আপনি হয়তো বলবেন- ঘুম তাড়াবার জন্যে কফি না খেয়ে কোনো উপায় নেই।
কফি ঘুম তাড়ায়- এ কথা ঠিক। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই তাড়াতে গিয়ে কফি আপনার শরীরে কী কার্যকারণ সৃষ্টি করছে?
প্রথমত, আমাদের মধ্যে ঘুম ঘুম অবস্থা তৈরি হয় শরীরের একটা বিশেষ জৈব রসায়নের কারণে, যার নাম এডিনোসাইন। এডিনোসাইনকে বলা যেতে পারে এক ধরনের মাতৃর্মূতি। মা যেমন টের পায়- সন্তান কখন ক্লান্ত বা কখন প্রাণবন্ত এবং সে অনুযায়ী তাকে ঘুমুতে পাঠায়, এডিনোসাইনও তাই।
আপনার দেহ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ব্রেনে তখন তৈরি হয় এডিনোসাইন রিসেপ্টর। এর প্রভাবে আপনার ঘুম ঘুম পায়, আপনি ঘুমিয়ে পড়েন।
কিন্তু কফি খেলে এই এডিনোসাইনের উৎপাদনই ব্যহত হয়। অর্থাৎ আপনার দেহ ক্লান্ত হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ব্রেনের এডিনোসাইন রিসেপ্টরগুলো বাধাগ্রস্ত হবার কারণে আপনি তা টের পাচ্ছেন না।
কিছুক্ষণ এ অবস্থা চলতে থাকলে কী হবে? ব্রেন আরো বেশি বেশি এডিনোসাইন রিসেপ্টর তৈরি করতে থাকবে। এবং জেগে থাকার জন্যে আপনাকে আরো বেশি বেশি পরিমাণে কফি খেতে হবে।
আর যখন কফি খাওয়া ছেড়ে দেবেন? তখন কী হবে?
দেখা যাবে যে, আগের চেয়েও আরো বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন আপনি, কাজ করার জন্যে কোনো প্রাণবন্ততাই আর আপনার নেই। তখন আবার বাধ্য হবেন কফি খাওয়ায় ফিরে যেতে।
এ কারণেই দেখবেন কফি ছাড়তে চেয়েও অনেকে পারে না, কারণ কফি ছাড়া সে আগের চেয়েও বেশি ক্লান্তি অনুভব করে। এবং কফি ছাড়া আর অন্য কোনোভাবেই যে ক্লান্তি সারে না।
আবার কফির ক্যাফেইন যেহেতু মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে, কফি খেয়ে আপনি হয়তো দুপুরের ঝিমুনিকে এড়ালেন, কিন্তু বেশি খেলে রাত্রিবেলা যখন সত্যিই আপনার ঘুমের প্রয়োজন হবে, তখন আর ঘুম নাও আসতে পারে।
দেখা যাবে যে, ক্যাফেইনের প্রভাব কাটিয়ে ঘুমুতে ঘুমুতে ভোররাত। ফলে না হলো আপনার পর্যাপ্ত বিশ্রাম, আবার দিনের কাজ করার জন্যে আপনাকে আশ্রয় নিতে হলো আরো কফির। এ যেন এক দুষ্ট চক্র।
একথা তাই বলাই যায় যে, অনিদ্রা রোগের সাথে কফির একটা যোগসাজশ আছে।
একটা গবেষণায় বিজ্ঞানীরা কিছু স্বেচ্ছাসেবীকে চার কাপ কফির সমপরিমাণ ক্যাফেইন পিল খাওয়ান। এবং অন্যদল স্বেচ্ছাসেবীকে শুধু প্লাসিবো ইফেক্ট দেয়া হলো। দেখা গেল-ঘুমুবার অন্তত ছ’ঘণ্টা আগে পিল খাওয়ার পরও তাদের ননরেম ঘুম (হালকা ঘুম) কম হয়েছে। তার মানে তাদের ঘুমের গুণ এবং মান কমে গেছে। ফলে প্রভাব পড়েছে তাদের দিনের কাজেও।