1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন

ইতিহাসে নভেম্বর ২১ স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন মৃত্যুবরণ করেন।

  • সময় সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১
  • ৭৮২ বার দেখা হয়েছে

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩২৫তম (অধিবর্ষে ৩২৬তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি

১৮৭৭ : টমাস এডিসন ফোনোগ্রাফ আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন।
১৯০৮ : বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
১৯৪৭ : স্বাধীন ভারতে আজকের দিনে জাতীয় পতাকা সংবলিত ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়।
১৯৭১ : বাংলাদেশ-ভারত মিত্র বাহিনী গঠিত হয়।

জন্ম

১৬৯৪ : ভলতেয়ার, ফরাসি লেখক ও দার্শনিক।
১৯২১ : ড. হীরালাল চৌধুরী, প্রণোদিত প্রজননের জনক, প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি মৎসবিজ্ঞানী।
১৯৬৬ : কবির বকুল, বাংলাদেশি গীতিকার।

মৃত্যু

১৯৭০ : নোবেলজয়ী ভারতীয় পদার্থবিদ স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন
১৯৭৪ : শিশু সাহিত্যিক পুণ্যলতা চক্রবর্তী
১৯৯৬ : নোবেলজয়ী পাকিস্তানি তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী আবদুস সালাম

দিবস

বিশ্ব টেলিভিশন দিবস।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস, বাংলাদেশ।

স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন

স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন ছিলেন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী; যিনি রামন ক্রিয়া আবিষ্কারের জন্যে বিখ্যাত হয়ে আছেন। সি ভি রামনের নামেও তিনি পরিচিত। তার আবিষ্কৃত ‘রামন ইফেক্ট (Raman Effect)’ বা ‘রামন-প্রভাব’ পদার্থবিজ্ঞানের জগতে এক আশ্চর্য মাইলফলক। ১৯৩০ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৮ সালের ৭ নভেম্বর ভারতের তিরুচিরাপ্পাল্লিতে। অল্প বয়সে, রামন বিসাখাপত্তনম শহরে চলে যান এবং সেন্ট আলয়সিয়াস অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১১ বছর বয়সে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৩ বছর বয়সে বৃত্তির মাধ্যমে এফ.এ পরীক্ষার পাশ করেন। (আজকের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার সমতুল্য, পিইউসিপিডিসি এবং +২)।

১৯০২ সালে রামন মাদ্রাজে (বর্তমানে চেন্নাই) প্রেসিডেন্সি কলেজ, চেন্নাই যোগ দেন যেখানে তার বাবা গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে একজন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯০৪ সালে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর অব আর্টস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং পদার্থবিদ্যায় স্বর্ণপদক পান। ১৯০৭ সালে সর্বোচ্চ ডিস্টিংসান নিয়ে তিনি মাস্টার অফ সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হওয়ার পর ১৯১৭ সালে রমন সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। একই সময়ে, তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স (আইএসিএস)-এ গবেষণা চালিয়ে যান, যেখানে তিনি অবৈতনিক সচিব ছিলেন। রামন তার কর্মজীবনের এই সময়টিকে সুবর্ণ যুগ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। অনেক শিক্ষার্থী আইএসিএস এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কাছে সমবেত হন। ১৯২৬ সালে অধ্যাপক রামন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানের সাময়িক পত্রিকা প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তিনি প্রথম সম্পাদক ছিলেন। সাময়িক পত্রিকার দ্বিতীয় খণ্ডে রামন প্রভাব আবিষ্কারের প্রতিবেদন সমেত তার বিখ্যাত নিবন্ধ ‘একটি নতুন বিকিরণ’ প্রকাশিত হয়।

শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, সমগ্র এশিয়ার মধ্যে তিনিই হলেন বিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী। তার নোবেল-বিজয়ী গবেষণার সবটুকুই সম্পন্ন হয়েছিল কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশান ফর দি কাল্টিভেশান অব সায়েন্স’ (আই-এ-সি-এস) এর গবেষণাগারে। ওই গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি সংযোজন, সংরক্ষণ ও পরীক্ষণের কাজে রামনকে যিনি সারাক্ষণ সহায়তা করেছিলেন তার নাম আশুতোষ দে। আশুবাবু নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই আশুতোষবাবু জীবনে কোনোদিন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনার সুযোগ পাননি।

গবেষণার ক্ষেত্রে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছিল না সি ভি রামনেরও। তার কোনো গবেষণা-শিক্ষকও ছিলেন না। গবেষণার ক্ষেত্রে নিজেকেই নিজের পথ খুঁজে নিতে হয়েছিল রামনকে। আর তার এই পথ খোঁজা শুরু হয়েছিল একেবারে ছোটবেলা থেকেই। বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার অর্জনকারীদের মধ্যে হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন বিজ্ঞানী ছিলেন যাদের কোনো নিয়মিত পিএইচডি ডিগ্রি ছিল না। রামন ছিলেন তাদেরই একজন। তবে নোবেল পুরষ্কার পাবার আগেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রামনকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি দিয়েছিল।

