নড়াইলের লোহাগড়ার কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত ‘মধুমতি সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন অপেক্ষার অবসান হলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর,এতে ভীষণ খুশি তারা। সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১টা ১১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের চামেলী হল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও নড়াইল সেতু প্রান্তে যুক্ত হয়ে দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি উদ্বোধন করেন।
গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের সীমান্তে নির্মিত মধুমতি সেতু। এপারে নড়াইলের কালনাঘাট। ওপারে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতু। সেতুটি উদ্বোধনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগায়োগের এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হলো। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় সেতুটি ঘিরে মধুমতি নদীর দুই তীরের মানুষ উচ্ছাসে ভাসছে। সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সাধারন মানুষের ভোগান্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে। বাঁচবে ফেরি পারাপারের সময়। নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ২০০৮ সালে নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা ঘাটে এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি ‘কালনা সেতু নামে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে। তবে এতোদিন কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদী ধারা বিছিন্ন ছিল। সেতু নির্মাণের ফলে সেই বিছিন্নতা আর রইল না। ভারত, কোলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
মধুমতি সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে নড়াইলে লোহাগড়ায় কালনা ঘাটে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এসময় নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হক মুক্তি,নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা, নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, খুলনা রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক ড.খ.মহিদ উদ্দিন বিপিএম (বার), নড়াইল পুলিশ সুপার মোসা.সাদিরা খাতুন,নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. সুবাস চন্দ্র বোস,সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান নিলু, পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আজগর আলী, কালনা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শ্যামল কুমার, প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সাধারন সম্পাদক ও লোহাগড়া পৌর মেয়র সৈয়দ মসিয়ূর রহমান, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা, বিভিন্ন দপ্তর প্রধান ও বিভিন্ন স্তরের মানুষজন উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।