সাধারণত চাল, গম বা যবের ছাতুর চল থাকলেও আমরা আজকে বলব ছোলার ছাতুর কথা। ছোলার ডালকে ভেঙে মিহি করা হয়। এরপর একে ছেকে পাউডার বা ছাতুতে পরিণত করা হয়।
সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, যাদের পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য কম বা নেই, তারা এই উপকরণটি দিয়ে তাদের খাদ্যচাহিদা পূরণ করে। কিন্তু পুষ্টিবিদরা গবেষণা করে দেখেছেন, ছাতুতে এত বহুবিধ পৃষ্টি ও উপকারের কারক যে, স্বাস্থ্যের স্বার্থেই ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ছাতু খাওয়া উচিত। বিশেষত সকালের নাশতা হিসেবে।
সকালের নাশতা হিসেবে ছাতু খুবই উপকারের (ছবিসূত্র: bengali.news18.com)
স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে অনেকে ওটস খান যা বেশ ব্যয়বহুল। বাস্তবতা হলো ওটসের চেয়ে ছাতুর পুষ্টিগুণ কম তো নয়ই, বরং বেশি।
একশ গ্রাম ওটসে এনার্জি পাওয়া যায় ৩৮৯ কিলোক্যালরি। একশ গ্রাম ছাতুতে এনার্জি পাওয়া যায় ৪০০ কিলোক্যালরি।
ওটসে প্রোটিন পাওয়া যায় ১৬.৮৯ গ্রাম, আর ছাতুতে ২১.১৯ গ্রাম।
ওটসে কার্বোহাইড্রেট ৬৬.২৭ গ্রাম, আর ছাতুতে ৬৪.৬৩ গ্রাম! মাত্র দুই গ্রাম কম।
ওটসে ফাইবার হচ্ছে ১০.৬ গ্রাম। ছাতুতে ১৪.৩ গ্রাম।
ওটসে ফ্যাট হচ্ছে ৬.০৯ গ্রাম, ছাতুতে ৬.৩৪ গ্রাম।
তাছাড়া ছাতুর প্রোটিন হচ্ছে যেহেতু উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, প্রাণিজ প্রোটিনের ক্ষতিকর দিকগুলো এতে নেই।
ছাতু কার্বোহাইড্রেট ও মিনারেলসেও ভরপুর।
১০০ গ্রাম মাছে প্রোটিন পাওয়া যায় ১৬-২০ গ্রাম। ১০০ গ্রাম ছাতুতে পাওয়া যায় ২০-২৫ গ্রাম প্রোটিন। তার মানে মাছের চেয়েও ছাতুর প্রোটিন বেশি।
ছাতু প্রচুর পানি ধরে রাখতে পারে। ফলে এটি খেলে ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা কমে যায়। যে কারণে দেখা যায় উপমহাদেশের যেসব স্থানে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে ছাতু খাওয়ার চল আছে। বলা হয়, গ্রীষ্মের দিনে সকালবেলা এক মগ বা এক গ্লাস ছাতুর শরবত সারাদিন দেহের হাইড্রেশনের মাত্রাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে সাহায্য করে।
গরম কালে শরীরকে ঠান্ডা রাখে এই শরবত৷ (ছবিসূত্র: bengali.news18.com)
ছাতু অনেকক্ষণ পেটে থাকে। যে কারণে যারা বাড়তি ওজন কমাতে চান তারা ছাতু খেতে পারেন। কারণ ওজন কমাতে গেলে পরিমিত খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সারাক্ষণ ক্ষুধার অনুভূতি বয়ে বেড়াতে হলে এটা খুব কঠিন।
ডায়েট কাউন্সেলররা তাই সকালে এক গ্লাস ছাতুর শরবত খেতে পরামর্শ দেন।
প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস ছাতুর শরবত বাড়তি ওজন কমাতে দারুণ কার্যকারী (ছবিসূত্র: www.banglatribune.com)
