1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

ইতিহাসের পাতায় ১১ ফেব্রুয়ারি

  • সময় মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৭১ বার দেখা হয়েছে

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৪২তম দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি
১৯৭২ : বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও আয়ারল্যান্ড।
১৯৯০ : দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের বাইরে ভার্স্টার জেলখানা থেকে ২৭ বছর রাজনৈতিক বন্দিত্ব শেষে মুক্তি পান অবিসংবাদিত নেতা নেলসন মেন্ডেলা।

জন্ম
১৮৪৭ : টমাস আলভা এডিসন, মার্কিন উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ী।
১৮৮২ : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, ছন্দের জাদুকরখ্যাত বাঙালি কবি ও ছড়াকার।
১৯০২ : গোপাল হালদার, সাহিত্যিক, সাহিত্যতাত্ত্বিক ও স্বাধীনতাসংগ্রামী।
১৯৪৩ : আসাদ চৌধুরী, বাংলাদেশি লেখক ও কবি।
১৯৪৪ : বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, ভারতের প্রখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি।

মৃত্যু
১৯৬২ : ভারতের বাঙালি কবি সাহিত্য সমালোচক ও সম্পাদক সজনীকান্ত দাস।
১৯৭৪ : সৈয়দ মুজতবা আলী, বাংলাদেশি বাঙালি সাহিত্যিক।

সৈয়দ মুজতবা আলী
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি তার ভ্রমণকাহিনির জন্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বহুভাষাবিদ এ সাহিত্যিকের রচনা একই সঙ্গে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধে পরিপুষ্ট।

জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদশের সিলেটের করিমগঞ্জে। বাবা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তার পৈতৃক ভিটা ছিল মৌলভীবাজার।

সিলেটের গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। সেখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয়সহ পনেরোটি ভাষাশিক্ষা লাভ করেন। সেখান থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্যে বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্যে তিনি ডি.ফিল লাভ করেন ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৩৪-১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিশরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মুজতবা আলী কাবুলের শিক্ষা দপ্তরে অধ্যাপনা করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে কাটে আট বছর। এরপর দিল্লির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খণ্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পঞ্চাশের দশকে কিছুদিন আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন পাটনা, কটক, কলকাতা এবং দিল্লিতে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বভারতীর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অবসরগ্রহণ করেন।

মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানের বিশ্বভারতী নামের হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে লিখতেন। পরবর্তীতে তিনি ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায়, যেমন: দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লেখেন। বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি লিখেছেন ভ্রমণলিপি। এছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্যদিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। অনেকের মতে, ১৯৫০-৬০ দশকে মুজতবা আলী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। তার একটি বিখ্যাত উক্তি হলো: ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’। সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত বইয়ের সংখ্যা ৩০।

উল্লেখযোগ্য লেখার মধ্যে শবনম, শহর-ইয়ার, দেশে বিদেশে, জলে ডাঙ্গায়, চাচা কাহিনী, টুনি মেম, পঞ্চতন্ত্র, ময়ূরকন্ঠী, রাজা উজির, ধূপছায়া, বেঁচে থাক সর্দি-কাশি, পুনশ্চ, পাদটীকা, রস-গোল্লা ইত্যাদি।

মুজতবা আলীর কয়েকটি বাণী:
১. জীবনই অভিজ্ঞতা, আর অভিজ্ঞতাই জীবন। অভিজ্ঞতাসমষ্টির নাম জীবন আর জীবনকে খণ্ড খণ্ড করে দেখলে এক-একটি অভিজ্ঞতা। এক-একটি অভিজ্ঞতা যেন এক এক ফোঁটা চোখের জলের রুদ্রাক্ষ। সব কটা গাঁথা হয়ে যে তসবী-মালা হয় তারই নাম জীবন।
২. রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত- যৌবনা-যদি তেমন বই হয়। তাই বোধ করি খৈয়াম তাঁর বেহেশতের সরঞ্জামের ফিরিস্তি বানাতে গিয়ে কেতাবের কথা ভোলেন নি।
৩. ‌মাছি-মারা-কেরানি নিয়ে যত ঠাট্টা-রসিকতাই করি না কেন, মাছি ধরা যে কত শক্ত সে কথা পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন, মাছিকে যেদিক দিয়েই ধরতে যান না কেন, সে ঠিক সময়ে উড়ে যাবেই।
৪. কে বলে আমি টাকার মর্ম বুঝি না? ফুরিয়ে গেলেই টের পাই।
৫. এক দোর বন্ধ হলে দশ দোর খুলে যায়; বোবার এক মুখ বন্ধ হলে দশ আঙুল তার ভাষা তর্জমা করে দেয়।
৬. পরিপূর্ণ আনন্দের সময় মানুষের মন ভিন্ন ভিন্ন দিকে ধায় না। একটা আনন্দ নিয়ে সে পড়ে থাকতে ভালোবাসে।

সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নরসিংহ দাস পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তাকে আনন্দ পুরস্কার প্রদান করা হয়। সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।

সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকাতে মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com