গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২১৪তম (অধিবর্ষে ২১৫তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯৭২ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বলিভিয়া।
২০১৮ : সাঁওতালি উইকিপিডিয়ার যাত্রা শুরু।
১৮৪১ : বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, ব্রাহ্মসমাজের আচার্য ও সমাজ সংস্কারক।
১৮৬১ : আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, বাঙালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দার্শনিক ও কবি।
১৮৭৬ : পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া, স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং ভারতের জাতীয় পতাকার নকশাকার।
১৮৪৪ : এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম ভারতীয় সচিব, অভিধান প্রণেতা রামকমল সেন।
১৯২২ : স্কটিশ বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, টেলিফোন আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল।
১৯২৩ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯তম রাষ্ট্রপতি ওয়ারেন জি. হার্ডিং।
১৯৮০ : প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজ।
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ছিলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক ও প্রকৌশলী। টেলিফোন আবিষ্কারের জন্যে সারাবিশ্বে তিনি ব্যাপক পরিচিত। তাকে বোবাদের পিতা তথা ‘দ্য ফাদার অফ দ্য ডিফ’ নামে ডাকা হতো। তার বাবা, দাদা এবং ভাই সবাই একক অভিনয় ও বক্তৃতার কাজে জড়িত ছিলেন এবং তার মা ও স্ত্রী উভয়েই ছিলেন বোবা। এ কারণেই বোবাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তিনি অনেক গবেষণা করেছেন। আবিষ্কার করেন বোবাদের শ্রবণে সহায়ক একটি যন্ত্র। ১৮৭৬ সালে তাকে টেলিফোনের প্রথম মার্কিন পেটেন্টের সম্মানে ভূষিত করা হয়।
জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৭ সালের ২ আগস্ট স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে। বাবার কাছ থেকে ছোটবেলায় শিক্ষায় হাতেখড়ি। পড়াশোনা করেন এডিনবার্গের রয়েল হাই স্কুলে। পরে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়েন। স্কুলে তার ফলাফল খুব একটা ভালো ছিল না এবং প্রায়ই স্কুল কামাই দেওয়ার প্রবনতা দেখা যেত। স্কুলের পাঠ্যবিষয়ে তার আগ্রহ কম ছিল; বরং বিজ্ঞান এবং বিশেষ করে জীববিজ্ঞানে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। লন্ডনে দাদার সাথে বসবাস করার সময় পড়াশুনার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা জন্মায় এবং প্রায়ই তার দাদার সাথে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা এবং পড়াশুনা করে তার ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই শিক্ষানবীশ শিক্ষক হিসেবে স্কটল্যান্ডের ওয়েস্টন হাউস একাডেমিতে যোগদান করেন। যদিও তখন তিনি ল্যাটিন এবং গ্রিক ভাষার ছাত্র ছিলেন, তিনি তার পরিচালিত প্রত্যেকটি ক্লাসের জন্যে ১০ পাউন্ড করে পেতেন। ১৮৬৮ সালে সপরিবারে কানাডা চলে যাওয়ার আগে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন।
আলেকজান্ডারের মা মাত্র ১২ বছর বয়সে শ্রবণশক্তি হারাতে শুরু করেন। মায়ের ক্রমবর্ধমান বধিরতা তাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। মায়ের সাথে কথোপোকথনের জন্যে তিনি সাংকেতিক ভাষা রপ্ত করেন; যাতে করে তিনি নীরব থেকেই মায়ের সাথে কথা বলতে পারেন। পরে মায়ের বধিরতা নিয়ে কাজ করতে গিয়েই তিনি শব্দবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। আবিষ্কার করেন বোবাদের শ্রবণ সহায়ক একটি যন্ত্র।
প্রাকৃতিক বিষয় সম্পর্কে তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন কৌতূহলী। উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে পেরেকের ব্রাশ ও ঘূর্ণায়মান পেডালের সমন্বয়ে গম পেষার যন্ত্র তৈরি করেন। ১৮৭৬ সালে আবিষ্কার করেন টেলিফোন। ওই বছরই তাকে টেলিফোনের প্রথম মার্কিন পেটেন্ট দেয়া হয়। গ্রাহাম বেল আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন; যার মধ্যে রয়েছে- উড়ো নৌকা এবং বিমানচালনবিদ্যা। তিনি ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
জীবনের প্রথম দিক থেকেই আলেকজান্ডার সঙ্গীত এবং কলার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিলেন; মায়ের অণুপ্রেরনায় তা আরো উদ্ভাসিত হয়েছিল। প্রথাগত কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই অল্প বয়সে তিনি একজন পিয়ানো বাদক হয়ে ওঠেন। শৈশবে তিনি মূকাভিনয় এবং বিভিন্ন প্রকারের শব্দ উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবারে আগত অতিথিদের মনোরঞ্জন করতেন।
দূরে থাকা মানুষে-মানুষে যোগাযোগের জন্যে টেলিফোন যন্ত্র আবিষ্কারক মহান আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৯২২ সালের ২ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। নিজে টেলিফোন আবিষ্কার করলেও তিনি টেলিফোনকেই এক উটকো ঝামেলা মনে করতেন। এজন্যে নিজের গবেষণা ও অধ্যয়ন কক্ষে কোনো টেলিফোন রাখতেন না। হয়তো কাজের একাগ্রতা ও মনোযোগে বিঘ্ন না ঘটার কারণেই এটি করতেন তিনি। বেল মারা যাওয়ার পর আমেরিকার সকল টেলিফোনে এক মিনিটের জন্যে অবিরাম রিং বাজানো হয়। মার্কিন প্রশাসনের ভাষ্য মতে, যে মহান ব্যক্তি মানুষে-মানুষে যোগাযোগের এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাকে সম্মান দেখানোর জন্যেই এমন আয়োজন করা হয়।
সূত্র : সংগৃহীত