিল না। তাছাড়া তখনকার দিনে কারো সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার উপায় ছিল তার মেয়েকে বিয়ে করা অথবা নিজের মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দেয়া। আমাদের এখনকার সমাজে, এখনকার পরিবেশে এটা একটা অদ্ভূত ব্যাপার মনে হতে পারে। কিন্তু তখনকার সময়ে এটা ছিল এক স্বাভাবিক সামাজিক রেওয়াজ। যে কারণে হযরত আবু বকর (রা) এবং হযরত ওমরের (রা) মেয়েকে নবীজী (স) বিয়ে করেছেন এবং নিজের দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন হযরত ওসমান (রা) এবং হযরত আলী (রা)-এর সাথে।

পঞ্চম স্ত্রী বিবি জয়নব (রা)-তাঁর স্বামীও যুদ্ধে শহিদ হন। তখন একজন শহিদের বিধবাকে সামাজিক মর্যাদা দেয়ার একটাই উপায় ছিল তাকে বিয়ে করা। তিনি খুব দয়ালু হৃদয় নারী ছিলেন। বঞ্চিতের কল্যাণে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। তিনি পরিচিত ছিলেন উম্মুল মাসাকিন বা ‘দরিদ্রদের মা’ নামে। নবীজীর (স) সাথে বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই তিনি মারা যান। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৩০।

ষষ্ঠ স্ত্রী বিবি সালমা (রা)-তাঁর স্বামীও ওহুদের সংঘর্ষে শহিদ হন এবং তিনি যথেষ্ট নির্যাতিত হন। তিনি স্বামীর সাথে মদিনায় হিজরত করতে পারেন নি। যখন হিজরত করে এলেন, তার তিন দিন পরেই স্বামী সংঘর্ষে শহিদ হন। তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন। তাঁর মন ভেঙে যায়। নবীজী (স) তখন তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মা সালমা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। নবীজী (স) তাঁর সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তিনি নবীজীকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন মদীনায় হিজরতকারী প্রথম মহিলা।

সপ্তম স্ত্রী বিবি জয়নাব বিনতে জাহ্‌শ (রা)-তিনি আবু তালেবের নাতনি ছিলেন। বিধবা হিসেবে মদিনায় হিজরতের পরে নবীজী (স) তাঁর পালক পুত্র জায়েদের সাথে তাঁর বিয়ে দেন। নবীজী (স) পালক পুত্র হিসেবে ঘোষণা দেয়ার আগে জায়েদ ক্রীতদাস ছিলেন। আবু তালেবের নাতনি হওয়ায় বিবি জয়নাবের আভিজাত্যবোধটা খুব প্রবল ছিল।

জয়নাব দৃঢ়ভাবে মনে করতেন ক্রীতদাসের সাথে বিয়ে হওয়ায় তাঁর সম্মান নষ্ট হয়েছে। যে-কারণে তাঁদের দুজনের মধ্যে সবসময় দাম্পত্য কলহ লেগে থাকত। কারণ কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীকে সম্মান করতে না পারে সেই সম্পর্কে সমস্যা থাকবেই। নবীজী (স) জায়েদকে ধৈর্য ধরার উপদেশ দিতেন সবসময়।

একদিন রাগের মাথায় জায়েদ তাঁকে তালাক দেন। তালাক দেয়ার পরে তিনি আরো অপমানিত বোধ করলেন। প্রথমত, বিয়েটাকে তিনি মেনে নিতে পারেন নি অসম সামাজিক অবস্থানের কারণে। জায়েদ তালাক দেয়ার পরে অবস্থা আরো খারাপ। জয়নাবের আত্মীয়স্বজনরা নবীজীকে (স) ঘিরে ধরলেন-এখন আপনাকে এ ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কী করতে হবে? জয়নাবের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্যে তাঁকে বিয়ে করতে হবে।

কিন্তু তখনকার দিনে পালক পুত্রকে নিজ পুত্র হিসেবেই গণ্য করা হতো। এ কারণে নবীজী (স) বিয়ের ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানালেন। এরপর ‘পালক পুত্র রক্তীয় পুত্র নয়’ এই আয়াত নাজিল হলো। তখন তিনি জয়নাবকে বিয়ে করেন। বিবি জয়নাব অত্যন্ত আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মহিলা ছিলেন। জীবনে কারো সাহায্য নেন নি। এমনকি দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) তাঁর জন্যে রাষ্ট্রীয় ভাতার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। নিজে কাপড় সেলাই করে জীবিকানির্বাহ করতেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি স্বাবলম্বী ছিলেন, কারো সাহায্য গ্রহণ করেন নি।

অষ্টম স্ত্রী বিবি জোয়াইরিয়া (রা)। তাঁর পিতা হারিস ছিলেন বনু মুস্তালিক গোত্রের অধিপতি। তিনি ছিলেন একই গোত্রের নেতৃস্থানীয় যোদ্ধার স্ত্রী। তাঁর পিতা ও স্বামী দুজনই ছিলেন নবীজীর (স) ঘোর শত্রু। এক সংঘর্ষে জোয়াইরিয়া বন্দি হন এবং জোয়াইরিয়ার বাবা মুক্তিপণ নিয়ে বন্দিমুক্তির জন্যে নবীজীর (স) কাছে আবেদন করেন।

