বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সালাহউদ্দিন মমতাজ এর মৃত্যুদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২১২তম (অধিবর্ষে ২১৩তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৪৯৮ : প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ক্রিস্টোফার কলম্বাস পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদ আবিষ্কার করেন।
১৯৫৪ : ইতালীয় পর্বতারোহী দল প্রথম হিমালয়ের কে-২ শৃঙ্গে আরোহণ করেন।
১৯৭২ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইয়েমেন।
১৯৭৩ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় দক্ষিণ ভিয়েতনাম।
১৯৭৮ : চট্টগ্রামে এলপি গ্যাস কারখানা উদ্বোধন।
১৯৯১ : সোভিয়েত-মার্কিন দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্রহ্রাস চুক্তি ‘স্টার্ট’ স্বাক্ষরিত হলে দুদেশের মধ্যে বিরাজমান পাঁচ দশক ব্যাপী বিরোধের অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ ঘটে।
১৮০০ : ফ্রেডরিখ ভোলার, জার্মান রসায়নবিদ।
১৮৮০ : মুন্সি প্রেমচাঁদ, আধুনিক হিন্দি এবং উর্দু ভাষার লেখক।
১৯১২ : মিল্টন ফ্রিড্ম্যান, নোবেল বিজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ।
১৯৭১ : সালাহউদ্দিন মমতাজ, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৮০ : মোহাম্মদ রফি, ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী।
১৯৮০ : শৈলেন্দ্রনাথ গুহরায়, ভারতে মুদ্রণ শিল্পের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও শ্রীসরস্বতী প্রেসের প্রতিষ্ঠাতা।
২০১৪ : নবারুণ ভট্টাচার্য, ভারতীয় লেখক।
শহীদ সালাহউদ্দিন মমতাজ ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের ময়দানে তাকে সহযোদ্ধারা ডাকতো ‘রিয়েল টাইগার’ নামে। বিখ্যাত কামালপুর যুদ্ধের মহানায়ক তিনি। যে কামালপুর যুদ্ধের রণকৌশল ও তার বীরত্বগাঁথা আজও পাঠদান করা হয় বিশ্বখ্যাত সব সামরিক কলেজে। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্যে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব প্রদান করে।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই ফেনী জেলার সদর উপজেলায় উত্তর চাড়িপুর গ্রামের মুক্তারবাড়িতে। বাবা শামসুদ্দিন আহমেদ এবং মায়ের নাম খায়রুন নাহার। তার পিতামহ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন আকিয়াবের শেষ মুসলিম জমিদার। মাতামহ মৌলভী আবদুর রাজ্জাক ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য (এমএলএ)।
দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে তিনি কিছুকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোর দয়াল সিং কলেজে পড়াশোনা করেন। শেষে ফেনী কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ওই কলেজে বিএসসি অধ্যয়নকালে পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে যোগ দেন।
সালাহউদ্দিন মমতাজ ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্লাইট ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। পরে তিনি পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে যোগ দেন।
১৯৭১ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে পোস্টেড ছিলেন। ৩ জুলাই ১৯৭১ শিয়ালকোট মারালা সীমান্তের খরোস্রোতা মুনাওয়ার তাবী নদী অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। সঙ্গী ছিলেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, শাহরিয়ার ও আনাম। তাদের এই আগমন বিশ্বপ্রচার মাধ্যমে ঝড় তোলে। চারজনই কলকাতা গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সালাউদ্দিনকে ১১নং সেক্টরে যুদ্ধ করতে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে পাঠানো হয়।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তেলঢালা ক্যাম্পে এই রেজিমেন্টের অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং চলছিল। এখানে পরে জেড ফোর্স গঠিত হলে তাকে এই ফোর্সে নিযুক্ত করা হয়।
ট্রেনিং শেষ হলে জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জিয়া প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মাধ্যমে কামালপুর বিওপি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। সালাহউদ্দিনকে ‘চার্লি’ কোম্পানির কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।
২৮ জুলাই কামালপুর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সালাহউদ্দিন মমতাজ ও লেফটেন্যান্ট মান্নানকে কামালপুরে পাকিস্তানি অবস্থান রেকি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
৩০-৩১ জুলাই প্রথম ইস্ট বেঙ্গল (সিনিয়র টাইগার) রাতের আঁধারে রওনা হলো। প্রথমে সালাহউদ্দিনের ডেল্টা কোম্পানী, ফলোআপ কোম্পানী হলো ক্যাপ্টেন হাফিজের ব্রেভো, যার পিছনে হলো ব্যাটালিয়ন ‘আর’ গ্রুপ এবং এই ‘আর’ গ্রুপে ছিলেন মেজর মঈন এবং সাথে ছিলেন জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা তাদের প্রথম সারির প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে পেছনে সরে যায়। মুক্তিবাহিনীর সাহসী সৈনিকরা শত্রুর বাংকার অতিক্রম করে কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকে পড়ে এবং হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু হয়। সুবেদার হাইয়ের নেতৃত্বে যে প্লাটুনটি যুদ্ধ করছিল তারা মাইন ফিল্ডের সামনে পড়ে যায়। এই প্লাটুনের ডানে ছিলেন ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন ও তার সহযোগীরা। পাকিস্তানি সেনারা তখন পাল্টা আক্রমণের জন্যে তৈরি হচ্ছে। সালাহউদ্দিন সুবেদার হাইকে ডানে যেতে নির্দেশ দিলেন। নায়েক হাইয়ের হাত বোমার আঘাতে উড়ে যায়। সালাহউদ্দিন তখন পলায়নপর পাকিস্তানি সেনাদের পেছনে ধাবমান। এই সময় শত্রুবোমা সালাহউদ্দিনের ঠিক সামনে এসে পড়ে এবং সালাহউদ্দিন শহীদ হন।
৩১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন বীর উত্তম সাহসী এই যোদ্ধা। ‘বীর উত্তম’ উপাধি ছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঘাটাইলস্থ সেনানিবাসটির নামকরণ করা হয় ‘শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাস (ঘাটাইল)’।
সূত্র: সংগৃহীত