তাছাড়া শহরে যারা ব্যস্ত জীবন যাপন করেন, সকাল সকাল বেরোতে হয়, তাদের জন্যে নাশতা হিসেবে ছাতুর শরবত আদর্শ। তৈরি করা যায় সহজে, পুষ্টিমানও ভালো।
ছাতুর শরবত বানানো খুবই সহজ।
ছোলার ছাতু দিয়ে শরবত বানাতে চাইলে এর সাথে পরিমাণমতো পানি, বিট লবণ, জিরাগুঁড়ো, লেবু আর সামান্য গুড় দিন। এমনকি গুড় না দিলেও চলে। এরপর খুব ভালো করে নাড়ুন। কেউ কেউ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নেন। আপনার যদি সুযোগ থাকে, ব্লেন্ড করতে পারেন। না করলেও অসুবিধা নেই।
শরবত যদি একটু পানসে খেতে চান, তাহলে বেশি পানি, কম ছাতু। আর ঘন খেতে চাইলে কম পানি, বেশি ছাতু- এভাবে খেতে পারেন।
শরবত হয়ে গেছে অনেকে এতে কাঁচা পেয়াজ, মরিচ কুচো দেন।
কেউ কেউ ব্লেন্ড করার সময়ই পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, আমচুর ইত্যাদি দেন। অর্থাৎ উপকারি এবং এই স্বাদের সাথে যায়, এমন যে-কোনো উপাদান পছন্দমতো আপনি দিতে পারেন।
ছাতুর শরবত আপনি ঘরেই বানাতে পারেন (ছবিসূত্র: bangla.aajtak.in)
ছাতু বাচ্চাদের জন্যেও খুব ভালো। বাড়ন্ত দেহের প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও ছাতু খেলে ওদের কনস্টিপেশনের সমস্যা হবে না।
এবং কনস্টিপেশনের ক্ষেত্রে এটা বড়দের জন্যেও উপকারি। ছাতুর ফাইবার বা আঁশ অংশ ইনটেস্টিন বা পরিপাকতন্ত্রের জন্যে খুব উপকারি। কারণ কোলনের দেয়ালে যত তৈলাক্ত ফুড পার্টিকল লেগে থাকে, ছাতুর কনটেন্ট এগুলোকে ওখান থেকে সরিয়ে দেয় এবং পরিষ্কার করে। ফলে যাদের কনস্টিপেশন আছে যাদের পেট ফাঁপা থাকে, যাদের এসিডিটি আছে তাদের জন্যে ছাতু খুব উপকারি।
আমাদের পাকস্থলীতে অণুজীব বা মাইক্রোবের যে বিশাল সাম্রাজ্য আছে, এই সাম্রাজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখে ছাতু। ভালো অণুজীবগুলোকে বাড়ায় এবং খারাপ অণুজীব যেগুলো আছে, এগুলোকে কমিয়ে দেয়।
আর পাকস্থলীর এই সুস্বাস্থ্যের প্রভাব পড়ে ত্বকে। ত্বক উজ্জ্বল হয়, চুল পড়া কমে। কারণ ছাতুর আয়রন।
আমরা জানি, ডায়াবেটিক রোগীদের বেশি কার্ব খাওয়া ক্ষতিকর। কিন্তু ছাতু যেহেতু মূলত প্রোটিন কনটেন্ট এবং এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, ফলে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে ছাতু খেলে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা অনায়াসে ছাতু খেতে পারেন।
প্রতিদিন এক চামচ বা দুই চামচ ছাতুই যথেষ্ট (ছবিসূত্র: www.ekushey-tv.com)
আর এই উপকারগুলো পাওয়ার জন্যে প্রতিদিন এক চামচ বা দুই চামচ ছাতুই যথেষ্ট!
তাই আসুন নতুন এই সুপার ফুড নিজেরা খাই, অন্যদেরকে খেতে উৎসাহিত করি। খরচ কম, অথচ মহাপুষ্টি- এমন একটি সুপার ফুডকে নতুন করে সবার কাছে পরিচিত করি।