প্রিয় সুহৃদ! করোনা করোনা করে করোনা আতঙ্কের প্রচারণার সয়লাবে যা সবচেয়ে ক্ষতিকর মানুষের জন্যে দেশের জন্যে যে বিষয়টি আমাদের দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে গেছে সেটি হচ্ছে নেশা।
নেশা, আসক্তি। করোনা ভাইরাসের চেয়েও ভার্চুয়াল ভাইরাস এই করোনাকালে আমাদের ক্ষতি করেছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্ম। অনুর্ধ ১৮ যাদের বয়স সেই তরুণ-তরুণীদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের শিক্ষার জন্যে অভিভাবকদের তাদের হাতে তুলে দিতে হয়েছে স্মার্টফোন, ডাটা।
এবং তাদের একটা বড় অংশ শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত আসক্ত হয়ে গেছে ইন্টারনেট গেমে। পাবজি বা ফ্রি ফায়ারে।
এবং সেই সাথে বেড়েছে নেশা ধূমপান ইয়াবা এবং সম্প্রতি আলোচিত হচ্ছে এলএসডি নিয়ে। যদিও এলএসডি ১৯৬০ এর দশকের মাদক। নিষিদ্ধ হয়েছিল পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে। নতুন করে এর যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সেটি সচেতন সমাজের দৃষ্টি কাড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রের নিজেকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে।
আসলে এটিতো একটি করুণ মর্মান্তিক ঘটনা।
এবং এই ভার্চুয়াল ভাইরাস এই গেম পাবজি ফ্রি ফায়ার এবং আরো যত গেম রয়েছে এই গেমগুলো শুধু তরুণদের আসক্তি তৈরি করছে না। তাদের মধ্যে সৃষ্টি করছে হতাশা অসহিষ্ণুতা ঘৃণা হত্যা এবং ধর্ষণের মতো অমানবিকতা ও অপরাধের।
এবং এই গেমের মধ্য দিয়ে তরুণ সমাজ বিভ্রান্তি ও বিকৃতির শিকার হওয়ার সাথে সাথে, যারা বিদেশ থেকে অমানবিক পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠাচ্ছেন তাদের অর্থ এই গেমওয়ালারা আবার নিয়ে যাচ্ছে।
আসলে শোষকরা এইভাবেই যুগে যুগে শোষণের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। লোকজন অমানুষিক পরিশ্রম করছে বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে দেশে আর গেমওয়ালারা আতঙ্ক প্রচার করার মধ্য দিয়ে লোকজনদের নেশাগ্রস্ত করে সেই বৈদেশিক মুদ্রা আবার তারা নিয়ে যাচ্ছে তাদেরই দেশে।
আসলে নেশা যে শুধু ভার্চুয়াল ভাইরাসে তা নয়। নেশা ধূমপানের। ধূমপান অর্থাৎ তামাক আসলে এই ভার্চুয়াল ভাইরাসের সাথে এই গেমের সাথে তামাক এবং যত নেশাগত দ্রব্য সবটাই জড়িত সবটাই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
আসলে নেশা শুরু হয় তামাক থেকে ধূমপান থেকে তারপরে আস্তে আস্তে সেটা পরিণত হয় মদ ও মাদকে। যে-কারণে বলা যায় নেশার নরকের গেইট হচ্ছে তোরণ হচ্ছে তামাক, ধূমপান।
এবং তামাকের মধ্যে জর্দা গুল সাদা ধোঁয়াবিহীন তামাক। এই ধোঁয়াবিহীন তামাক খায় ২০ শতাংশের বেশি মানুষ। আর সিগারেট খায় ১৪ শতাংশের বেশি মানুষ। অর্থাৎ আমাদের দেশে ৩৫ শতাংশ মানুষ এই তামাক ব্যবহারকারী। তামাক দিয়ে শুরু।
এবং এদেরই একটা অংশ ধীরে ধীরে অন্য অন্য মাদকে, মদ-মাদক-এলএসডি-ভার্চুয়াল ভাইরাস সবকিছুতে আক্রান্ত হয়।
তো আসলে যত নেশা, নেশার তোরণ হচ্ছে নেশার শুরু হচ্ছে নেশার নরকের প্রবেশ পথ হচ্ছে এই তামাক বা ধূমপান। আসলে একজন ধূমপায়ী তার মাসে ব্যয় হচ্ছে ১০০০ টাকার ওপরে এবং যদি আমরা হিসাব করি তাহলে আমরা দেখব প্রতি বছর ধূমপায়ীরা সিগারেট বিড়ির আগুনে পুড়িয়ে ফেলছেন দেশের মূল্যবান ৮০ হাজার কোটি টাকা। এবং এটাকে বলা যায় আমাদের দেশজ উৎপাদনের-জিডিপির প্রায় চার শতাংশ।
আর এই তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয় প্রতি বছর চার লাখ মানুষ। এবং মারা যায় ১,৬০,০০০ মানুষ। এটা বর্তমান বাৎসরিক হিসাব।
আর আমরা যদি দেখি করোনাতে গত ১৫ মাসে মৃতের সংখ্যা ১২,৫০০। এবং ১২,৫০০ মৃত্যু নিয়ে আমরা যে পরিমাণ তোলপাড় করেছি, যে পরিমাণ আর্তনাদ করেছি, যে পরিমাণ আতঙ্কিত হয়েছি, আতঙ্কের সয়লাব বইয়ে দিয়েছি আমরা ১,৬০,০০০ মানুষের মৃত্যু নিয়ে কতটুকু আলোচনা করেছি? কতটুকু সচেতন হয়েছি? কতটুকু এ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে রক্ষা পাওয়ার জন্যে আমরা প্রচার প্রচারণা করেছি?