নবীজী (স) জোয়াইরিয়ার মতামত যখন জানতে চাইলেন যে, তুমি মুক্তি চাও, না এখানে থাকতে চাও? তখন তিনি বললেন, আমি একজন গোত্রপতির মেয়ে। যুদ্ধবন্দি হওয়ার কারণে আমার যে সম্মান নষ্ট হয়েছে, এই নষ্ট সম্মান পুনরুদ্ধারের একমাত্র পথ হচ্ছে আপনি যদি আমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে পুরো বনু মুস্তালিক গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করে এবং এই গোত্রের সাথে একটা চিরস্থায়ী সুন্দর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।

নবম স্ত্রী বিবি উম্মে হাবিবা (রা) আবু সুফিয়ানের কন্যা ছিলেন। ইসলামের প্রথম যুগে স্বামীর সাথে ইসলাম গ্রহণ করে তিনি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। কিন্তু স্বামী আবিসিনিয়ায় গিয়ে খ্রিষ্টান হয়ে যান। উম্মে হাবিবা মুসলমানই ছিলেন। ভোগবিলাস ও অতিরিক্ত মদ্যপানে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি মক্কায় ফিরে এলে নবীজী (স) তাঁর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৮ বছর। নবীজীর (স) প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধাবোধের কারণে তিনি তাঁর বিছানায় পিতা আবু সুফিয়ানকে কখনো বসতে দেন নি। উম্মে হাবিবা নবীজীর (স) ওফাতের পরেও ২০ বছর বেঁচে ছিলেন এবং প্রচুর হাদীসের বর্ণনাকারী হিসেবে তিনি অমর হয়ে আছেন।

দশম স্ত্রী বিবি সাফিয়্যা (রা) ইহুদি দলপতির কন্যা ছিলেন। তাঁর দুবার বিয়ে হয় এবং প্রথম বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। খাইবার-এর যুদ্ধে দ্বিতীয় স্বামী নিহত হন। সাফিয়্যা বন্দি হন। যুদ্ধবন্দি হিসেবে তাঁকে নবীজীর (স) সামনে আনা হলে নবীজী (স) বললেন, তোমার এই যে সম্মানহানি এটা উদ্ধারের একমাত্র পথ হচ্ছে বিয়ে। সাফিয়্যাও মুসলমান হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে মুসলিম প্রধানকে বিয়ে করাটাকে খুব সম্মানজনক মনে করলেন। এই বিয়ে এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে খুব বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে।

একাদশ স্ত্রী বিবি মায়মুনা (রা)। তিনি ছিলেন নবীজীর (স) চাচা আব্বাসের শ্যালিকা এবং খালিদ বিন ওয়ালিদের চাচি। প্রথম স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয় এবং তাঁর দ্বিতীয় স্বামী মারা যান। তখন তাঁর ৫১ বছর বয়স। নবীজীর (স) চাচা আব্বাস নবীজীর (স) কাছে বিয়ের প্রস্তাব আনেন। এই বিয়ে কোরাইশদের দুটো নেতৃস্থানীয় গোত্রের মধ্যে সুসম্পর্ক পুনঃস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দ্বাদশ স্ত্রী বিবি মারিয়া (রা)। খ্রিষ্টান দলপতি সায়মনের কন্যা মারিয়া এবং শিরিনকে আলেকজান্দ্রিয়ার আর্চবিশপ উপহার হিসেবে প্রেরণ করেন। তখনকার দিনে আপস বা বন্ধুত্ব করার জন্যে এই উপহার প্রেরণের রেওয়াজ ছিল। নবীজী (স) যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে মারিয়াকে বিয়ে করেন এবং শিরিনকে হাসান বিন সাবিতের সাথে বিয়ে দেন। মা খাদিজার পরে এই বিবি মারিয়ার গর্ভেই নবীজীর (স) একটি মাত্র ছেলে ইব্রাহিম জন্মগ্রহণ করেন। জন্মগ্রহণের দুমাস পরে ইব্রাহিম মারা যান। মারিয়াও এই শোকে কয়েক বছর পর মারা যান।

এই হচ্ছে নবীজীর (স) বিয়ে। আমরা যদি প্রতিটি বিয়েকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব, নবীজী (স)-এর প্রতিটি বিয়েই ছিল সে সময়কার সামাজিক, সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থ সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে। যেমন, যখন কোনো গোত্রপতির কন্যাকে বিয়ে করা হয়, স্বাভাবিকভাবেই সেই গোত্রের সাথে একটা সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অনেক গোত্র প্রস্তাবই দিত যে, আমার মেয়েকে বিয়ে করলে আমরা সম্পর্কটাকে আরো উন্নত করব।

আমরা নবীজী (স)-এর যতগুলো বিয়ে দেখি, কোনোটাই জৈবিক প্রয়োজনে নয়। যারা ফ্রয়েড পড়েছেন, তারা জানেন-সাধারণত যদি জৈবিক প্রয়োজনে কেউ বিয়ে করে, তাহলে মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে তত সে কমবয়সীকে বিয়ে করতে চায়, বিধবা বা বেশিবয়সী কাউকে না। কিন্তু নবীজী (স)-এর জীবনে এটা সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত। এক মা খাদিজা (রা) ছাড়া বাকি সবগুলো বিয়েই তখনকার সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রয়োজনে। এককথায় আমরা বলতে পারি, বিয়ের মধ্য দিয়ে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নারীদেরকে সম্মানিত করেছেন, তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছেন, চেতনার বিস্তারকে সুসংহত করেছেন।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com