নবীজী (স) সমাজ বিপ্লবের অসাধারণ রূপকার। তার ক্ষমা, মমতা ও মহানুভবতায় শত্রু পরিণত হয় চেতনার মিত্রে।
কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিনাশ সাধন তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি চেয়েছেন সমাজ চেতনা ও সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন।
তিনি শুধু মক্কা নয়, মক্কার চারপাশে বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত দৃশ্যমান দেবদেবীর মূর্তি অপসারণের নির্দেশ দেন। লক্ষ্য ছিল একটাই। সমাজ পরিবেশে যাতে মূর্তির দৃশ্যমান কোনো প্রভাব না থাকে।
নতুন বিশ্বাসীদের নির্দেশ দেন তাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক দেবতা-মূর্তি বিনাশ করার।
সমাজ পরিবেশ থেকে তিনি দৃশ্যমান মূর্তিগুলো অপসারণ করেছেন। কিন্তু পৌত্তলিকদের পারিবারিক পরিমণ্ডলে মূর্তির উপর তিনি কোনো হস্তক্ষেপ করেন নি।
নিজের নিরাপত্তার জন্যে তাই মক্কার কোনো আধিবাসীই ইসলাম গ্রহণের কোনো চাপ অনুভব করেন নি। তাই হুনায়ুনের যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কার দুই হাজার সৈন্যের প্রায় অর্ধেকই ছিল পৌত্তলিক।
নবীজী কার্যত মক্কার সমাজ পরিবেশকে তৌহিদ-বান্ধব করেছেন, যাতে যে-কেউ নিদ্বিধায় সত্যধর্ম গ্রহণ ও অনুসরণ করতে পারে। আর অপেক্ষা করেছেন মূর্তিপূজকদের অন্তরে পরিবর্তনের ঢেউ জাগার।
ধর্মপ্রচারের এই কৌশল ফলপ্রসূ হলো কয়েক বছরের মধ্যেই। মক্কায় মূর্তিপূজার বিষয়টি বাস্তবতা থেকে স্থান পেল ইতিহাসের পাতায়।
শুধু নবীজীই নন, তাঁর সাহাবীরা পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ- যে জনপদকেই মুক্ত করেছেন, সর্বত্র তারা এই একই নীতি অবলম্বন করেছেন।
ফলে শতাব্দী পরিক্রমায় সে জনপদের অধিকাংশ মানুষই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। যারা নিজেদের পূর্বতন ধর্ম অনুসরণ করতে চেয়েছেন, তারাও অবলীলায় তাদের ধর্মচর্চা করে গেছেন।
নবীজী মক্কা মুক্ত করার আগপর্যন্ত আরবের সকল গোত্র কোরাইশদের ‘ঈশ্বরের বরপুত্রের’ মতোই সম্মান ও সমীহ করত।
বিশাল হস্তীবাহিনী নিয়ে আবরাহার মক্কা অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর পৌত্তলিক গোত্রগুলোর ধারণা আরো বদ্ধমূল হয় যে, কারো পক্ষেই কোরাইশদের পরাজিত করা সম্ভব নয়।
মক্কার পথে নবীজীর বিশাল বাহিনীর অভিযাত্রার ফলাফল দেখার জন্যে তাই বেদুইন গোত্রগুলো রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিল।
তারা দেখল নবীজী বিনা বাধায় মক্কায় প্রবেশ করেছেন। কোরাইশরা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছে। কাবা থেকে সকল দেবদেবীর মূর্তি অপসারিত হয়েছে। আশেপাশে উজ্জার মূর্তিসহ বিশাল বিশাল মূর্তি। অপসারিত হয়েছে। তারা তখন সন্দেহমুক্ত হলো যে, মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল।
সত্যধর্ম গ্রহণের সার্বজনীন আগ্রহের এক প্লাবন সৃষ্টি হলো সারা আরব জুড়ে। দলে দলে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পথে তাদের আর কোনো বাধা থাকল না।
এরই ফলে নবম হিজরি পরিণত হলো প্রতিনিধিদের বছরে। সারা আরব জুড়ে গোত্রের পর গোত্র দলে দলে আশ্রয় গ্রহণ করল ইসলামের শান্তি, সাম্য ও সমমর্মিতার ছায়াতলে।