বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ও গীতিকার তারেক মাসুদ এর মৃত্যুদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২২৫তম (অধিবর্ষে ২২৬তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৮৮৯ : উইলিয়াম গ্রে ‘কয়েন পে টেলিফোন’ প্যাটেন্ট করেন।
১৯৬১ : পূর্ব জার্মানি মধ্যরাতে বার্লিন প্রাচীর নির্মাণ শুরু করে।
২০১১ : সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচ জনের মৃত্যু।
১৮১৯ : জর্জ গ্যাব্রিয়েল স্টোকস, ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী এবং গণিতজ্ঞ।
১৮৪৮ : রমেশচন্দ্র দত্ত, বাঙালি সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক ও সিভিলিয়ান।
১৮৬৭ : উইলিয়াম আলেকজান্ডার ক্রেইগি, শব্দকোষপ্রণেতা।
১৮৮৮ : জন লগি বেয়ার্ড, স্কটিশ প্রকৌশলী, প্রথম ব্যক্তি যিনি গতিশীল বস্তুর ছবিগুলিকে টেলিভিশন করেন।
১৯১১ : ড. ফুলরেণু গুহ, বাঙালি সমাজসেবিকা ও রাজনীতিবিদ।
১৯১২ : সালভাদর লুরিয়া, নোবেলজয়ী ইতালীয় মার্কিন জীববিজ্ঞানী।
১৯২৬ : ফিদেল ক্যাস্ট্রো, কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট।
১৯৬৩ : শ্রীদেবী, ভারতীয় অভিনেত্রী।
১৯৭৫ : শোয়েব আখতার, সাবেক পাকিস্তানি ডান হাতি ফাস্ট বোলার।
১৮৬৫ : হাঙ্গেরীয় চিকিৎসক ও হাত ধোয়া ব্যবস্থার প্রবর্তক ইগনাৎস জেমেলভাইস।
১৯১০ : আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত, লেখক ও পরিসংখ্যানবিদ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।
১৯৩২ : বাঙালি পণ্ডিত, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য।
১৯৩৬ : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারতের বিপ্লববাদের জননী হিসেবে পরিচিত মাদাম কামা।
১৯৬৩ : ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী শিশির কুমার মিত্র।
১৯৭৭ : নাট্যসম্রাজ্ঞী মলিনা দেবী।
২০১১ : বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ও গীতিকার তারেক মাসুদ।
২০১১ : সম্প্রচার সাংবাদিকতার রূপকার, চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিকতা ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীর।
২০১৮ : ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।
পুরো নাম আবু তারেক মাসুদ। তারেক মাসুদ নামেই পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার। ‘মাটির ময়না’ তার প্রথম ফিচার চলচ্চিত্র; যার জন্যে তিনি ২০০২-এর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন এবং এটি প্রথম বাংলাদেশি বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে একাডেমি পুরস্কারের জন্যে বাংলাদেশি নিবেদন করা হয়েছিল।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে। বাবা মশিউর রহমান মাসুদ। মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। ক্যাথরিন এবং তারেক মিলে ঢাকায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন; যার নাম অডিওভিশন।
তারেক মাসুদের পড়াশোনার শুরু ভাঙ্গা ঈদগা মাদ্রাসায়। পরে ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের পর তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এরপর আইএ পাস করেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে পড়াশুনা করেন।
তারেক মাসুদ ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে তার প্রথম প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। এরপর একে একে আদম সুরত, সে, ইউনিসন, মুক্তির গান, ভয়েসেস অফ চিলড্রেন, ইন দ্য নেইম অফ সেফ্টি, মুক্তির কথা, নারীর কথা, আ কাইন্ড অফ চাইল্ডহুড, মাটির ময়না, অন্তর্যাত্রা, রানওয়ে প্রভৃতি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্র নিয়ে অসাধারণ সব কাজ করতে শুরু করেছিলেন তিনি। লিয়ার লেভিনের ‘র’ ফুটেজ নিয়ে ‘মুক্তির গান’ যে ধরনের চলচ্চিত্র সেই পরিসরের সিনেমা আগামী ৪০ বছরেও হবে না। ‘মুক্তির গান’ সিনেমায় যে পরিশ্রম আর বিপুল নিষ্ঠায় যা করেছেন, তার মূল্য এই দেশের সেই সময়ের সরকার দিয়েছে সেন্সরে ঝুলিয়ে রেখে।
দেশি বিদেশি নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে তারেক মাসুদ নির্মিত চলচ্চিত্র। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্ম সাউথ এশিয়া, কান চলচ্চিত্র উৎসব, মারাকেচ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, থ্রি কন্টিনেন্টস উৎসব, বাচসাস পুরস্কার, চ্যানেল আই চলচ্চিত্র পুরস্কার, ভারতীয় আন্তর্জাতিক ভিডিও উৎসব, কারা চলচ্চিত্র উৎসব, কেরালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ডিরেক্টরস গিল্ড অব গ্রেট ব্রিটেন, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব বাংলাদেশ, সিনেফান ফেস্টিভ্যাল অব এশিয়ান অ্যান্ড আরব সিনেমা, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ার পাশাপাশি কয়েকটি সাময়িকী ও পত্রিকায় চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি করতেন। তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর ২০১২ সালে বিভিন্ন সময়ে লেখা তার চলচ্চিত্র সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলোকে একত্র করে একটি বই প্রকাশিত হয় ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ নামে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ‘কাগজের ফুল’ নামক চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন দেখার জন্যে তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে মানিকগঞ্জের সালজানা গ্রামে গিয়েছিলেন। লোকেশন নির্বাচন শেষে দুপুরের দিকে ঢাকার উদ্দেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন। পথে ঘিওরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে তাদের মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ এবং তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত