প্রশ্ন : আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রচণ্ড বদমেজাজি এবং অহংকারী ও দুর্বলতার সুযোগ সন্ধানী। তিনি আমাকে প্রচণ্ডভাবে অসম্মান ও বিরক্তি করার চেষ্টা করেন। আমি তাকে কমান্ড সেন্টারে নিয়ে আসে শিথিলায়নে দোয়া করি। কিন্তু তার প্রতি আমি ইতিবাচক হতে পারছি না।
উত্তর : হ্যাঁ এইখানটায় সমস্যা। আগে তার প্রতি ইতিবাচক হতে হবে।
কর্মস্থলে খারাপ বা বাজে বস সংখ্যায় কি বেশি? আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব বলছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সংখ্যাটি আকারের দিক থেকে বিশাল! ৭৫ শতাংশ মার্কিন বলেছেন, তাঁদের কর্মজীবনে সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে থাকেন বস বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
করপোরেট সংস্কৃতির পেশাদারির দিক বিবেচনায় নিলে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থান তালিকার বেশ ওপরের দিকেই থাকবে। তা সেখানেই যদি অধস্তন কর্মীদের এই হাল হয়, তবে এ দেশে কেমন, একবার ভেবে দেখুন তো!
গ্যালাপের করা এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি দুই চাকুরের একজন ক্যারিয়ার-জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বসের কাছ থেকে মুক্তি পেতে চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে বসের ‘অত্যাচার’ সহ্য করে চাকরি চালিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এর পেছনে নানা কারণ থাকে।
চাকরি মানেই আর্থিক নিরাপত্তা। সেই নিশ্চয়তা থেকে অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়ানোর সাহস দেখানো চাট্টিখানি কথা নয়। কেউ আবার তুলনামূলক ভালো সুযোগের অভাবে থেকে যান খারাপ বসের অধীনেই।
খিটখিটে ও কর্মীকে দৌড়ের ওপর রাখা বসেরা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর বটে। সুইডেনের ৩ হাজার ১২২ জন পুরুষ কর্মীর ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা খারাপ বসের অধীনে কাজ করেন, অন্যদের তুলনায় তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
অন্যদিকে, বিভিন্ন মার্কিন গবেষণা বলছে, অসংবেদনশীল বসের চাপে থাকা কর্মীরা মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ও উদ্বেগে ভুগে থাকেন। আবার তিতিবিরক্ত হয়ে চাকরি ছেড়ে দিলেও রক্ষে নেই।
গবেষকেরা বলছেন, আগের মানসিক চাপ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে নাকি ২২ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে!
আপনি যতক্ষণ তাকে ক্ষমা করতে না পারছেন, আলফা লেভেলে তার সাথে আপনার কমিউনিকেশন হবে না তো। কারণ আপনি তো ব্যারিয়ার দিয়ে রেখেছেন।
আগে তাকে ক্ষমা করতে হবে, যে আচ্ছা ঠিক আছে; মানে প্রচণ্ড বদমেজাজি এবং অহংকারী! আহারে! তার মতো দুঃখী কি আছে?
বদমেজাজির চেয়ে দুঃখী কিন্তু কেউ নাই। এবং বদমেজাজির সাথে কাজ করা সবচেয়ে সহজ। যদি আপনি প্রো-একটিভ থাকেন।
কারণ বদমেজাজির সাথে কেউ কাজ করতে চায় না তো। সবাই তাকে এভয়েড করে।
মানে এটা হচ্ছে সাইকোলজি। সবাই তাকে এভয়েড করে যে, কখন গালিগালাজ দেবে।
আপনি তাকে দয়া করবেন।
অর্থাৎ তার প্রতি সমবেদনা আহারে বেচারা! আমি যদি তার সাথে কাজ না করি কে কাজ করবে তার সাথে?
এবং কিছুদিন পরে উনি আপনার ওপরে ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যাবে। কারণ তার নির্ভর করার মতো কেউ নাই তো আরকি।
তখন আপনি তাকে টাইট দেন। তখন তাকে টাইট দেন। স্যার আমার এই কাজটা তো করতে হবে আরকি।
হ্যাঁ স্যার এই যে ডেলিগেট যাচ্ছে, মানে আপনার এত মানে আপনি আমাকে এত স্নেহ করেন, আপনি আমাকে ডেলিগেটে পাঠাবেন না? সবাইতো জানে যে আপনি আমাকে পাঠাবেন। আপনি আমাকে অনেক স্নেহ করেন।
ইজি খুব! বদমেজাজি লোকের সাথে কাজ করা অর্থাৎ কারো সম্পর্কে যদি আপনি স্টাডি করে ফেলতে পারেন তার সাথে কাজ করা সবচেয়ে সহজ।
এবং একজন কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েটের তাই করা উচিৎ সবসময়। আগে তাকে বুঝবেন।
বুঝে কী করবেন? তার সাথে ডিল করবেন।
অন্যরা ঝগড়া করবে; আপনি কাজ করবেন; কাজ করিয়ে নেবেন। অন্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করবে। আপনি কোনো ক্ষোভ প্রকাশ করতে যাবেন না।
[প্রজ্ঞা জালালি, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬]