বাঙালি রসসাহিত্যিক, জাদুকর এবং সঙ্গীতজ্ঞ অজিতকৃষ্ণ বসু এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৮৪তম (অধিবর্ষে ১৮৫তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯৫৩ : পৃথিবীর নবম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ নাঙ্গা পর্বতের শীর্ষে একদল অস্ট্রীয় ও জার্মান অভিযাত্রী সর্বপ্রথম আরোহণ করেন।
১৮৮৩ : ফ্রান্ৎস কাফকা, জার্মান ও চেক উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক।
১৯১২ : অজিতকৃষ্ণ বসু, একজন বাঙালি রসসাহিত্যিক, জাদুকর এবং সঙ্গীতজ্ঞ।
১৯৪১ : আদুর গোপালকৃষ্ণন, আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক।
১৯৩২ : বাঙালি কবি ও সমাজকর্মী স্বর্ণকুমারী দেবী।
১৯৯১ : বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ডলি আনোয়ার।
১৯৯৭ : বিশিষ্ট বাঙালি চিত্রশিল্পী রথীন মৈত্র।
২০০৯ : বাংলাদেশের খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার, গবেষক আলাউদ্দিন আল আজাদ।
২০২০ : বলিউডের প্রখ্যাত নৃত্য পরিচালক, সরোজ খান।
অজিত কৃষ্ণ বসু অ কৃ ব নামেই তিনি সর্বত্র পরিচিত। তিনি মূলত ব্যঙ্গ ও কৌতুক রস সাহিত্যিক হলেও জাদুবিদ্যা ও সঙ্গীতে তার বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ কুঞ্জলাল নাগ ছিলেন তার মাতামহ।
জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। বাবার নাম শৈলেন্দ্রমোহন বসু। উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশুনা করেন ঢাকাতেই। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এ; কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরাজিতে অনার্সসহ বি.এ এবং প্রাইভেটে এম.এ করেন। বি.এ পড়ার সময়ই তিনি ‘আর্ট অভ পাবলিক স্পিকিং’ রচনা লিখে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
প্রথম জীবনে অজিতকৃষ্ণ বিজ্ঞাপনকেই জীবিকা হিসাবে বেছে নেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত বৃটিশ কোম্পানি ডি জে কিমারে বিজ্ঞাপন বিজ্ঞানে শিক্ষানবিশি করেন। পরে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বেঙ্গল ওয়াটার প্রুফ (ডাকব্যাক) কোম্পানির প্রচার কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন এবং এ কাজে তিনি দেশে-বিদেশে প্রভূত প্রশংসা পেয়েছিলেন। এর পর প্রায় আট বছর কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত না থেকে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে গোবরডাঙা কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। দুই বছর পর তিনি কলকাতার আশুতোষ কলেজে যোগ দেন এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে অবসর গ্রহণ করেন।
অজিতকৃষ্ণের সাহিত্য জীবন শুরু হয়েছিল অনুবাদের মাধ্যমে। অধ্যাপনাকালে আর্থিক অসচ্ছলতা ঘোচানোর লক্ষ্যেই তিনি প্রথমে অনুবাদে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৪ বছর বয়সে টমার মুরের ‘দি লাইট অভ আদার ডে’ কবিতা অনুবাদ করেন। সেটি মুদ্রিত হয় ‘খোকাখুকি’ পত্রিকায়।
সাহিত্য সঙ্গীত ও জাদু- এই তিন ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন। ব্যঙ্গ ও কৌতুকরসের কবিতা ও কৌতুকপ্রধান গল্প-উপন্যাস রচয়িতা হিসেবে বেশি পরিচিতি লাভ করেন। বিচিত্র ছন্দের ব্যবহার এবং তার সাথে কৌতুকরস ও দার্শনিক তত্ত্বের মিশ্রণে রচিত ‘পাগলা গারদের কবিতা’ তার অক্ষয় কীর্তি। Lunar ও Lyrics এর যুক্তরূপ Linarics নামে পরিচিত আঙ্গিকে লেখা ‘Shadow in the dark’ ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তার উদ্ভট ও খাপছাড়া এমন ৪৫টি ইংরেজি কবিতার অভিনব সংকলন। বোম্বে থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত কার্টুন পত্রিকা ‘শঙ্করস্ উইকলি’তে ইংরেজি কৌতুক কবিতা লিখেছেন।
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তার স্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল। আট বছর বয়সে কণ্ঠসঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন। অন্ধগায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দের কাছে পরে ঢাকার উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী গুলমহম্মদ খাঁ ও সবশেষে সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তীর কাছে। ‘ওস্তাদ কাহিনী’ গ্রন্থে তিনি স্বীয় সঙ্গীত জীবনের কথা ও বহু বিশিষ্ট ওস্তাদের চমকপ্রদ কাহিনী বিবৃত করেছেন। তার প্রিয় ছাত্র অনুপ ঘোষালের ‘স্মৃতির স্মরণিকা’ নামের ক্যাসেটের প্রতিটি গান তার লেখা।
স্কুল জীবন থেকেই অ কৃ ব বন্ধু জাদুসম্রাট পি সি সরকারের (সিনিয়ার) সঙ্গে সমান্তরালভাবে জাদুচর্চা করেছিলেন। কিন্তু মঞ্চে কখনো অবতীর্ণ হন নি। তবে জাদুকরের বিচিত্র জীবন ও কৌতুহলোদ্দীপক ঘটনা নিয়ে লেখা তার ‘যাদুকাহিনী’ গ্রন্থটি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘নরসিংহদাস পুরস্কার’ পান।
অজিতকৃষ্ণ বসুর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অনুবাদ গ্রন্থ : হাকলবেরি ফিন (মার্ক টোয়েন), টম সইয়ার, স্যাটান ইন দি সুবার্ব, ওয়াশিংটন স্কোয়ার, দি স্কারলেট লেটার, অরিগন ট্রি ইত্যাদি। কবিতা সংকলনের মধ্যে পাগলা গারদের কবিতা, এক নদী বহু তরঙ্গ, নে-তে তেরি তোম। ছোটদের বই- খামখেয়ালী ছড়া, আজব ছড়া, ছড়ার মিছিল ইত্যাদি। এছাড়াও ম্যাজিকের বই- যাদুকাহিনী, ম্যাজিকের গল্প, তাসের বিচিত্র ম্যাজিক। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে-প্রজ্ঞাপারমিতা, সানাই, শকুন্তলা স্যানেটোরিয়াম, চন্দনপুরের কাহিনী, শেষ বসন্ত, বিধাতা, ম্যারিনা ক্যান্টিন, নন্দিনী সোম ইত্যাদি। গল্প সংকলনের মধ্যে রয়েছে- জীবন সাহার, সৈকত সুন্দরী ও বহু পুরুষ ইত্যাদি।
মৃত্যুর কিছুদিন আগ পর্যন্ত অ কৃ ব ‘র কলম সৃষ্টিকর্মে নিয়োজিত ছিল। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে ৮১ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত