ঘটনাবলি
১৮৭৬ : অবিভক্ত বাংলার প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রামগাড়ি কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে চালু হয়।
১৮৯১ : ব্রাজিলে ফেডারেল পদ্ধতির সংবিধান চালু হয়।
১৯১৮ : এস্তোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা।
১৯৩৮ : যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নাইলনের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়।
১৯৪৯ : মিশর এবং দখলদার ইসরাইল রোডস দ্বীপে যুদ্ধ-বিরতি ও চুক্তি স্বাক্ষর করে।
১৯৭২ : বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ফিলিপাইন।
জন্ম
১৮৬৭ : স্যার কেদারনাথ দাস, কলকাতার খ্যাতনামা স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসাশাস্ত্রের শিক্ষক ।
১৯৩৯ : জামাল নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ।
১৯৫৫ : স্টিভ জবস, অ্যাপল কম্পিউটার-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
মৃত্যু
১৮৫৬ : নিকোলাই লেবাচেভস্কি, রুশ গণিতবিদ।
২০০১ : ক্লদ শ্যানন, মার্কিন গণিতবিদ, তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশলী বিজ্ঞানী।
২০১৬ : আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, বাংলাদেশি প্রত্নতাত্ত্বিক, গবেষক।
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ছিলেন একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ, পুঁথিসাহিত্য-বিশারদ ও অনুবাদক। তিনি ছিলেন বহুভাষাবিদ। প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, নৃ-তত্ত্ব, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ইত্যাদি জ্ঞানবিদ্যার নানা ক্ষেত্রে ছিল তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে অবসর নেন ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিকান্দি গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ। ব্রিটিশ আমলের শেষ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন।
তিনি পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে। ১৯৪৬ সালে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে বর্ণিল কর্মজীবনের শুভ সূচনা করেন তিনি।
প্রত্নতত্ত্বে বিশেষ আগ্রহ থাকায় তাকে রংপুর থেকে আগত ছাত্রদের সঙ্গে আজিজুল হক কলেজের পক্ষ থেকে মহাস্থানগড়ে পাঠান প্রিন্সিপাল ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সেখানে গিয়ে প্রত্নসম্পদের রত্নভাণ্ডার দেখে অভিভূত হন তিনি। ভাবতে থাকেন, আমাদের এতো প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আছে! যেদিকে চোখ পড়ে, শুধু ধ্বংসাবশেষ আর ধ্বংসাবশেষ। সেখানে গিয়েই প্রত্নতত্ত্ব ও প্রত্নসম্পদের প্রতি আগ্রহ আরো অনেক বেড়ে যায় তাঁর।
১৯৪৭ সালে তিনি যোগদান করেন সিভিল সার্ভিসে। ১৯৫৮ সালে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্কে পড়াশোনা করতে তাকে পাঠানো হয় সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স শেষে দেড় মাস ছুটি নেন শুধুমাত্র গ্রিস, রোম ও মিসরের পিরামিডসহ ইউরোপ ও আমেরিকার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো দেখার জন্যে। পরে ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমন্দিরও দেখে আসেন তিনি। ১৯৬৮ সালে তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে সরকারকে রাজি করান, দিনাজপুরের একটি সাইটে খনন কাজ শুরু করতে। যেখান থেকেই আবিষ্কার করা হয় পঞ্চম শতাব্দীর সীতাকোট বিহার।
১৯৭৬ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর শুরু করেন পৃথিবীর বুকে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখার কাজ, তার লেখালেখি। গুপিচন্দ্রের সন্যাস, গাজীকালু ও চম্পাবতী, বাংলাদেশের নৃ-তত্ত্ব ও কুমিল্লা জেলার ইতিহাসসহ বেশ কিছু পুঁথি সম্পাদনার কাজ করেছেন তিনি। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও নবাবি আমলের ইতিহাস নিয়েও গবেষণা করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ আ ক ম যাকারিয়া। ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন তিনি। বাংলাদেশের অল্প সংখ্যক পারস্য ভাষায় দক্ষদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি তবকাত-ই-নাসিরীসহ বেশ কিছু পারস্য ভাষার বই বাংলায় অনুবাদ করেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা নিয়েও তিনি বাসায় বসে একাধিক বই লেখার কাজ করেছেন। একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের জন্যে তিনি যে কাজ করেছেন, এটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো তরুণ শিক্ষক বা নবীন গবেষক প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে চাইলে প্রথমেই যার শরণাপন্ন হতেন, তার নাম আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে গবেষণায় বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ২০১৫ সালে গবেষণায় লাভ করেন একুশে পদক।
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত