১৮৭৪ : সুইজারল্যান্ডে সংবিধান কার্যকর হয়।
১৯৫৩ : তেনজিং নরগে এবং এডমন্ড হিলারি যৌথভাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। দুজনের মধ্যে তেনজিং নরগে প্রথমে শৃঙ্গে উঠেছিলেন।
১৮৬০ : স্যার মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, কাশিমবাজারের মহারাজা ও মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব।
১৯১৭ : জন এফ. কেনেডি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম রাষ্ট্রপতি।
১৯২১ : সাধন দত্ত, বিশিষ্ট বাঙালি শিল্প ব্যক্তিত্ব।
১৯২৫ : অমলেন্দু বিশ্বাস, বাংলাদেশি যাত্রা অভিনেতা ও পরিচালক।
১৯২৯ : দ্বিজেন শর্মা, বাংলাদেশি প্রকৃতিবিদ, লেখক।
১৯৪১ : অরুণাভ সরকার, বাংলাদেশি কবি, কলাম লেখক, সাহিত্য সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৫২ : হুমায়ুন ফরিদী, বাংলাদেশি অভিনেতা।
১৮২৯ : ব্রিটিশ আবিষ্কারক এবং প্রখ্যাত রসায়নবিদ হামফ্রে ডেভি।
১৯৭৭ : ভাষাতাত্ত্বিক বাঙালি পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।
২০০৪ : একুশে পদক বিজয়ী বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগম।
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস
দ্বিজেন শর্মা ছিলেন বাংলাদেশি প্রকৃতিবিদ, জীববিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান লেখক। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন, তৈরি করেছেন উদ্যান ও বাগান। গাছের পরিচর্যা ও সংরক্ষণ এবং প্রকৃতিবান্ধব শহর গড়ার জন্যে আজীবন প্রচার চালিয়ে গেছেন। প্রকৃতির প্রতি তার মমত্বের কারণে তাকে নিসর্গসখা, বৃক্ষসখা, প্রকৃতি-পুত্র ইত্যাদি নানা বিশেষণে ভূষিত করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৯ সালের ২৯ মে মৌলভীবাজারের বড়লেখার শিমুলিয়া গ্রামে। মায়ের নাম ছিল মগ্নময়ী দেবী। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিজেন্দ্র ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। বাবা বাবা চন্দ্রকান্ত শর্মা ছিলেন কবিরাজ। তাইতো ছোটবেলা থেকেই লতা-পাতা, বৃক্ষ আর অরণ্য-প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। পাথারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও পাথারিয়া পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা এবং এর গভীর ছাপ তার মনে ভীষণ প্রভাবিত করেছে। ফলে জীবিকার তাড়না জীবনকে যেখানেই নিয়ে যাক, দ্বিজেন শর্মা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন প্রাণ ও প্রকৃতির রূপের সন্ধানে। উদ্ভিদ জগৎ, প্রকৃতি বিজ্ঞান আর বিজ্ঞান ভাবনা নিয়ে তিনি লিখে গেছেন বেশকিছু বই।
দ্বিজেন শর্মা ১৯৪৭ সালে করিমগঞ্জ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫১ সালে ত্রিপুরা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। কলকাতা সিটি কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে জীববিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে যোগ দেন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রশিক্ষক হিসেবে। ওই ১৯৫৮ সালেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করেন। ১৯৬০ সালে বিয়ে করেন। ১৯৬২ সালে ব্রজমোহন কলেজে শিক্ষক থাকাকালে তৎকালীন জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্যে গ্রেফতার হন এবং তিন মাসের জন্যে কারাবাসে থাকেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজে যোগ দেন এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতা করেন। ওই সময় নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গণে তিনি ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন করে বেশকিছু গাছ লাগান, যার কিছু এখনো রয়ে গেছে।
একেবারে সাদামাটা জীবনযাপন করলেও তিনি নীরবে-নিভৃতে অজস্র গবেষণা করে গেছেন। পড়ার অভ্যাস তার সবসময়ই ছিল। সিদ্ধেশ্বরীতে রোডে যেখানে তার স্ত্রী দেবী শর্মা এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বসবাস করেছেন, সেটি বাস্তবে একটি গ্রন্থাগার। দেবী শর্মা নিজেও মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে পিএইচডি করেছেন এবং সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে অধ্যাপনা করে অবসর নেন।
প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন দ্বিজেন শর্মা। ‘তরুপল্লব’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে তিনি তরুণ গবেষক ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রায়ই রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যেতেন। গাছপালা ও বৃক্ষরাজির সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতেন। শেখাতেন দেশি ফুলের জাতপাত ও রকমফের। শেখাতেন প্রকৃতিকে ভালোবাসতে ও শ্রদ্ধা জানাতে।
দ্বিজেন শর্মা প্রায় ৩০টি বই লিখে গেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: শ্যামলী নিসর্গ, সপুষ্পক উদ্বিদের শ্রেণীবিন্যাস, ফুলগুলি যেন কথা, ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি, সমাজতন্ত্রে বসবাস, নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা, জীবনের শেষ নেই, সতীর্থ বলয়ে ডারউইন, গাছের কথা ফুলের কথা, বাংলার বৃক্ষ, বিজ্ঞান ও শিক্ষা : দায়বদ্ধতার নিরিখ, কিশোর সমগ্র, আমার একাত্তর ও অন্যান্য, গহন কোন বনের ধারে ইত্যাদি।
প্রকৃতিপ্রেমী এই মানুষটি তার অবদানের কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থা থেকে সংবর্ধিত হয়েছেন। পেয়েছেন বহু পুরস্কার। তার প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ড. কুদরত-এ খুদা স্বর্ণপদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে এম নুরুল কাদের শিশু-সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০১ সালে পাওয়া চ্যানেল আই প্রবর্তিত প্রকৃত সংরক্ষণ পদক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাপিডিয়া’র জীববিদ্যা বিভাগের অনুবাদক এবং সম্পাদক (২০০১- ২০০৩) হিসেবে দায়িত্ব পান এবং তিনি বাংলা একাডেমির একজন সম্মানিত ফেলো। ২০১৫ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
দ্বিজেন শর্মার কাছে আনন্দের বিষয় ছিল- বৃক্ষ, ফুল, বৃষ্টি, ভোরের আলো, তার প্রিয় কুকুর টম ও নাতি-নাতনি। তিনি ছিলেন ভোগবাদ ও বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী। লোভ ও লালসার ঊর্ধ্বে সহজ-সরল, আনন্দময় অথচ কর্মঠ ও বুদ্ধিদীপ্ত জীবনই ছিল তার আরাধ্য। তিনি মানুষকে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করতেন। প্রকৃতিকে জয় করা নয়, তাকে ভালোবেসে তার অংশ হয়ে স্নিগ্ধ সুন্দর জীবনযাপনের দিকে তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের এই মহান গুণী মানুষটি ৮৮ বছর বয়সে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত