আমি যদি অস্থির অসহিষ্ণু ও মমতাহীন হই, দুর্ব্যবহারকারী হই, আমার সন্তান স্থির প্রশান্ত সমমর্মী হবে এই আশাটা দুরাশারই নামান্তর।
আসলে আমরা এতক্ষণ তো অবস্থা বিশ্লেষণ করলাম। প্রতিকারটি কী?
এই প্রতিকারের পথেই আমাদেরকে এখন পা বাড়াতে হবে। প্রতিকারের পথে যাবার আগে আমরা সুফিদের একটা গল্প বলতে চাই গল্প শুনতে চাই।
নির্জন নদীর পাড় দিয়ে আপন মনে হেঁটে যাচ্ছেন একজন মানুষ। বাঁক ঘুরতেই তিনি আওয়াজ পেলেন চিৎকারের চেঁচামেচির। তাকিয়ে দেখলেন দুজন মানুষ নদীর পাড়ে খুব কাছাকাছি- দুই হাত দূরত্বে, গলা ফাটিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি।
আপন মনে যিনি হাঁটছিলেন ভাবলেন ব্যাপারটা কী? এত কাছাকাছি দুজন! এত জোরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার কেন, আওয়াজ কেন? তাদের কেউ তো বধীর নয়।
তাদের দুজনের উত্তেজনা এবং চিৎকারে তিনি আর কোনোকিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলেন না। গ্রামে ফিরে এলেন।
গ্রামের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি বুজুর্গ, দরবেশ তার কাছে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন যে, হুজুর! আমি দেখলাম দুজন মানুষ দুই হাত দূরত্বে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। মনে হচ্ছে দুইজন যেন নদীর দুই প্রান্তে বা মাঠের দুই প্রান্তে।
কিন্তু তারা তো খুব কাছে ছিল। আস্তে কথা না বলে এত জোরে চিৎকার করছিল কেন? আমার বোধগম্য হলো না। আমি বুঝতে পারলাম না।
বুজুর্গ হাসলেন। বললেন, যে আসলে কাছে থেকেও তারা দূরে ছিল।
‘দূরে ছিল’ অর্থাৎ তাদের দুজনের মন ও আত্মার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল।
এই মানসিক দূরত্বের কারণেই তারা ভাবছিল বাস্তবেও তারা দূরে। এইজন্যেই একজনের কথা আরেকজনের কানে ঢোকানোর জন্যে এত চিৎকার চেঁচামেচি করছিল তারা।
আসলে আজকে থেকে প্রথম পদক্ষেপ হোক, ঘরে চিৎকার-চেঁচামেচি-ধমকা-ধমকি বন্ধ।
ঘরে আপনারা তো খুব কাছেই আছেন। শুধু দৈহিকভাবে কাছে নন, মনের দিক থেকেও কাছে চলে আসেন। সমমর্মিতা-শ্রদ্ধা-মনোযোগ।
আসলে আপনি যেরকম মনোযোগ পেলে খুশি হন, আপনার স্ত্রী আপনার স্বামী আপনার সন্তান আপনার মা আপনার বাবা আপনার আত্মীয় তিনিও মনোযোগ পেলে খুশি হন।
অতএব মনোযোগ দিন। অন্যদের কথা শুনতে শুরু করুন।
প্রথমে বলতে চাইবে না। কারণ হয়তো অনেক অস্থিরতা অসহিষ্ণুতা বিষণ্ণতা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে ইতিমধ্যেই ভার্চুয়াল ভাইরাসের আক্রমণের ফলে। ধৈর্য ধরতে হবে। আপনি উদ্যোগী হয়ে কাছে যেতে হবে। কাছে টানতে হবে।
এবং নিজের হৃদয়কে উজাড় করে দিতে হবে। তাহলেই আপনি আজ হোক কাল হোক তাদের অন্তরকে জয় করতে পারবেন। আপনার পরিবার টিকে যাবে।
প্রথমদিকে যত অসুবিধা হোক- আপনি অন্তর খুলে মমতা সমমর্মিতা শ্রদ্ধা ভালবাসা দিন।
তাকে কাছে টানুন। ফিল করুন। এ আমার মা, এ আমার বাবা, এ আমার সন্তান, এ আমার স্ত্রী, এ আমার মেয়ে, এ আমার স্বামী।
এবং যখনই মেডিটেশনে বসবেন মনের বাড়িতে এনে তাকে বোঝান যে তাকে আপনি কত ভালবাসেন কত স্নেহ করেন কত মমতা করেন কত শ্রদ্ধা করেন।
আসলে প্রেম ভালবাসা মমতা শ্রদ্ধা একই জিনিসের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন নাম। কিন্তু মূল জিনিস একই। কিন্তু মূল স্পন্দন একই।