৬ ফেব্রুয়ারি ব্যারন কোহেন টুইটারে লেখেন, ‘আমরা এক ব্যক্তিকে ২৫০ কোটি মানুষের পানি, বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করতে দিই না, তাহলে এক ব্যক্তিকে কেন আমরা ২৫০ কোটি মানুষের তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে দেব? সরকারের উচিত ফেসবুককে নিয়ন্ত্রণে আনা, এক সম্রাটের আইনে চালানো উচিত নয়।’ এ টুইটের জবাবেই ফেসবুকে মুছে ফেলার আহ্বান জানান প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত এলন মাস্ক।
২০১৮ সালের মার্চ মাসে মাস্ক টেসলা ও স্পেসএক্সের ফেসবুক পেজ মুছে ফেলেন। তিনি বলেন, তার কোম্পানির কোনো পেজ ফেসবুকে আছে, তা তিনি বুঝতেই পারেননি। ওই সময়ে তিনি আরেক টুইটে বলেছিলেন, ‘আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না এবং কখনো করিনি। এতে আমি একেবারে শহীদ হয়ে যাইনি বা আমার কোম্পানির বড় কোনো ধাক্কা এসেছে।’
ফেসবুককে কোনো বিজ্ঞাপনও দেন না তিনি। কোম্পানির ফেসবুক পেজ মুছে ফেলার সময় টুইটারভক্ত মাস্ক বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছি না, কেউ আমাকে এটা করতে বলেছে বলেও করছি না। আমি ফেসবুককে পছন্দ করি না।’
শুরুতে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট রাখলেও ২০১৮ সালের আগস্টে এসে ইনস্টাগ্রামও বন্ধ করে দেন মাস্ক। ছবি শেয়ারের অ্যাপ্লিকেশনটিও ফেসবুকের মালিকানাধীন।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াকও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেন। গত বছরের জুলাই মাসে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক ফেসবুক ব্যবহার ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। টিএমজেডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফেসবুকের প্রাইভেসি নিয়ে কথা বলেন এ প্রকৌশলী ও উদ্যোক্তা।
স্টিভ ওজনিয়াক বলেন, ‘অনেক ধরনের মানুষ আছেন। কিন্তু অল্প কিছু মানুষের ক্ষেত্রে প্রাইভেসি নষ্ট করে ফেসবুকের সুবিধা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমার মতো অনেকের জন্যেই পরামর্শ হচ্ছে কীভাবে ফেসবুক ছাড়া যায়, তা খুঁজে দেখা।’
ওজনিয়াক বলেন, ‘ফেসবুক ও এর প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবশ্যই প্রাইভেসি-সুবিধা রাখা উচিত। মানুষ মনে করে, এসব সাইটে তাদের প্রাইভেসি আছে। কিন্তু আসলে তা থাকে না। তারা কেন আমাকে পছন্দ করার সুযোগ দেবে না? প্রয়োজনে তারা অর্থ নিয়ে হলেও আমার তথ্য সুরক্ষিত রাখার সুবিধা দেবে। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে আমার তথ্য দেবে না।’
ফেসবুকের ব্যবহার প্রসঙ্গে স্টিভ ওজনিয়াক বলেন, ‘ফেসবুকে মানুষ তার জীবনের সবকিছুই এখন দিয়ে দিচ্ছে। এ তথ্য কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপন থেকে প্রচুর অর্থ আয় করছে ফেসবুক। পুরো আয় আসছে ব্যবহারকারীর তথ্য থেকে। কিন্তু ব্যবহারকারী ওই মুনাফার কিছুই পাচ্ছে না। আমরা অবশ্য এটা থামাতে পারব না। আপনার সবকিছুই, এমনকি আপনার হৃৎস্পন্দন পর্যন্ত নানা ডিভাইস ব্যবহার করে শুনতে পারে তারা। আপনার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন আপনার কোন তথ্য সংগ্রহ করছে কে জানে? এ নিয়ে অনেক খবর পর্যন্ত এসেছে।’
ধীরে ধীরে ফেসবুকের বিরুদ্ধে কথা বলার লোক ভারী হচ্ছে। গত বছরের মার্চে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক ছাড়ার আহ্বান জানান হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাক্টন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্লাসে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার পরামর্শও দেন তিনি।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কম্পিউটার সায়েন্স ১৮১’ নামের একটি স্নাতক কোর্সের ক্লাসে বক্তা হিসেবে আসেন ব্রায়ান অ্যাক্টন। ওই ক্লাসে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইলোরা ইজরানি নামে সাবেক আরেক ফেসবুককর্মী। যিনি শি++ নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠাতা।
ব্রায়ান অ্যাক্টন বলেন, ‘গ্রাহক তথ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। অথচ আমরা তাদের হাতে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ছেড়ে দিচ্ছি। এটা খুবই খারাপ দিক। আমরা তাদের পণ্য কিনি। আমরা এসব ওয়েবসাইটে সাইনআপ করি। ফেসবুক বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানেরই গ্রাহক তথ্য নিয়ে ব্যবসা করার অধিকার নেই। ফেসবুক মুছে ফেলুন, ঠিক কি না?’
ব্রায়ান অ্যাক্টন ২০১৭ সালে ফেসবুক ছাড়েন। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের সমালোচনা করে আসছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সামনে নিজ বক্তৃতায় কেন ফেসবুকের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে কেন নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন, তা তুলে ধরেন ব্রায়ান অ্যাক্টন। বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের তথ্যের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ফেসবুকের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
সূত্র : প্রথম আলো (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০)