ব্রিটিশ-ভারতের বিজ্ঞানচর্চাকে অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে উন্নীত করতে স্যার রামনের ভূমিকা অপরিসীম। তার হাতেই সাফল্যের মুখ দেখেছে ব্রিটিশ-ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণার লক্ষ্যে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান আই-এ-সি-এস। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার যে উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেছিলেন সে উদ্দেশ্য সফল করেছেন স্যার রামন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই ব্রিটিশ-ভারতের প্রথম গবেষণা-জার্নাল প্রকাশ করতে শুরু করেন তিনি।

১৯৩২ সাল পর্যন্ত আই-এ-সি-এস ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়ে ১৯৩৩ সালে রামন যোগ দেন ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্সের ডিরেক্টর পদে। সেই থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যাঙ্গালোরেই কাটিয়েছেন। চাকরি থেকে অবসরের পর নিজের সঞ্চিত অর্থ ও জনগণের চাঁদায় তিনি স্থাপন করেছেন রামন রিসার্চ ইন্সটিটিউট। স্যার রামন বিশ্বাস করতেন নিয়মিত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেতে থাকলে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করতে পারে না। তাই তিনি কখনোই কোনো সরকারি অনুদান গ্রহণ করেননি। স্বাধীনতার পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু অনেক কষ্টে তাকে রাজি করিয়েছিলেন জাতীয় অধ্যাপক পদ গ্রহণ করার জন্যে। ভারতের উপরাষ্ট্রপতির পদও উপেক্ষা করেছিলেন স্যার রামন। তাকে দেশের সবচেয়ে সম্মানজনক উপাধি ‘ভারতরত্ন’ প্রদান করে ভারত সরকার।

বিজ্ঞানের গবেষণা করার জন্যে, বিরাট অঙ্কের বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধাসহ সরকারি চাকরি ছেড়ে অর্ধেকেরও কম বেতনের বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষক হয়েছেন। বিজ্ঞানের জটিল ব্যাপারগুলোকে এমন সরল করে বোঝাতে পারতেন যে ছাত্ররা বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত হয়ে পড়তো। দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক ছাত্র এসে জড়ো হয়েছেন রামনের গবেষণাগারে তার সাথে কাজ করার সুযোগ লাভের জন্যে।

ভারতীয় উপমহাদেশে বিজ্ঞানসংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রামনের অবদান অপরিসীম। তিনি বিশ্বাস করতেন বিজ্ঞানের গবেষণার জন্যে লক্ষ লক্ষ টাকার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি না হলেও চলে। শুধু দরকার হয় অনুসন্ধিৎসু মন। তিনি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন করতেন, ‘সাবানের ফেনায় ভেসে বেড়ানো রঙ দেখেছো? আকাশ কেন নীল জানো? হীরা কেন এতো উজ্জ্বল? ফুলের পাপড়ির যে রঙ সেই রঙের রহস্য কী?’ আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতেই রয়েছে কত রহস্য। সঠিক প্রশ্ন করতে জানলে প্রকৃতি তার রহস্যের দরজা খুলে দেয়।
কলকাতায় অ্যাসোসিয়েশনে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে রামন নোবেল পুরষ্কার নিয়ে এসেছিলেন সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল তার স্থাপিত ওয়ার্কশপে স্থানীয় কারিগরদের দ্বারা তৈরি। ব্যাঙ্গালোরে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্সের ডিরেক্টর পদে থাকাকালীন গবেষক ছাত্রদের দিয়ে যন্ত্রপাতি বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

রামন নিজে শুধু গবেষক ছিলেন না, ছিলেন গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরির পরশ পাথর। স্যার কৃষ্ণান, হোমি ভাবা, বিক্রম সারাভাই প্রমুখ ছিলেন রামনের সরাসরি ছাত্র ও গবেষণা-সহযোগী। কলকাতার মহেন্দ্রলাল সরকারের হাতে গড়া সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশান রামনের হাতে পুনর্জন্ম লাভ করে। রামন ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই অ্যাকাডেমি এখন পূর্ণোদ্যমে কাজ চালাচ্ছে। রামনের নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান রামন রিসার্চ ইন্সটিটিউট এখন একটি স্বায়ত্বশাসিত গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে রামনের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে সগৌরবে।

১৯৭০ সালের ২১ নভেম্বর তিনি ভারতের বেঙ্গালুরুতে মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র : সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com