ভারতের জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন এর মৃত্যুদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৬০তম (অধিবর্ষে ১৬১তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৭৮১ : জর্জ স্টিফেনসন, বৃটিশ প্রকৌশলী ও লোকোমোটিভ আবিষ্কারক।
১৯১৫ : লেস পল, মার্কিন জ্যাজ, কান্ট্রি এবং ব্লুজ গিটারবাদক, গীতিকার এবং আবিষ্কারক।
১৮৩৪ : বৃটিশ খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক ও বাংলা গদ্যরীতির প্রবর্তক উইলিয়াম কেরী।
১৮৭০ : ঊনবিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স।
১৯৫৯ : নোবেলজয়ী জার্মান রসায়ন বিজ্ঞানী এডলফ অটো রিনহোল্ড উইনদস।
২০১১ : ভারতের জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন।
আর্ন্তজাতিক আর্কাইভস দিবস।
মকবুল ফিদা হুসেন অত্যন্ত জনপ্রিয় ভারতীয় চিত্রশিল্পী। তিনি এম.এফ.. হুসেন নামেই বেশি পরিচিত। চল্লিশ দশকের শেষের দিকে এম.এফ.. হুসেন চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রথম পরিচিতি লাভ করেন। প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে। পরবতী কয়েক বছরে তার চিত্রকলা ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৬ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে। এর পরের বছরই তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র থ্রু দ্য আইজ অব আ পেইন্টার নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রটি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং গোল্ডেন বেয়ার পদকপ্রাপ্ত হয়।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ের খুব কাছে পান্ধারপুরে। তিনি যখন দেড় বছরের শিশু তখন তার মা জৈনব মারা যান। তার বাবা ফিদা আবার বিয়ে করেন এবং পরিবার নিয়ে ইন্দোর চলে যান। ইন্দোরে হুসেন প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পার করেন। আর্থিক অনটনে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বড় হয়ে নিজের শিল্পকর্ম দিয়েই সমুচিত জবাব দিয়েছেন দারিদ্র্যকে।
দাদার সঙ্গে হুসেনের সখ্যতা ছিল। দাদা হারিকেন, কুপি ইত্যাদি বানাতেন। পরবর্তী জীবনে এ দাদা বারবার হুসেনের ছবিতে ঘুরেফিরে এসেছেন। বাল্যকালে হুসেন কিছুদিন মাদ্রাসায় পড়েছিলেন। তারই প্রভাবে হুসেনের ছবিতে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের ক্যালিওগ্রাফিক জ্যামিতিক গড়ন, তার প্রলম্বিত এবং আনুভূমিক রেখা সরব হয়ে ওঠে।
বিশ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে এসে জে জে স্কুল অব আর্টসে শিক্ষানবিশ শুরু হয় হুসেনের। বাস করতেন এক অখ্যাত পল্লীতে। বেশিরভাগ সময় ফুটপাতে, রেলস্টেশনে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন সিনেমার হোর্ডিংয়ের কাজ পেলেন। সেটা শিখতে অবশ্য অনেকদিন সময় লেগেছিল। ধীরে ধীরে রং তৈরি করা, কাপড় বাঁধা, ফ্রেম বানানো ইত্যাদি মন দিয়ে দেখতেন।
আর শেখা শেষ হলে বিরাটাকৃতির সিনেমার পোস্টার আঁকতে শুরু করেন তিনি। তার হাতে সিনেমার পোস্টার আলাদাভাবে নান্দনিক মাত্রায় উত্তীর্ণ হয়ে ওঠে। হুসেনের প্রিয় বিষয় ছিল চলচ্চিত্র। তিনি বলতেন- ‘দৃশ্য চিত্ররূপের গতিময়তা’ তার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী শিল্পভাষা। শব্দ দিয়ে তিনি একটি পরিপূর্ণ শিল্পভাষা নিজে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।
হিন্দু পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্র, হিন্দু দেবী তার প্রিয় বিষয় ছিল। এছাড়া বিষয় হিসেবে নারী, ঘোড়া তার ছবিতে বারবার ফিরে এসেছে। তার ছবির বক্তব্য অকপট। রং, রেখা বলিষ্ঠভাবে তার ছবির আকার বিন্যাসকে জারিত করে রাখে। উজ্জ্বল লাল, নীল, বাদামি ইত্যাদি রং স্বকীয় চরিত্র পায় হুসেনের ছবিতে।
শুধু চিত্রকলা অথবা চলচ্চিত্র নয়, তিনি কবিতাও লিখেছেন। ১৯৫০ সালে হয় তার প্রথম প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি শিল্পী হিসেবে প্রাথমিক পরিচিতি পান। সেই বছরই ফ্রান্সিস নিউটন সুজার আমন্ত্রণে তিনি প্রগ্রেসিভ আর্টিস্ট গ্রুপে যোগ দেন।
১৯৫৫ সালে ললিতকলা একাডেমি আয়োজিত প্রথম জাতীয় প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার পান। চীন ও ইউরোপ ভ্রমণ শেষে প্রদর্শনী হয়। ১৯৭১ সালে পাওলো বিয়েনালে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পাওয়ার পর হুসেন ভারতে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, টোকিও বিয়েনাল পুরস্কারসহ পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। নেহরু পরিবারের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। ইন্দিরা গান্ধীর ছবি এঁকেছেন। মাদার তেরেসা তার প্রিয় বিষয়। বহুবার তিনি তার ছবি এঁকেছেন।
সংসারে আর্থিক অনটনে বেড়ে ওঠা ফিদা হুসেন একসময় কিংবদন্তির নায়ক হয়ে ওঠেন। দৃশ্যকলার জগতে তার ব্যক্তিত্ব, প্রণোদনা আর জীবনযাপন হয়ে উঠেছিল মিথতুল্য। সাক্ষাৎকারে তিনি চটপটে, চৌকস, স্পষ্টভাষী এবং কখনই আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে তার কোনো বাক্যবাণ ছিল না। যেন জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি ছিল না তার। শেষ পর্যন্ত তার বিনয় আর দেশের প্রতি আশ্চর্য ভালোবাসার উচ্চারণই দেখেছেন সবাই।
মৃত্যুর আগের দিনগুলো তিনি কাটিয়েছিলেন লন্ডন ও কাতারে। জন্মভূমিতে ফেরার ব্যাকুলতা থাকলেও পারেননি। ২০১১ সালের ৯ জুন তিনি হার্টঅ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত