২০১২ সালের প্রথম প্রোগ্রাম।একই সাথে নবীনদের বরণ করে নেওয়া হচ্ছে এই মাসিক প্রোগ্রামের মাধ্যমে। বছরের প্রথম মাসিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আবেগ নিয়ে, যেটি ক্ষতিকর। যেটি নেতিবাচক আবেগ, যা শিক্ষার্থীর্ জীবনকে মারাত্বকভাবে ক্ষতি করতে পারে। ক্ষতিকর আবেগের অনেক ধরণ আছে, রকম আছে প্রকারও আছে তার মধ্যে মূলত যে বিষয় শিক্ষার্থীর মারাত্বকভাবে ক্ষতি করে তা হচ্ছে ‘প্রেমাবেগ’, প্রেম কতভাবে কীভাবে পাগলামী হতে পারে তা আজকের আলোচনা থেকে জানা যাবে। বছরের এই প্রথম প্রোগ্রামটি পরিচালনা করেণ সবার প্রিয় সুমনধর স্যার। তিনি ২০১২ সালের প্রথম প্রোগ্রামে সবাইকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়ে, পরম করুণাময়ের নিকট শুকরিয়া আদায় করেণ যে, কোয়ান্টাম হচ্ছে জীবনযাপনের বিজ্ঞান। জীবনযাপনকে সত্যিকার অর্থে সুন্দর করার জন্যই, জীবন ঘনিষ্ট বাস্তব কিছু কাজ, কিছু আলোচনা, কিছু চিন্তা ভাবনা, কিছু মতবিনিময় আমরা এখানে এসে একসাথে করতে পরি। আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে শিক্ষার্থী জীবনে ক্ষতিকর আবেগ বা প্রেমাবেগ, যা শিক্ষার্থী জীবনের শিক্ষনীয় সময়কে নষ্ট করে দেয়। টিভি, সিনেমা এবং ইন্টারনেট তথা আধুনিক মিডিয়া ও অন্যান্য প্রচারমাধ্যমে এবং বর্তমান সময়ের কৈশোর ও তারুণ্যের অন্যতম আগ্রহের প্রধান আকর্ষনের বিষয় প্রেম। সব জায়গাতেই প্রেম আছে। প্রেম নেই এমনটা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রথমেই আসা যাক প্রেম কেন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একটি বিষয়? রাগ, ক্ষোভ, হিংসা এগুলো হচ্ছে ক্ষতিকর আবেগ। আর প্রেমাবেগ হচ্ছে এমন একটি অনুভূতি, চিন্তার এবং মানসিক কার্যক্ষমতার এমন একটি অবস্থান যা প্রেম ছাড়া কিছু বোঝে না। তখন সব কিছুই রঙ্গীন দেখে। আজ থেকে ৫০ বা ১০০ বছর আগেও মানবজীবনে প্রেম ছিলো, তখনও প্রেম নিয়ে সাহিত্যকর্ম হয়েছে, কবিতা-গান রচনা হয়েছে, কিন্তু আজকের মতো এই উন্মাদনা ছিলো না। প্রেম বিষয়ক বহুল প্রচলিত কয়েকটি যুক্তি বা অবিদ্যা
1) লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট : প্রথম দেখাতেই প্রেম। আর শিক্ষার্থীদের এই বয়সে না থাকে মানবচরিত্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, না থাকে বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি ঘটনা সুন্দরভাবে বিবেচনা করার সামর্থ। কারণ জীবনের এই সময়ে শিক্ষার্থীরা এগুলো শিখছে, শেখা সম্পূর্ণ হয়নি। আসল ঘটনা হলো, তাই এই আবেগকে প্রেম না বলে বলা যায়, নিতান্তই শারীরিক আকর্ষণের ব্যাপার।
2) বুঝে-শুনে প্রেম হয় না, এটা স্রেফ হয়ে যায় : এটাও আরেকটি অবিদ্যা। যেকোন কাজই বুঝে-শুনে করা উচিত।
3) ইয়াং বয়সে প্রেম না হলে কি বুড়ো বয়সে হবে? শিক্ষার্থী জীবন পরিণতমনস্কতা বা ম্যাচিউরিটি অর্জনের সময়, বাস্তব জ্ঞান অর্জনের সময়। এই সময়ে প্রয়োজন ভবিষ্যত জীবনের ভিত্তি মজবুত করা, নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরী করা। পরিচয় তৈরী হলে, জীবনের ভিত মজবুত হলে, বাকি সব এমনিই হবে।
4) বিয়ের আগে যদি ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ না থাকে, বিয়ে কীভাবে সুখের হবে? যদি বিয়ের আগে প্রেম সুখী বৈবাহিক জীবনের সূচক হতো, তবে ইউরোপ-আমেরিকার দম্পতিরা হতেন সবচাইতে সুখী দম্পতি। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি উল্টো। সুতরাং এই কথাটিও একটি ভুল ধারণা বা অবিদ্যা। আসলে এই প্রেম, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আসক্তি এসব কারণে এখন ইউরোপ-আমেরিকার ছেলেমেয়েরাও কিন্তু পড়াশুনায়, জ্ঞানে অনেক পিছিয়ে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকাতে আজ থেকে ১০০ বছর আগে যে মাপের প্রতিভা জন্মাতো, ৫০ বছর আগেও যে মাপের প্রতিভা ছিলো, যে মাপের নেতৃত্ব ছিলো সে মাপের নেতৃত্ব বা প্রতিভা এখন ইউরোপ-আমেরিকাতেও নাই। কারণ এই প্রেমরোগ। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রতিবেদন: প্রেমাবস্থায় ও মাদকাসক্তিতে ব্রেনের একইরকম অবস্থা। People experiencing romantic love have a chemical profile in their brains similar to that of people with obsessive-compulsive disorder, noted the author, psychologist Lauren Slater. Love and obsessive-compulsive disorder could have a similar chemical profile: low levels of the brain chemical serotonin. Thus, love and mental illness may be hard to tell apart. Studies around the world show that passion usually ends. Biologically speaking, the reason romantic love fades may be found in the way our brains respond to the surge and pulse of dopamine. Perhaps the brain adapts to the excessive amounts, and the neurons become desensitized. [http://www.world-science.net/othernews/060120_lovefrm.htm] প্রেম কেন ক্ষতিকর? বিক্ষিপ্ত মনোযোগ : প্রেম প্রথম ধাক্কাতেই পড়াশোনার ক্ষেত্রে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটায় ফলে শারীরিকভাবে টেবিলের সামনে থাকলেও মনথাকেঅন্য কোথাও। ফলাফল রেজাল্টের ক্রমাবনতি। জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুতি: প্রেমের সুদূরপ্রসারী ক্ষতি হলো জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে মনোযোগের বিচ্যুতি। প্রেম কীভাবে এড়ানো যায়?
১) সঙ্গী/ বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে।
২) জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সবসময় চোখের সামনে রাখতে হবে।
৩) বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণকে ক্যাজুয়ালী নেয়া উচিত।
৪) আবেগ বা রূপের কদর সাময়িক, গুণের কদর সবসময়ের জন্যে।
৫) মোবাইল, ইন্টারনেটের পরিমিত ব্যবহার (ফেসবুক বর্জনীয়) জীবনযাপনের বিজ্ঞান চর্চা করার ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, স্রষ্টার রহমত আমাদের উপর আছে, জীবনকে কীভাবে সুন্দর করা যায়, আরও উন্নত করা যায়, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে একটা গঠণ অনুযায়ী শুনতে ও জানতে পেরেছি। আমরা যেন আমাদের জীবনকে আরো গুনের আকর করে তুলতে পারি। পরম করুনাময় আমাদের সবাইকে সুন্দর শিক্ষার্থী জীবন এবং অত্যন্ত কর্মমুখর মহৎ কর্মজীবনের দিকে নিয়ে যাক। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সম্মানিত আলোচক তার আলোচনা শেষ করেন। সম্মানিত অলোচককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শাফিয়া নাজরীন।তিনি বলেন, আমরা আমদের জানা কথাগুলোকে একটু ঝালাই করে নিলাম। প্রেম একটি সাময়িক বিনোদন- সময় কাটানোর উপকরণ মাত্র। প্রেম এমনভাবে মোহগ্রস্থ করে মানসিকভাবে আচ্ছন্ন করে তখন সে অবস্থায় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়না, যুক্তিও কাজ করে না। ফলাফল হলো: প্রেমের চক্করে পড়া তরুণ মন আবেগে বিবেক-বিবেচনা হারিয়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। এর নির্মম পরিণতি ভোগ করতে হয় তাকে এবং তার পরিবারকে। বরফের গলা যেমন থামানো যায় না, তেমনি বরফের মতোই গলছে আমাদের ‘সময়’। শিক্ষার্থী জীবনে অপ্রয়োজনীয় সর্ম্পক যা সময়কে খেয়ে ফেলছে তার মধ্যে মূলত: প্রেম, আড্ডা এবং অসৎ সংগ। এই তিনটি জিনিসকে বাদ দিতে পারলে আমাদের যতটুকু সময় আছে এই সময়টাকে নিজেদের তৈরী করতে খুব সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে পারবো। তাই মনকে বোঝাতে হবে, যে- ‘‘মন, এখন আমার জীবন গড়ার সময়”। প্রেম করার জন্য সামনে অনেক সময় আছে। এখন যদি কষ্ট স্বীকার করি তাহলে আমার শেষ ভাল হবে। তখন এ কষ্ট শতগুণে আমার আনন্দের কারণ হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সফল শিক্ষাজীবন কামনা করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।