1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২১ পূর্বাহ্ন

প্রযুক্তি স্রষ্টারা ব্যবহার করছেন না

  • সময় বুধবার, ১৯ মে, ২০২১
  • ১১১৪ বার দেখা হয়েছে

প্রযুক্তি স্রষ্টারা ব্যবহার করছেন না!

‘প্রযুক্তি পণ্য মানুষের নেশা ধরিয়ে দেয়’ এ অভিযোগ যদি মিথ্যা হতো, তাহলে যারা এ পণ্যগুলোর স্রষ্টা, তারা নিজেরা কেন এটা ব্যবহার করছেন না? বা তাদের সন্তানদের ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না?

জাস্টিন রোজেনস্টাইন আর লিয়া পার্লম্যানের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। এদের কাতারে শামিল হয়েছেন লরেন ব্রিচটার বা চামাথ পালিহাপিতিয়ার মতো প্রযুক্তিবিদরাও।

লরেন ব্রিচটার টুইটারের জনপ্রিয় পুল টু রিফ্রেশ ফিচারের উদ্ভাবক। ব্রিচটার বলেন, আমি জানি না, দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ধরে আমি যেসব কাজ করেছি, তার কতটুকু মানুষের কল্যাণে লেগেছে। নিজের কম্পিউটার থেকে অনেকগুলো সাইটকে তিনি ব্লক করে রেখেছেন। টেলিগ্রাম নামের অ্যাপটিতে স্ত্রী আর ঘনিষ্ঠ দুজন বন্ধু ছাড়া বাকি সবাইকে সরিয়ে ফেলেছেন এবং নিজেকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন টুইটার থেকে! নিজের ফোনটা তিনি সেই যে সন্ধ্যা ৭টায় রান্নাঘরের সুইচবোর্ডে চার্জে দিয়ে সরে পড়েন, হাতে নেন আবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে।

ফেসবুকের সাবেক নির্বাহী চামাথ পালিহাপিতিয়া। ২০০৬ থেকে ফেসবুকে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির মূল ক্রীড়নক ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে এটা ব্যবহার করেন না। ১০ বছরে সর্বোচ্চ ৬-৭টা পোস্ট তিনি দিয়েছেন। মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুক একাউন্ট দেখভালের জন্যে রয়েছে ১২ জন সহকারী।

কারণ তারা জানেন, এসব পণ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। ২০১৭ এর ডিসেম্বরে ফেসবুকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শন পার্কার বলেন, ফেসবুকসহ এজাতীয় সব সোশাল মিডিয়াগেুলোতেই আমরা খুব সচেতনভাবে সেসব টেকনিকগুলোই ব্যবহার করেছি যা হবে মানুষের মনোযোগ এবং সময়খাদক। তাইত কোটি কোটি সাধারণ মানুষকে এসব আসক্তির দিকে ঠেলে দিলেও নিজেদের সন্তানদের সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন এসব ব্যবহার থেকে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনকুবের বিল গেটস। তার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট সারা পৃথিবীর কম্পিউটার জগৎ দোর্দন্ড প্রতাপে শাসন করছে। অথচ তার সন্তানরা দিনে ৪৫ মিনিটের বেশি কম্পিউটার ব্যবহার করার সুযোগ পায় না। কেবল তা-ই নয়, সন্তানদের বয়স ১৪ হবার আগে বিল গেটস স্মার্টফোন তো দূরের কথা, মোবাইল ফোনই কিনে দেন নি।

আইফোন ও আইপ্যাডের নতুন মডেল বাজারে আসার আগেই অনলাইনে লাখ লাখ পিস আগাম বিক্রি হয়ে যায়। যে গ্যাজেট নিয়ে এত মাতামাতি, তার নির্মাতা অ্যাপলের কর্ণধার স্টিভ জবস কিন্তু তার সন্তানদের আইপ্যাড ব্যবহার করতে দেন নি। আই প্যাড যখন বাজারে এল, স্টিভ জবসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার সন্তানরা কি এটা পছন্দ করেছে? স্টিভ জবস তখন উত্তর দিয়েছিলেন, না, ওরা এটা ব্যবহার করে নি। আমাদের সন্তানরা কতটা প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করবে, তার সীমা আমরা বেঁধে দিই।

দুমুখো নীতি অবলম্বনকারী এসব প্রযুক্তি মাফিয়াদের অবস্থানটা আসলে ড্রাগ ডিলারের! ড্রাগ ডিলাররা যেমন নিজেরা না হয়ে মানুষকে ড্রাগে আসক্ত করে, এরাও তেমনি। যেসব প্রযুক্তি পণ্য বানিয়ে এরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে, নিজেদের সন্তানদের তারা বড় করছে সেসব ছাড়াই! সিলিকন ভ্যালির নামজাদা সব টেকনোলজিস্টদের সন্তানরা সেখানকার অভিজাত এমন সব স্কুলে যায়, যেখানে আইফোন, আইপ্যাড তো দূরের কথা, ল্যাপটপ পর্যন্ত নিষিদ্ধ!

‘ব্যবসা’ই মূল উদ্দেশ্য

আর এই পুরো বিষয়টাই ঘটছে ব্যবসাগত কারণে, অর্থলাভের স্বার্থে। জুয়া আসরের মূল লাভ যেমন যায় আসরের আয়োজনকারীদের পকেটে, তেমনি স্মার্টফোন আর এর নেশা ধরিয়ে দেয়া অ্যাপগুলোতে মানুষকে আটকে রাখার ফলেও লাভবান হয় সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোই। কারণ যত বেশি আপনি স্ক্রিনে থাকবেন তত আপনার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া তার জন্যে সহজ হবে এবং তত আপনাকে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বাড়বে তার রোজগারের সুযোগ!  আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনি তো ফেসবুক ব্যবহার করছেন ফ্রি। কতরকম সুবিধাদি পাচ্ছেন কোনো খরচ না করেই। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। মনে করার কোনো কারণ নেই যে, সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো সমাজসেবা করতে নেমেছে! তারা এটা করতে পারছে, কারণ বড় বড় বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ তারা হাতিয়ে নিয়েছে আপনাকে বিজ্ঞাপন দেখানোর বিনিময়ে।  সোশাল মিডিয়াগুলোতে মানুষ আজকাল এত বেশি ব্যক্তিগত তথ্য দেয় যে, এসব থেকে একটি মানুষের রুচি, পছন্দ, আর্থিক সামর্থ্য, জীবনযাপন পদ্ধতি- ইত্যাদির প্রায় নির্ভুল চিত্রাংকন সম্ভব। ফলে সে মানুষটিকে একেবারে তার মোক্ষম পছন্দের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে সম্ভব তাকে দিয়ে তা কেনানো।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com