গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৭২তম (অধিবর্ষে ১৭৩তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৭৮৮ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কার্যকর করা হয়।
১৯৭০ : তৃতীয়বার ‘জুলে রিমে’ কাপ জয় করে ব্রাজিল এবং সেই কাপের স্থায়ী অধিকার লাভ করে।
১৯৭২ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাম্বিয়া।
২০০৪ : মহাশূন্যে প্রথম বেসরকারি মহাকাশযান স্পেসশিপ ওয়ান সফলভাবে উড্ডয়ন করে।
১৯০৫ : জঁ-পল সার্ত্র, ফরাসি অসিত্ত্ববাদী দার্শনিক, নাট্যকার, সাহিত্যিক এবং সমালোচক।
১৯৪৫ : নির্মলেন্দু গুণ, বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন।
১৯১৪ : অস্ট্রীয় ঔপন্যাসিক এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম নারী কবি বের্টা ফন জুটনার।
১৮৫২ : জার্মান ধর্মযাজক ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সূচনাকারী ফেড্রিক ফ্রোবেল।
১৯৯১ : বাংলাদেশি কবি, গীতিকার রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ।
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস।
বিশ্ব সংগীত দিবস ৷
উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড় দিন। এ দিন সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখায় খাড়াভাবে কিরণ দেয়। ফলে এ দিনে উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন ও ছোট রাত এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে ছোট দিন ও বড় রাত।
নির্মলেন্দু গুণ বাংলাদেশি কবি ও চিত্রশিল্পী। পুরো নাম নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। তবে নির্মলেন্দু গুণ নামেই তার ব্যাপক পরিচিতি। কবিতার পাশাপাশি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন। তার কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা, এ-বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। এ গ্রন্থের ‘হুলিয়া’ কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এছাড়াও তার স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ তিনি নানা সম্মাননা অর্জন করেন।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৫ সালের ২১ জুন নেত্রকোণার বারহাট্টার কাশবন গ্রামে। বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ এবং মায়ের নাম বিনাপনি। সুখেন্দু ও বিনাপনির তিন মেয়ে এবং দুই ছেলের মধ্যে নির্মলেন্দু ছোট। চার বছর বয়সে মায়ের মৃত্যুর পর বাবা চারুবালাকে বিয়ে করেন।
নির্মলেন্দুর ছেলেবেলা কাটে নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার কাশবনে। চারুবালার কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় তার। ১৯৬২ সালে দুই বিষয়ে লেটারসহ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন। বাবা তার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, ‘কৃষ্ণ কৃপাহি কেবলম’। মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কাণ্ডারী’৷ ১৯৬৪ সালের আইএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে তিনিই ছিলেন নেত্রকোনা কলেজের একমাত্র। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে সুযোগ পেয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিলেও হঠাত্ হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হলে তিনি গ্রামে ফিরে যান। ১৯৬৯ সালে প্রাইভেটে গ্রাজুয়েশন করেন তিনি। স্বাধীনতার আগে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাংবাদিকতায়ও জড়িত ছিলেন।
কবি নির্মলেন্দু গুণ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত কণ্ঠস্বর, আহমদ রফিক সম্পাদিত নাগরিক, পরিক্রম ও জোনাকী, ইংরেজি পত্রিকা পিপলস, গণকণ্ঠ, সংবাদ ও দৈনিক বাংলার বাণী, বাংলাবাজার ও দৈনিক আজকের আওয়াজ পত্রিকায় কাজ করেছেন।
স্বাধীনতার পূর্বের ও পরের কোনো বিপর্যয়, যতবার এ রাষ্ট্র বিপথগামী হয়েছে- কলম ধরেছেন তিনি, লিখেছেন একের পর এক শ্রেণীসংগ্রাম এবং স্বৈরাচার-বিরোধী কবিতা। নিহত হবার পর শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে যে-ক’জন কবি ও লেখক সোচ্চার হয়েছেন, তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য।
১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কবিতার পাশাপাশি ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন।
উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, আপন দলের মানুষ, ছড়ার বই সোনার কুঠার, আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ আমার ছেলেবেলা, আমার কণ্ঠস্বর ও আত্মকথা ১৯৭১, অনুবাদ করেছেন রক্ত আর ফুলগুলি। কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে, না প্রেমিক না বিপ্লবী, কবিতা, অমিমাংসিত রমণী, দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী, চৈত্রের ভালোবাসা, ও বন্ধু আমার, বাংলার মাটি বাংলার জল, চাষাভুষার কাব্য, প্রথম দিনের সূর্য, দুঃখ করো না, বাঁচো, আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি এবং মুঠোফোনের কাব্য ইত্যাদি।
কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ কবি লাভ করেছেন অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবি আহসান হাবীব সাহিত্য পুরস্কার প্রভৃতি। তিনি নিজ গ্রাম কাশতলায় ‘কাশবন বিদ্যা নিকেতন’ নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যক্তি জীবনে কবি নির্মলেন্দু গুণ এক কন্যা সন্তানের জনক। তার মেয়ের নাম মৃত্তিকা গুণ। নিজের লেখা কবিতা এবং গদ্য সম্পর্কে নির্মলেন্দু গুণের নিজের বক্তব্য হলো :
অনেক সময় কবিতা লেখার চেয়ে আমি গদ্য রচনায় বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি। বিশেষ করে আমার আত্মজৈবনিক রচনা বা ভ্রমণকথা লেখার সময় আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে আমি যে গদ্যটি রচনা করতে চলেছি, তা আমার কাব্য-রচনার চেয়ে কোনো অর্থেই ঊনকর্ম নয়। কাব্যকে যদি আমি আমার কন্যা বলে ভাবি, তবে গদ্যকে পুত্রবৎ। ওরা দুজন তো আমারই সন্তান। কাব্যলক্ষ্মী কন্যা যদি, গদ্যপ্রবর পুত্রবৎ।
নিজের সঙ্গে মানুষের নিত্য বিরোধ, তাই স্ববিরোধী কবিতায় কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়ে ছিলাম, এখন মৃত্যুর জন্যে বড় হচ্ছি।
সূত্র: সংগৃহীত