নসিবো ইফেক্ট কি?
প্রিয় সুহৃদ! যে আনন্দ নিয়ে আপনি ঈদের ছুটি কাটিয়েছেন বাড়ি থেকে কাজে ফিরে সেই আনন্দ অনুরণন নিয়ে যদি কাজ করেন, আপনার কাজের ফলাফল নিঃসন্দেহে অন্যরকম হবে, ভালো হবে। আপনার পেশা যাই হোক না কেন এটা কোনো বিষয় না আপনি যা-ই করেন আপনি তখন ভালো করবেন। আপনার কাজটা তখন ভালোভাবে করতে পারবেন।
আপনি যদি একটু ভাবেন একটু চিন্তা করেন যদি খোঁজ করেন কাজটা কখন ভালোভাবে হয় না, দেখবেন কারণটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার বিরক্তি অস্থিরতা বা নেতিবাচক চিন্তা।
আসলে যখনই মন বিরক্তি অস্থিরতা ও নেতিবাচক চিন্তা দিয়ে আক্রান্ত বা প্রভাবিত হয় তখনই আপনার স্বতঃস্ফূর্ত গতিতে একটা ছন্দপতন হয়। প্রত্যাশার পরিবর্তে অবচেতন মনে একধরনের সংশয় বা আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। যা কাজের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শুধু কাজের ব্যাপারেই নয় শুধু মনের ওপরে নয় শরীর স্বাস্থ্যের ওপরেও এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে। ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক কথা বা মতামত বা সাজেশন বা পরামর্শ থেকেও বাস্তব অসুস্থতার লক্ষণ আপনার দেহে প্রকাশ পেতে পারে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে, নেতিবাচক প্রভাবকে নসিবো এবং ইতিবাচক কথা প্লাসিবো ইফেক্ট বলা হয়।
নসিবো ইফেক্টের শারীরিক প্রভাব
প্রিয় সুহৃদ! নসিবো ও প্লাসিবো ইফেক্ট নিয়ে আমরা কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে গত ৩৩ বছর ধরে আলোচনা করে আসছি।
নসিবো প্রভাব নিয়ে নিউরোসায়েন্টিস্ট পত্রিকার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সংখ্যায় একটি গবেষণা নিবন্ধে উঠে এসেছে বেশ চমকপ্রদ তথ্য, যা আমাদের দীর্ঘ পর্যবেক্ষণকেই সমর্থন করে।
নিবন্ধে বলা হয়- পাওয়ার অব সাজেশন প্রয়োগ করে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বাস্তব জীবনে মাথাব্যথা মাসল পেইন এবং মূর্ছা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। নিবন্ধে বলা হয়, নেতিবাচক আশঙ্কা যে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এটা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নসিবো ইফেক্ট নামে প্রতিষ্ঠিত সত্য।
নসিবো ইফেক্টের গবেষণা তথ্য
বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন যে, বিষয়টির অতিসংক্রমণ ঘটতে পারে। একজন থেকে আরেকজনে কথা গসিপের মাধ্যমে ব্লগের মাধ্যমে, সবচেয়ে বিপজ্জনক সংক্রমণ হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কেট ফাস (Kate Faasse) বলেন, অনলাইন তথ্য নসিবো ইফেক্টের দ্রুত বিস্তার দূরবর্তী স্থানে বিস্তারের কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বহু মানুষ এখন স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের জন্যে ব্যবহার করে ইন্টারনেট, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়া।
নসিবো ইফেক্ট নিয়ে অনেক মজার মজার গবেষণা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ইটালির তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পাবরিজিও বেনেদেত্তির গবেষণা। তিনি ১২১ জন ছাত্রকে আলপ্স পাহাড়ে ৩৫০০ মিটার উঁচুতে এক গবেষণাগারে পরিদর্শনের সময়, পাহাড়ে ওঠার আগে শুধু একজনকে আলাদাভাবে বলেন এত উঁচুতে বায়ু চাপ কম থাকার কারণে মাথাব্যথা করতে পারে। সেইরকম হলে এসপিরিনের ডোজ অর্থাৎ মাথাব্যথার ওষুধ ঠিক করার জন্যে সে যেন যোগাযোগ করে।
গবেষকের উদ্দেশ্য ছিল, নেতিবাচক কথাটার সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ করা। দেখা গেল সে খুব দ্রুত তার বন্ধুদের একইভাবে কানে কানে বলল। তারা আবার তাদের পরিচিতদের বলল। শেষ পর্যন্ত ৩৫ জন অংশগ্রহণকারী গবেষকের সাথে মাথাব্যথা নিয়ে যোগাযোগ করলেন। পাহাড়ের উচ্চতায় কারো কারো মাথাব্যথা হয় কিন্তু নেতিবাচক কথা যাদের কানে গিয়েছে তাদের ৮৬ শতাংশই মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়েছেন।
প্রিয় সুহৃদ! এই নসিবো সংক্রমণকেই এখন গবেষকরা বলছেন মাইন্ড ভাইরাস। এটাকে নসিবো ভাইরাসও বলা যায়। আমরা ১০ বছর আগে এটাকে বলেছি ভার্চুয়াল ভাইরাস।
নসিবোর ক্ষতিকর প্রভাব কর্ম ও অর্জনের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে
বিজ্ঞানীরা নসিবো সংক্রমণের ভয়াবহতার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। ভাইরাস যেমন ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমিত হয় তেমনি নসিবোও ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমিত হতে পারে। এরও একটা চেইন অব ট্রান্সমিশন থাকতে পারে।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে- বিজ্ঞানীরা নেতিবাচকতা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমণের যে কথা বলছেন আমাদের সাধকরা তা বলে এসছেন হাজার বছর ধরে। নেতিবাচক লোক থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শও তারা দিয়ে আসছেন যুগ যুগ ধরে।
প্রিয় সুহৃদ! নসিবো বা নেতিবাচক ভাবনার সংক্রমণ শুধু যে আপনার শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে তা নয়, এটি আপনার কর্মের ওপর অর্জনের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। আপনার অর্জনকেও ব্যাহত করে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বাঁচার উপায় কী?
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন এ থেকে তাহলে বাঁচার উপায় কী? অর্জনকে অটুট রাখার উপায় কী? আসলে বাঁচার উপায়টা কিন্তু খুবই সহজ। অর্জনের প্রক্রিয়াও খুব সহজ।
১. পজিটিভ সাইকোলজি প্রয়োগ করুন
প্লাসিবো ইফেক্ট সৃষ্টিতে এপ্লাইড পজিটিভ সাইকোলজি প্রয়োগ করা। কোয়ান্টাম মেথড এই এপ্লাইড পজিটিভ সাইকোলজিরই পরিপূর্ণ বাংলা সংস্করণ। এবং এ নিয়ে আমরা গত চার দশক ধরে কাজ করে আসছি।
২. সপ্তাহে একটি বই পড়ুন
প্রিয় সুহৃদ! আপনি নিশ্চয়ই সফল হতে চান বা ধনী হতে চান। যারা এখন বিশ্বের প্রথম কাতারের ধনী তারা কী করেছেন? ধনীদের শতকরা ৮৫ জন প্রথম প্রজন্মের অর্থাৎ নিজেরা ধন-সম্পদ গড়েছেন। কীভাবে তারা এত অল্পসময় এত টাকা গড়লেন?
ইনস্টাগ্রামে ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের একাউন্টে একটা পোস্টে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ ধনী এ প্রশ্নের একটি উত্তর দিয়েছেন সেটি হচ্ছে বই পড়ে। সপ্তাহে তারা সাধারণত একটি করে বই পড়েন। তবে এগুলো গল্প উপন্যাস নয়, এগুলো হচ্ছে আত্মউন্নয়নমূলক বই। নিজের ক্যারিয়ারের জন্যে নিজেকে উজ্জীবিত করার জন্যে নিজেকে ইতিবাচক রাখার জন্যে, নিজেকে উদ্যমী রাখার জন্যে যে বইগুলো পড়া প্রয়োজন সে বই।
৩. সকালের প্রথম ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম একদম শূন্য রাখুন
প্রিয় সুহৃদ! বিশ্বাসী ও ইতিবাচক থাকতে হলে সকালটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সকালে মস্তিষ্কের জন্যে স্ক্রিন টাইম অত্যন্ত ক্ষতিকর।
স্টামফোর্ডের নিউরোসায়েন্টিস্ট মরিস লোয়েফলার বলেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠে স্মার্টফোন হাতে নেয়ার অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্ক সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। নেতিবাচকতা দিয়ে দিন শুরু করলে আশাবাদ ধরে রাখা কঠিন হয়। তাই দিনের প্রথম ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম একদম শূন্য রাখতে হবে।
৪. কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের ফর্মুলাগুলো প্রয়োগ করুন
সফল মানুষদের একটা বড় গুণ হচ্ছে, অস্থির না হয়ে বিশ্বাস নিয়ে ঠান্ডা মাথায় অপেক্ষা করতে পারা।
অস্থিরতা কমানো, নিজের ওপর আস্থা ও ধৈর্য বাড়ানোর জন্যে আপনি কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের ফর্মুলাগুলো প্রয়োগ করুন।
ঘুম ভাঙতেই একটা হাসি দিয়ে বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ, থ্যাংকস গড বা হরিওম বা প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ। আপনার ধর্মবিশ্বাস অনুসারে আপনার প্রভুকে আপনি সম্বোধন করে বলুন প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ।
হাত মুখ ধুয়ে কোয়ান্টাম ইযোগা তারপর মেডিটেশন করুন। পারলে মেডিটেশনটা করবেন বঙ্গাসনে। ধর্মগ্রন্থ বা একটু বই পড়ুন একপাতা বা দুই পাতাই হোক। ভরপেট নাশতা করুন। তারপর ফোন হাতে নিন।
৫. কোয়ান্টামের অনু বইগুলোর যে-কোনোটা সাথে রাখুন, চোখ বোলান
প্রিয় সুহৃদ! সফল এবং ধনীরা, সফল ও ধনী হওয়ার পরও এখনো তারা নিয়মিত আত্মউন্নয়নমূলক বই পড়েন। সফল মানুষদের জীবনী পড়েন। আপনি কেন পিছিয়ে থাকবেন? ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা আপনার পড়ার কাজটাকে সহজ করে দিয়েছে।
ফাউন্ডেশন রোজার আগে কোয়ান্টাম ভাবনা ফিউশন পুস্তিকা বা অনু বই প্রকাশ করেছে। আর ঈদ ও বৈশাখ উপলক্ষে প্রকাশ করেছে নিত্যদিন শত অটোসাজেশন, নিত্যদিন শত টিপস প্যারেন্টিং, নিত্যদিন শত প্রার্থনা শিরোনামে আরো তিনটি পুস্তিকা বা অনু বই। এই অনু বইগুলোর যে-কোনোটা সাথে রাখুন সুযোগ পেলেই চোখ বোলান।
নসিবো ভাইরাসের বিরুদ্ধে এগুলো যেমন প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে তেমনি আপনি থাকবেন ইতিবাচকতা ও বিশ্বাসে উদ্দীপ্ত। নিজের কাজ স্বতঃস্ফূর্ত গতিতেই করতে পারবেন। অর্জন এবং আনন্দ সবসময় আপনার সাথি হোক। নতুন বছর উপলক্ষে বৈশাখের উৎসব উপলক্ষে এটাই পরম করুণাময়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা।
প্লাসিবো বা ইতিবাচক সাজেশনের শক্তি সক্রিয় রাখতে বলুন…
এবার আপনার প্লাসিবো বা ইতিবাচক সাজেশনের শক্তি সবসময় সক্রিয় রাখার জন্যে আমার সাথে বলুন,
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।
ইতিবাচক প্লাসিবো শক্তি আপনার জীবনকে সবসময় নসিবো ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখুক। আপনি ভালো থাকুন। সবসময় ভালো মানুষের সঙ্গে থাকুন।
[০৪ এপ্রিল ২০২৫ সাদাকায়নের জন্যে ২৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে গুরুজীর প্রদত্ত বক্তব্য]