1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন

মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়া শেখায় কোয়ান্টাম ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম

  • সময় শনিবার, ১৫ মে, ২০২১
  • ১০৯৬ বার দেখা হয়েছে

মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়া শেখায় কোয়ান্টাম

ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম

প্রখ্যাত আইনজ্ঞ
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

১৯৭১ সাল। সেসময় আমি বঙ্গবন্ধুর লাইব্রেরি রুমে বসে কাজ করতাম। পত্রিকা ঘেঁটে সারাদিনের খবরাখবর, নোটিশ সব টুকে পাঠাতাম তার জন্যে। সে আলোকেই তিনি বিভিন্ন নির্দেশনা দিতেন।

২২ বা ২৩ মার্চের দিকে একদিন ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে একটা টেলিফোন এলো। আমি ভাবলাম, হয়তো বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলতে চাইছে। কিন্তু তারা বললো, না, তারা আমার সাথেই কথা বলতে চায়। নাম ধাম জেনেই কথা বলছিল। বললো, কিছু জরুরি কথা আছে। দেখা করতে পারব কি না।

তো গেলাম একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। তাদের বক্তব্য ছিল, দেখ, এই যে তোমরা এখন স্বাধীনতার দাবী তুলেছ, আন্দোলন করছ, এসব করে কোনো লাভ হবে না। কারণ পেন্টাগন, সিআইএ অর্থাৎ মার্কিন সরকারের স্বীকৃত কোনো ম্যাপে বাংলাদেশ নামে কোনো দেশ নেই। আর পাকিস্তান আর্মি যখন তোমাদের আক্রমণ করবে, তখন তোমরা বাঁচবে কি করে?

আমি বললাম, দেখ, এই পৃথিবী যখন প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল, তখনও বাংলাদেশ নামে কোনো ভূমি ছিল না। সমুদ্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে পাথর চূর্ণ হয়ে, বছরের পর বছর ধরে সৃষ্টি হয়েছে এ অপূর্ব ভূখণ্ড। আর এ ভূখণ্ডেই জন্ম হয়েছে এ মানুষগুলোর তোমাদের ভাষায় যারা দুর্বল। এরাই সেই মানুষদের বংশধর যারা খরা-দুর্ভিক্ষের কবল থেকে বাঁচতে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসেছিল এ ভুখণ্ডে বেঁচে থাকার আশায়। যারা সারভাইভারস, শত প্রতিকূলতাকে জয় করে তারা টিকে গিয়েছিলেন। যে দেশে এরকম মানুষরা রয়েছেন, তারা শুধু একটি দেশ নয়, পুরো পৃথিবীকেই নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখে।

তবে এই নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে যথার্থ মানুষ লাগবে সেটা আমি সবসময়ই বিশ্বাস করতাম। যে কারণে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু যখন তার ভাষণে বলেছিলেন, হে কবিগুরু, তোমাকে আজ মিথ্যে প্রমাণিত করে দিলাম। তুমি বলেছিলে ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি’। আজকে দেখো তোমার বাঙ্গালী মানুষ হয়েছে’।, আমি সুযোগ খুঁজছিলাম কবে তাকে আমার বিশ্বাসের কথাটা বলতে পারব। দুদিন পর সুযোগ পেয়েও গেলাম। বললাম, দেখেন একটা মুক্তিযুদ্ধ করলেই কিন্তু জাতি মানুষ হয় না। মানুষ হওয়ার জন্যে একটা প্রক্রিয়া লাগে। এবং সেটা আপনিই করতে পারেন। আপনি যদি এটা করে না যেতে পারেন, সেটা কি করে সম্ভব হবে তা আমি জানি না।

আমরা এখনো ‘মানুষ’ হতে পারি নাই। মানুষ তৈরির এ উপকরণগুলো আমি কোনো বিদ্যালয়, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে খুঁজে পাইনি- এই দুঃখবোধ আমার ছিল। কিন্তু এখানে এসে মনে হয়েছে, লামার যে কসমো বিশ্ববিদ্যালয় হবে, তাদের ‘মোটো’ হবে মানুষ হওয়া, প্রথম হওয়া। আর সে গর্বের অংশ হওয়াটা আমারও মনছবি যে, ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার জন্যেও যেন থাকে একটি ঘর।

আমাদের সকল ধর্মের যে মূল জায়গাগুলো, বিশেষ করে আমাদের নিজেদের ধর্ম এবং নবীজি এবং তার জীবনাদর্শ, সেইসাথে যে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং তার সাথে মনস্তাত্তিক বিষয় এবং আমাদের দেহ, মন এবং এর যে একটা কমান্ড স্ট্রাকচার, প্রত্যেকেই আমরা আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হলেও সকলে যে একত্রিত, এবং আমাদের সাথে প্রকৃতির এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সার্বিক সম্পর্কের যে ধারণা তিনি স্থাপন করেছেন, এটা অতুলনীয়। আমি বহু জায়গায় বহু বক্তৃতা শুনেছি। কিন্তু এত জ্ঞান, এত গভীরতা এবং এত সামগ্রিকতা, এটা একসাথে পাওয়া দুর্লভ একটি সুযোগ। সুযোগটি পেয়ে আমি গর্বিত এবং আমি খুব কৃতজ্ঞ।

এ কোর্সের আগে কোয়ান্টামের একটি রক্তদাতা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসার সুযোগ আমার হয়েছিল। আমি জেনেছি, সারাদেশব্যাপী কয়েক লক্ষ রক্তদাতা কোয়ান্টামের আছে। এখন রক্তদানের যে কয়টি প্রতিষ্ঠান আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কোয়ান্টাম। সেদিন আমি বলেছিলাম, যে দেশে এতো মানুষ আছে যারা স্বেচ্ছায় রক্তদান করছেন অন্যের জন্যে, সে জাতির তো কখনও উন্নতি ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

আর এ কোর্সে এসে আমি লক্ষ করলাম, শুরুটাই হয়েছে আমাদেরকে আমাদের ভয় থেকে, আড়ষ্টতা থেকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া দিয়ে। আর সেজন্যে তিনি ব্যবহার করেছেন খুব ছোটবেলায় যে সমস্ত গল্প আমরা পড়েছি ছোট ছোট বইয়ে, সেগুলোকে। গাধার গল্প, পাঠার গল্প – শিক্ষার বাহন হিসেবে নিজস্ব সংস্কৃতির এসব গল্পগাথার ব্যবহার একটা অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। আমার মনে হয়, লোকজ গল্প, লোকজ সংস্কৃতি, আচার, ব্যবহার ইত্যাদি সব মিলিয়ে যে দর্শন তিনি আমাদের মাঝে গেথে দিচ্ছেন, সেটাই সব থেকে বড় শিক্ষা।

আর লামার স্কুলটি দিয়ে যে উপসংহার টেনেছেন তিনি, তা হচ্ছে সবচেয়ে অনবদ্য ব্যাপার। আমি মনে করি এ যেন এক বিশ্বজয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি আমাদের।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com