এক ব্যক্তির দাফন করতে গিয়ে দেখলাম সাথে আছেন শুধু মৃত ভদ্রলোকের ভাগ্নি। যেহেতু তখন কাজের দিকেই থাকে পুরোটা মনোযোগ, তাই আর জিজ্ঞেস করার সুযোগ হলো না—ভদ্রলোকের সন্তানসন্ততি আছে কিনা।
থাকলে তারা এলো না কেন কবরস্থানে? প্রশ্নগুলো মনের ভেতরই চাপা রয়ে গেল। কিন্তু নিজের চিন্তাকে তো আর চাপা দেয়া যায় না! ঘুরেফিরে ওই ভদ্রলোকের কথা মাথায় আসছে। ভাবছি, তার জন্যে দোয়া করবে কে? একজন মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, কিন্তু তার জন্যে দোয়া করার সময় পরিবারের কেউ থাকবে না!
আমরা নয় ভাইবোন। আমাদের প্রয়াত বাবার বিদেহী আত্মার মাগফেরাতের জন্যে প্রতিদিনই আমরা দোয়া করি। কিন্তু ওই লোকের তো সন্তান নেই। তার জন্যে কে দোয়া করবে? কিংবা সন্তান থাকলেও যারা বাবার দাফনের সময় কবরস্থান পর্যন্ত আসেন নি, তারা আর বাবার জন্যে কতটুকু প্রার্থনা করবে?
অথচ আমরা জানি, মানুষের মৃত্যু হলে তার সকল আমল বা কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
থাকে শুধু তিনটি জিনিস—
এক, তার জন্যে করা আমাদের দোয়া।
দুই, তার অনন্ত প্রশান্তির জন্যে করা দান।
তিন, তার সৎকর্মগুলো।
যা তিনি নিয়ে যান সাথে করে। আর কিছু সৎকর্ম থাকে, যার পুণ্য ধারাবাহিকভাবে মৃতব্যক্তি পেতে থাকেন তার মৃত্যুর পরে। যেটাকে বলা হয় সাদকায়ে জারিয়া।
বিষয়টি নিয়ে যতই ভাবছি ততই মনে হচ্ছে, আমার মৃত্যুর পর অবস্থা কেমন হবে?
যথেষ্ট পাপ কামিয়েছি, সেই তুলনায় কি পুণ্য অর্জন করেছি কিছু?
এমন কিছু কি করছি যাতে আমলনামা ভারী হয়?
আমার মৃত্যুর পর অব্যাহত থাকবে এমন সাদকায়ে জারিয়া কি আমি করে যেতে পারছি?
আমার সন্তানদের কি যথার্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারছি?
পিতা হিসেবে কি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছি?
সন্তানেরা কি আমার জন্যে দোয়া ও দান ইত্যাদি অব্যাহত রাখবে?
এরকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়।
উত্তর হিসেবে একটাই কথা খুঁজে পাচ্ছি,
সেটা হলো—সৎকর্ম আমাকেই করে যেতে হবে।
প্রতিটি মৃত্যু আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে,
মৃত্যুর আগেই আমাকে আমার পরকালীন মুক্তির প্রয়োজনীয় পাথেয় সংগ্রহ করে যেতে হবে।
পরকালে মুক্তির জন্যে আমলনামা ভারী করে নিয়ে যেতে হবে।