গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৬১তম (অধিবর্ষে ১৬২তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৬১০ : গ্যালিলিও শনি গ্রহের দ্বিতীয় চক্র আবিষ্কার করেন
১৭৫২ : বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন ঘুড়ি উড়িয়ে বজ্র থেকে বিদ্যুৎ আহরণ করতে সক্ষম হন
১৯০৫ : অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে বঙ্গীয় শিল্পকলা তথা বেঙ্গল স্কুল অব আর্ট গঠিত হয়
১৮৩২ : নিকোলাস অটো, জার্মান প্রকৌশলী
১৯১৫ : সল বেলো, কানাডীয়-আমেরিকান লেখক
১৯১৮ : ফররুখ আহমদ, বাঙালি কবি
১৯০২ : জ্যাসিন্ট ভার্ডাগুয়ের, কাতালান কবিদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি
১৯২৬ : অ্যান্টনি গাউদি, স্প্যানিশ কাতালান স্থপতি ছিলেন
১৯৫১ : এস ওয়াজেদ আলি, বাঙালি সাহিত্যিক
১৯৬৫ : অতীন্দ্রনাথ বসু, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বাঙালি বিপ্লবী
১৯৯৩ : বিশিষ্ট বাঙালি বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক সুধীরনাথ সান্যাল
২০২১ : বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, ভারতীয় বাঙালি কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক
ফররুখ আহমদ বাংলাদেশি প্রখ্যাত কবি ও শিশু সাহিত্যিক। পুরো নাম ছিল সৈয়দ ফররুখ আহমদ। বাঙালি এই কবি ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তার কবিতায় বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামি ভাবধারার বাহক হলেও তার কবিতা প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আধুনিকতার সকল লক্ষণ তার কবিতায় পরিব্যাপ্ত। তার কবিতায় রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট।
ফররুখ আহমদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ সালের ১০ জুন মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার মাঝাইল গ্রামে। বাবা খান সাহেব সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর।
১৯৩৭ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ (১৯৩৯) পাস করে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন ও ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন, কিন্তু পরীক্ষা না দিয়েই তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
ফররুখ আহমদ প্রথমে কলকাতার আইজি প্রিজন অফিস এবং সিভিল সাপ্লাই অফিসে কয়েক বছর চাকরি করেন। ১৯৪৫ সাল থেকে তিনি মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং দেশভাগের পর ঢাকায় এসে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে স্টাফ শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি জনপ্রিয় খেলাঘর অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রতি তার অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল। তিনি তখন ধর্মীয় কুসংস্কার ও পাকিস্তানের অপরিণামদর্শী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কঠোর হাতে লেখনী পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিও তার অনুরূপ সমর্থন ছিল।
কিশোর বয়সে কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে ফররুখ আহমদ সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে ‘লাশ’ কবিতা লিখে তিনি প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন মুসলিম পুনর্জাগরণবাদী কবি। তার কাব্যের মৌলিক প্রবণতা মুসলিম সংস্কৃতির গৌরবকীর্তন ও জাতীয় চেতনার পুনর্জাগরণ। পাকিস্তানবাদ, ইসলামিক আদর্শ ও আরব-ইরানের ঐতিহ্য তার কবিতায় উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে।
বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগনৈপুণ্য এবং বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের অভিনবত্বে তার কবিতা এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। ব্যঙ্গ্যকবিতা ও সনেট রচনায় তার কৃতিত্ব অনস্বীকার্য।
উল্লেখযোগ্য কাব্য: সাত সাগরের মাঝি, সিরাজাম মুনিরা, নৌফেল ও হাতেম, মুহূর্তের কবিতা, হাতেমতায়ী, হাবেদা মরুর কাহিনী ইত্যাদি। পাখির বাসা, হরফের ছড়া, ছড়ার আসর ইত্যাদি তার শিশুতোষ রচনা। সাহিত্যে বিশেষ অবদানে জন্যে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট পুরস্কার প্রাইড অব পারফরমেন্স, আদমজী পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, মরণোত্তর একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত